মর্গে শতাধিক মৃত নারীকে ধর্ষণ!
২০ নভেম্বর ২০২০ ১৬:২৩
ঢাকা: অস্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া পাঁচ নারীর বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের ক্রিমিনাল ডিপার্টমেন্ট ইনভেস্টিগেশন (সিআইডি) ময়নাতদন্ত রিপোর্টে দেখতে পান পাঁচ নারীর মরদেহে একই ব্যক্তির শুক্রাণু। সিআইডির ধারণা ছিল এসব নারীর মৃত্যুর পেছনে কোনো সিরিয়াল রেপিস্ট অথবা সিরিয়াল কিলারদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। কিন্তু সুরতহাল কিংবা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মরদেহে আঘাতের চিহ্ন না পাওয়ায় তদন্তে নতুন মোড় নেয়। মর্গেই মৃত নারীদের ধর্ষণ করা হতে পারে সন্দেহে শুরু হয় সিআইডির তদন্ত।
সিআইডির তদন্তে উঠে আসে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গেই মৃত নারীদের ধর্ষণ করা হতো। আর এর সঙ্গে জড়িত ওই মর্গের সহকারী ডোম মুন্না ভগত (২০)। বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) তাকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সহকারী ডোম মুন্না ভগত সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য আসা কমবয়সী নারীদের ধর্ষণ করত। সে ডোম জতন কুমার লালের সহযোগী হিসেবে কাজ করত। দুই-তিন বছর ধরে সে মর্গে থাকা মৃত নারীদের ধর্ষণ করে আসছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না শতাধিক মৃত নারীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। তবে এর সঠিক সংখ্যা জানতে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।
জানা যায়, মৃত্যু বা হত্যার পর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে মর্গে আসা নারীর মরদেহে শুক্রাণুর উপস্থিতি পায় ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ। পরীক্ষার জন্য কয়েকটি এইচভিএস (হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব) ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখানে আলামতসমূহের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হয়। কয়েকটি নারীর মরদেহে পাওয়া শুক্রাণু একই ব্যক্তির বলে ডিএনএ পরীক্ষায় উঠে আসে। নড়েচড়ে উঠে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডির ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সিআইডি কর্মকর্তাগণ প্রাপ্ত আলামত ও প্রতিটি অপরাধ সংগঠনের প্রক্রিয়া বা মোডাস অপরেন্ডি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণপূর্বক এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মর্গের ভেতর থেকে কেউ না কেউ মৃতদেহে যৌন লালসা চরিতার্থ করেছে।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যেকটি মৃতদেহেরই ময়নাতদন্ত একটি হাসপাতালের মর্গে করা হয়েছে। সিআইডি গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে নতুন ইঙ্গিত বা ক্লু পাওয়ায় প্রত্যেকটি মৃতদেহ মর্গে আনার পর তার কার্যধারা বিশ্লেষণ করা হয়।
এতে দেখা যায়, সবগুলো ক্ষেত্রেই ময়নাতদন্তের জন্য আনা লাশসমূহ পরবর্তী দিনে লাশ কাটার অপেক্ষায় মর্গে রেখে দেওয়া হতো। এ পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি কর্মকর্তারা মর্গে কর্মরত ডোমদের ওই মামলার ময়নাতদন্তকালীন গতিবিধি পর্যালোচনা করে দেখেন যে, হাসপাতালের ডোম মুন্না ভগত আলোচ্য পাঁচটি ঘটনার সময় রাত্রীকালীন লাশ পাহারা দেওয়াসহ মর্গে অবস্থান করে।
বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য ও গোপনে তথ্য সংগ্রহ করলে সিআইডি’র অনুসন্ধানে ডোম মুন্না ভগত এ অপরাধে জড়িত আছে মর্মে প্রমাণ পায়। বিষয়টি টের পেয়ে মুন্না ভগত গা ঢাকা দিলে সিআইডি’র সন্দেহ ঘণীভূত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করে সিআইডি। তদন্তকারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি দল ওই রাতেই ১০টার দিকে মুন্নাকে গ্রেফতার করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘পাঁচ মরদেহে একই ব্যক্তির শুক্রাণুর উপস্থিতি মেলার পর ঘটনার ভয়াবহতায় তদন্তের শুরুতে আমরা সিরিয়াল কিলার কিংবা সিরিয়াল রেপিস্টদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে ধরে তদন্ত শুরু করেছিলাম। তবে সুরতহাল কিংবা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মরদেহে আঘাতের চিহ্ন না পাওয়ায় তদন্তে মোড় আসে। এরপরই মর্গেই মৃত নারীদের ধর্ষণ করা হতে পারে সন্দেহে তদন্ত শুরু সিআইডি’র তদন্ত টিম।
তদন্তে উঠে আসে, চলতি বছরের গত মার্চ থেকে আগষ্ট পর্যন্ত শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায় ডোমের সহযোগী মুন্না ভগত। তদন্তকালেই ঘটনার গভীরতা ও ভয়াবহতা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
ডিএনএ ল্যাবে পরীক্ষায় যাদের শরীরে শুক্রাণুর আলামত মিলেছে তাদের বয়স ১২ থেকে ২০ বছর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে মুন্না। বিশদ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১০ রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি রেজাউল হায়দার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিকৃত মানসিকতা থেকে এরকম কাজ করেছে মুন্না ভগত। সে এ সব নোংরা কাজ করার কথা স্বীকারও করেছে। আর কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তা জানতে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ড পেলে আরও বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে।’