Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তেরশ্রী গণহত্যা দিবস: রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আশায় ৪৩ শহীদ পরিবার


২২ নভেম্বর ২০২০ ১০:৩৪

মানিকগঞ্জ: আজ ২২ নভেম্বর, মানিকগঞ্জের ঘিওরের তেরশ্রী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাক হানাদার বাহিনী তেরশ্রী এস্টেটের তৎকালীন জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরী, তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩ জন স্বাধীনতাকামী মানুষকে আগুনে পড়িয়ে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। জ্বালিয়ে দেয় পুরো গ্রাম। অথচ স্বাধীনতার ৪৯ বছর হতে চললেও শহীদ পরিবারগুলো এখনও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো স্বীকৃতি না পাওয়ার কষ্ট বুকে ধারণ করে চলেছে। শহীদ পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং এলাকায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পাঠাগার ও জাদুঘর নির্মাণের দাবি করে আসছেন এলাকাবাসী।

বিজ্ঞাপন

রণাঙ্গনের প্রত্যক্ষদর্শীরা মিজানুর রহমান মাস্টার জানান, ২২ নভেম্বর কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতের কাকডাকা ভোরে এ দেশীয় রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনীর সহায়তায় পাক হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত গ্রামবাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। গোলা বারুদের বিকট শব্দে এলাকার মানুষের ঘুম ভেঙে যায়। শুরু হয় চারদিকে মানুষের কান্না চিৎকার। জীবন বাঁচানোর জন্য সবাই ছুটোছুটি করতে থাকেন। একের পর এক স্বাধীনতাকামী ৪৩ জন মানুষকে হত্যা করে দোসররাা। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় গ্রামের পর গ্রাম। প্রথমে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানকে।

বিজ্ঞাপন

এরপর তেরশ্রী এস্টেটের জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে শরীরে কেরোসিন ঢেলে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে নরপশুরা। এভাবে পর্যায়ক্রমে এলাকার ৪৩ জন স্বাধীনতাকামী মানুষকে ওই দোসররা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে এক সঙ্গে একটি গ্রামে এতো জন নিরিহ মানুষকে হত্যার ঘটনা নেই বললেই চলে। অথচ স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও শহীদ পরিবারগুলো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়ার কষ্ট তাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সুযোগ-সুবিধা দিতে পরিবারগুলোর ভেতর রয়েছে চরম ক্ষোভ। অনেক পরিবার মানবেতর দিনও কাটাচ্ছেন।

তেরশ্রী এস্টেটের জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরীর পুত্র স্কুল শিক্ষক সমেশ্বরর রায় প্রসাদ চৌধুরী আক্ষেপ বলেন, ‘আমার পিতাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে, শরীরে পেট্রল ঢেলে জ্বলন্ত আগুনে পুড়ি নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। তার মতো আরও ৪৩জন স্বাধীনতাকামী মানুষ আত্মাহতি দিয়েছে দেশের জন্য। কিন্ত স্বাধীনতার আর ৪৯ বছর হয়ে গেলেও আমরা শহীদ পরিবারগুলো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলাম না।’

শহীদ পরিবারের আরেক সন্তান নরেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য বছরের পর বছর ধরে কতই না আকুতি মিনতি করে আসছি। ২২ নভেম্বর এলে সাংবাদিকরা আমাদের খুঁজে বের জাতীর কাছে তুলে ধরেন। কিন্ত ২২ নভেম্বর ফুরিয়ে গেলে কেউ খোঁজ নেয় না। আমরা কেমন আছি কীভাবে চলছে আমাদের সংসার। সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতা ভাগ্যে জুটছে না। অথচ আমার বাবাকে দেশের জন্য জীবন দিতে হয়েছে।’

স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউল প্রধান বলেন, ‘১৯৭১ সালে ২২ নভেম্বর পাক হানাদার বাহীনি আমাদের তেরশ্রী গ্রামে হামলা চালিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ ও জমিদারসহ ৪৩ জন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি এই ৪৩জন শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই গ্রামে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাদুঘর ও পাঠাগার নির্মাণের।’

এলাকার শহিদুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘শহীদদের স্মরণে তেরশ্রী গ্রামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে এতে আমরা এলাকাবাসী খুশি। এখন সময়ের দাবি একটি জাদুঘর ও পাঠাগার নির্মাণের। এ ছাড়া শহীদ পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিলে তারা নিজেদের গর্বিত মনে করবেন।’

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইরিন আক্তার বলেন, ‘প্রতিবছর ২২ নভেম্বর স্থানীয়ভাবে গনহত্যা দিবস পালন করে থাকে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমরা সেখানে যাই। আর ২২ নভেম্বর এলেই এলাকাবাসীর দাবি ওঠে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটা জাদুঘর এবং পাঠাগার নির্মাণের। বিষয়টি আলোচনার মধ্যে রয়ে গেছে। তবে স্থানীয়ভাবে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের আবেদন আমরা পাইনি। আবেদন পেলে প্রশাসনিককভাবে আমরা গণগন্থাগার অধিদফতরে যোগাযোগ করতাম এবং হয়ত ভালো কিছু সাড়া পেতাম।’

গণহত্যা টপ নিউজ মুক্তিযুদ্ধ

বিজ্ঞাপন

জীবন থামে সড়কে — এ দায় কার?
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫২

বাসচাপায় ২ কলেজছাত্র নিহত
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর