Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এনজিও কর্মকর্তাকে হত্যার পর লাশ গুম, কঙ্কাল মিলল পাহাড়ে


১৯ নভেম্বর ২০২০ ১৯:৫০ | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২০ ১০:২৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কথিত কোটি টাকা দামের তক্ষক কিনতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে একবছর ধরে নিখোঁজ এক ‘এনজিও কর্মকর্তার কঙ্কাল’ পাওয়া গেছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে। তাকে হত্যার পর লাশ জঙ্গলের ভেতরে প্রায় ৫০ ফুট গভীর একটি গর্তে পুঁতে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআিই)।

খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পেয়ে একজনকে গ্রেফতারের পর তার মাধ্যমে পিবিআই কর্মকর্তারা লাশ পুঁতে রাখার স্থান শনাক্ত করেন। এরপর বুধবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে লাশ উদ্ধারে অভিযানে নামে পিবিআই টিম। কিন্তু প্রথমদিন গর্তের ভেতর ‘বিষধর’ একটি সাপের উপস্থিতি দেখে অভিযান পণ্ড হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় দিনে আবার অভিযান শুরুর পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী বাগানবাজার ইউনিয়নের নুরপুর এলাকায় ওই গর্তের ভেতর কঙ্কালটি পাওয়া যায়। সেটি হেলালের কঙ্কাল বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন পিবিআই’র চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হোসেন।

নিখোঁজ মো. হেলাল উদ্দিন (৩৭) ঢাকার মুগদা থানার মদিনাবাগ এলাকার বাসিন্দা। তিনি সেতুবন্ধন নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মদিনাবাগ শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন।

২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর হেলালের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা পিংকি ভুজপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, ১৮ নভেম্বর তক্ষক কেনার জন্য হেলাল ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ভুজপুরে আসেন। ২৩ নভেম্বর তিনি জানতে পারেন, তার স্বামীকে একদল লোক ভুজপুর-রামগড় এলাকায় জিম্মি করে রেখেছে। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মিলছে না। ভুজপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলাটি পরে তদন্তের জন্য যায় পিবিআইয়ের কাছে।

বিজ্ঞাপন

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই চলতি বছরের ২৩ জুলাই রামগড়-বাগানবাজার এলাকায় পাহাড়ি পথে যাত্রী বহনকারী এক মোটরসাইকেলের চালক জাকির হোসেন রুবেলকে (২৪) গ্রেফতার করে। ২৫ জুলাই চট্টগ্রামের একটি আদালতে জবানবন্দিতে রুবেল জানান, ২৩ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে বাগানবাজার ইউনিয়নের লালমাই গ্রামের জনৈক ‘রাজা ভাই’ তাকে বলেন— পার্শ্ববর্তী চিকনছড়া বাজারে হেলাল নামে এক লোক এসেছেন, তাকে যেন মোটরসাইকেলে করে তার (রাজা) বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। রুবেল যখন হেলালকে নিয়ে রাজা ভাইয়ের বাড়িতে যান, সেখানে ইসমাইল, সাদ্দাম ও বিল্লালকে দেখেন। এরপর আর কিছু তিনি জানেন না বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।

এরপর তক্ষকের ক্রেতা সেজে ফাঁদে ফেলে পিবিআই টিম বুধবার গ্রেফতার করে বিল্লালকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিল্লাল জানান, হেলালকে হত্যা করে লাশ খাগড়াছড়ির কাছে ফটিকছড়ির বাগানবাজার ইউনিয়নের নুরপুর এলাকার পাহাড়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। তক্ষকের দামে বনিবনা না হওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর বুধবার বিকেলে বিল্লালকে নিয়ে লাশ উদ্ধারের জন্য যায় পিবিআই টিম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার রাতে মাটি অপসারণের কাজ শুরুর পর ওপর থেকে একটি বিষধর সাপ গর্তের ভেতরে পড়ে। আগুন জ্বালিয়ে ফেলা হয় গর্তের ভেতরে জীবন্ত সাপটির ওপর। সাপটির মৃত্যু নিশ্চিত করা হলেও রাতে আর মাটি অপসারণের কাজ করেননি পিবিআই সদস্যরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে আবারও ঘটনাস্থলে অভিযানে যান তারা।

পিবিআই’র চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মূল রাস্তা থেকে পাহাড়ি পথে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা হেঁটে যেতে হয়েছে ঘটনাস্থলে। সেখানে প্রায় ৫০ ফুট গভীরতার একটি গর্ত আমাদের দেখিয়ে দেয় বিল্লাল। সেখানে লাশ পুঁতে রাখা হয়েছে বলে সে আমাদের জানায়। কিন্তু একবছর ধরে ওই গর্তে মাটি, ময়লা-আবর্জনা পড়েছে। গর্তের মধ্যেই মাটির স্তূপ হয়ে গেছে। সেগুলো সরিয়ে আশপাশের আরও মাটি খনন করে কঙ্কালটি পাওয়া গেছে। এটিই নিখোঁজ হেলালের কঙ্কাল বলে বিল্লাল শনাক্ত করেছে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী রামগড়-বাগানবাজার এবং দাঁতমারা ইউনিয়নের হেঁয়াকোর এই গহীন জঙ্গলে কোটি টাকায় তক্ষক কেনাবেচার কথা বলে প্রতারণা করে— এমন একটি চক্র আছে। তারা গহীন জঙ্গলে লোকজনকে এনে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়। জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে। যাদের কাছ থেকে টাকাপয়সা নিতে পারে না, তাদের হত্যা করে লাশ গুম করে।

এনজিও কর্মকর্তা কঙ্কাল উদ্ধার টপ নিউজ তক্ষক নিখোঁজ এনজিও কর্মকর্তা প্রতারণা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর