Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী প্রকল্পে মানা হয়নি পিইসির সিদ্ধান্ত


১৭ নভেম্বর ২০২০ ০৯:২৭

ঢাকা: জামালপুরে গড়ে উঠছে শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী। তবে এটি কোনো গতানুগতিক পল্লী নয়। এর আগে শহরকেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বিনোদন ও সাংস্কৃতিক সুবিধা বাড়ানোর করার লক্ষ্যে ‘জামালপুর শহরের নগর স্থাপত্যের পুনঃসংস্কার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তবে বর্তমানে সেটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হচ্ছে ‘শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী নির্মাণ’ প্রকল্প। ইতোমধ্যেই এই নাম পরিবর্তনের অনুমতিও দিয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ফলে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে প্রকল্পটির ব্যয়, মেয়াদ ও কাজের পরিধিও বাড়ছে। তবে অভিযোগ রয়েছে প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণে মানা হয়নি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভার সিদ্ধান্ত।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যেই মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) প্রস্তাবটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সভাপতিত্ব করবেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য (সাবেক সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গিস বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জামালপুর শহরের কেন্দ্রস্থলে পরিত্যক্ত জলাধার ও জলাধার সংলগ্ন পুরাতন ধর্মীয় ও অন্যান্য অবকাঠামো সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে। ফলে সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও বিনোদন সুবিধার সম্পসারণসহ নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত স্থান তৈরির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বাড়ানো সম্ভব হবে।’

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১২৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এখন প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ১০২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ২২৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে ৮১ দশমিক ১৮ শতাংশ। এছাড়া ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। পরবর্তী সময়ে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই এক বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু এতেও বাস্তবায়ন শেষ না হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া আরও একবছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার প্রথম সংশোধনীতে এক বছর চার মাস মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হয়েছে। আর শুরু থেকে গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির অনুকূলে ব্যয় হয়েছে ৯৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

মানা হয়নি পিইসি সভার সিদ্ধান্ত
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া প্রধান সুপারিশ প্রতিপালন করা হয়নি। তবে তার ব্যাখা দিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ওই পিইসি সভায় প্রকল্পের আওতায় নতুন প্রস্তাবিত ওয়াটার ফাউন্টেন, ৩-ডি সিনেপ্লেক্স, ৯-ডি থিয়েটার এবং নাগরদোলা অঙ্গ চারটি বাদ দিয়ে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠন করতে বলা হয়।

মন্ত্রণালয়ের ব্যাখা
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, জামালপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পরিত্যক্ত জলাধার ও অন্যান্য স্থাপনার পরিকল্পিত উন্নন ও সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বিনোদন ও উন্মুক্ত স্থান তৈরি করা হবে। নির্মাণাধীন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি আরও আকর্ষণীয় এবং দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়িয়ে আয় বাড়ানোর জন্য নাগরদোলা, ওয়াটার ফাউন্টেন, ১৭৬ সিট বিশিষ্ট ৩-ডি সিনেপ্লেক্স, ৩২ আসন বিশিষ্ট ৯-ডি থিয়েটার আইটেমগুলো সংযোজন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্মৃতিবিজরিত স্থান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের জন্য নির্মিত বাণিজ্যিক কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ৩-ডি, ৯-ডি থিয়েটার স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় থেকে আরও বলা হয়, বর্তমান সংশোধনীর যাবতীয় সংযোজন স্থাপত্য অধিদফতরের সর্বশেষ মাস্টারপ্ল্যান ও সুপারিশ অনুযায়ী করা হয়েছে। কিন্তু পিইসি সভায় কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়টি বিবেচনা করে কিছু বিনোদন আইটেম অঙ্গ বাদ দেওয়া হয়নি। কারণ, একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার সংযোজন ঘটিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের সুফল নিশ্চিত করা দরকার। এজন্য পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্ণিত অঙ্গগুলো বাদ না দিয়ে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচি অনুসরণে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে সভার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে পূর্ণাঙ্গ আকারে সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন প্রয়োজন।

সংশোধনের কারণ
একনেক সভার জন্য তৈরি সারসংক্ষেপে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের নাম পরিবর্তন আবশ্যক। এছাড়া একবছর চার মাস মেয়াদ বৃদ্ধি, নতুনভাবে নাগরদোলা, মিউজিয়ামের প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক পোট্রেটের কাজ, ওয়াটার ফাউন্টেন, ৩-ডি ও ৯-সিনেকমপ্লেক্স ও থিয়েটার সংযোজন করা হয়েছে। এর বাইরে ফায়ার ডিটেকশন অ্যান্ড প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট খাতে ব্যয় বৃদ্ধি এবং স্যানটারি, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যয় বাড়ানোর কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে।

প্রকল্প গ্রহণের প্রেক্ষাপট
জামালপুর জেলা দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত। জামালপুর পৌরসভা একটি ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা। জেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে সরকারি পরিত্যক্ত জমির ওপর দুটি জলাধার ও পুরাতন ধর্মীয় উপসনালয়সহ সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালতের বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। এর আগে গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নে সীমিত আকারে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও  জামালপুর জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়নি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে এই শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। কিন্তু সেই তুলনায় শহরের অবকাঠামো সুবিধা বিশেষ করে পার্ক-বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদির সম্প্রসারণ হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে জামালপুর শহরের মধ্যবর্তী স্থানে পরিত্যক্ত জলাধার ও অন্যান্য স্থাপনার পরিকল্পিত উন্নয়ন-সম্প্রসারণ, নগর জনগোষ্ঠীর জন্য একটি সাংস্কৃতিক, বিনোদন ও উন্মুক্ত স্থান তৈরির লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।

জামালপুর পুনঃসংস্কার বিনোদন শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর