Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রায়ের পর পুলিশকে কামড়ে পালানোর চেষ্টা মজনুর [ভিডিও]


১৯ নভেম্বর ২০২০ ১৬:১২ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০ ১৭:৩৫

ঢাকা: ঢাবি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ মামলায় একমাত্র আসামি মজনুকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার আগে এদিন মজনুকে আদালতে হাজির করা হলে শুরু থেকেই তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। আদালত প্রাঙ্গণে তিনি সাংবাদিকদের দেখে দাবি করতে থাকেন, তিনি নির্দোষ। রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে বের করার সময়ও তিনি একই রকম আচরণ করেন। একপর্যায়ে তিনি বিচারক, আইনজীবী, পুলিশসহ সবাইকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এসময় পুলিশকে কামড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেন তিনি। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও তাকে সামলাতে বেগ পেতে হয়।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল ৩টার কিছু পরে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোসা. কামরুন্নাহার আসামি মজনুর উপস্থিততে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের সাজা দেন আদালত।

আরও পড়ুন- ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় মজনুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

রায় ঘোষণার আগে দুপুর আড়াইটার দিকে আদালতে ওঠানো হয় মজনুকে। আদালত কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন তিনি। এসময় মজনু বলেন, আমারে ছাইড়া দেন। আমি মা’র কাছে যাব। আমাকে মারলে আল্লাহ বিচার করবে। আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসাই দিয়েছে। আমার শরীল খুব দুর্বল। আমাকে এক বছর ধরে অত্যাচার করছে।

মজনু বলেন, আমি মারামারি করি না, নেশা-পানি করি না। আমারে ছাইড়া দেন। আমি রিশকা চালিয়ে খাব। আমার মা খুব অসুস্থ, আমার মায়ের কাছে কেউ নাই। আমারে ছেড়ে দেন। আমারে ওরা অনেক অত্যাচার করছে, মশার কামুর খাওয়াইছে।

আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে মজনু বলেন, কারাগারে মানুষ বেচাকেনা করা হয়। আমার পক্ষে কেউ নাই। আমি এতিম। আমারে ছাইড়া দেন। আমি বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়া মইরা যামু। আমারে ছাইড়া দেন।

এসময় মজনু সাংবাদিকের সামনে চার জনের নাম উল্লেখ করে তারা এই ধর্ষণে জড়িত বলে দাবি করেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অসংলগ্ন কথাবার্তাও বলতে থাকেন।

বিকেল ৩টার কিছু আগে সাংবাদিকসহ অন্যদের আদালত করতে বলা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। বিকেল ৩টা ২ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন। তিনি রায় পড়তে শুরু করেন। ওই সময়ও আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মজনু চিৎকার করেই যাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই আদালত রায় ঘোষণা করলে মজনু কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্না সামলে আবার চিৎকার করতে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

রায় ঘোষণা শেষ হলে মজনুকে আদালত থেকে বের করার সময় তিনি ছোটাছুটি করার চেষ্টা করছিলেন। চার-পাঁচ জন পুলিশ সদস্যের পক্ষেও তাকে আটকে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছিল। একপর্যায়ে তিনি পুলিশের হাত কামড়ে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্তে টেনে-হিঁচড়ে তাকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।

আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলাটি মোট ১৩ কার্যদিবস পরিচালিত হয়ে রায়ের পর্যায়ে উপনীত হয়। মামলার বিভিন্ন পর্যায়ের শুনানিতে এর আগেও হাজির করা হয়েছিল মজনুকে। তিনি বরাবরই আদালতে হাজির হলে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন, গালিগালাজ করেছেন। মামলার কার্যক্রম যতই এগিয়েছে, মজনু তত বেশি অসংলগ্ন ও মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

গত ৫ জানুয়ারি ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে কুর্মিটোলা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নেমেছিলেন ওই ঢাবি শিক্ষার্থী। কুর্মিটোলা এলাকাতেই ধর্ষণের শিকার হন তিনি। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর বাবার দায়ের করা মামলাটি পরদিন গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ। ৮ জানুয়ারি ভোরে রাজধানীর শেওড়া এলাকা থেকে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয় মজনুকে। র‌্যাব জানায়, তিনি একজন ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’। এর আগেও বিভিন্ন সময় ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধী নারীদের তিনি ধর্ষণ করেছেন।

প্রায় দুই মাস পর ১৬ মার্চ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবু সিদ্দিক সিএমএম আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় চার্জশিট জমা দেন। করোনাভাইরাসের কারণে আদালতের কার্যক্রম স্থবির হয়ে যাওয়ার পর ফের কার্যক্রম শুরু হলে ২৬ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক আসামি মজনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।। ৫ নভেম্বর মজনুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন ট্রাইব্যুনাল। ১২ নভেম্বর মামলাটির রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য আজকের তারিখ ঠিক করে দেন।

ছবি: সুমিত আহমেদ

আরও পড়ুন-

আসামি মজনু টপ নিউজ ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণ ধর্ষক মজনু মজনু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর