অনুমোদনহীন আইসিইউতে করোনা রোগীর সঙ্গে চলছে সাধারণ রোগীরও চিকিৎসা
১৩ নভেম্বর ২০২০ ২২:৩৬
ঢাকা: রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ফটকের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত বহুতল মার্কেট মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার। এরই দ্বিতীয় তলায় রয়েছে রেমেডি কেয়ার হাসপাতাল।২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে হাসপাতালটির কার্যক্রম চালু হয়। হাসপাতালটিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থাকলেও সেটির নেই অনুমতি নেই।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি ছাড়াই হাসপাতালটি দিব্যি তিন শয্যার আইসিইউ চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সেই আইসিইউ ইউনিটে নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের পাশাপাশি সেবা দেওয়া হচ্ছে নন-কোভিড রোগীদেরও! হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এই পরিস্থিতি। এ বিষয়ে তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি কোনো সদুত্তর।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় নবাবগঞ্জ থেকে আসা রাব্বী ইসলামের (ছদ্মনাম)। তিনি জানান তার বাবাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ১১ নভেম্বর। শুরু থেকেই তাকে এ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
বাবার কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা করানো হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আইসিইউতে চিকিৎসকের পরামর্শে বাবা চিকিৎসাধীন আছেন। অন্যান্য বেডে কোন রোগে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন এ বিষয়ে কিছু জানি না।
রেমেডি কেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার সাইফুল কবীরের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আইসিইউতে কোনো কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী নেই। এই হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় না।
এ সময় সাইফুল ইসলাম (ছদ্মনাম) নামে একজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। রাজধানীর একটি সরকারি কলেজের ছাত্র তিনি।
তিনি বলেন, আমার আম্মুর বয়স ৫০ বছর। তিনি কিডনি রোগে ভুগছেন। নিয়মিতভাবে উনাকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। আগে আমরা আরেকটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। সেখানে আম্মু কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে আমরা চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, ‘বাসায় আনার পরে আম্মুর অবস্থার একটু অবনতি হয়। এরপরে আমরা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে এই হাসপাতালের বিষয়ে জানান। এর মধ্যে আমরা আম্মুর কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করাই। সেখানে উনার মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। পরবর্তীতে একজনের পরামর্শ অনুযায়ী আমি এখানে রেমেডি কেয়ার হাসপাতালে এসে আমার আম্মুর বিষয়ে জানাই। প্রথমে জানতে পারি উনারা কোভিড-১৯ চিকিৎসা দেন না। কিন্তু একটু পরে উনারা জানান আমার আম্মুকে ভর্তি করবেন। এরপরে আম্মুকে এখানে ভর্তি করাই। ভর্তির পরপরই মাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।’
হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে রেমেডি কেয়ার হাসপাতালের ম্যানেজার মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো করোনা আক্রান্ত রোগীকে আমরা চিকিৎসা দেই না। আপনারা যার কথা বলছেন তিনি আমাদের এখানে আজই এসেছেন। উনার করোনা সংক্রমণ আছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এজন্য আমরা উনার কিডনির চিকিৎসায় চালিয়ে যাচ্ছি।’
তবে সাইফুল ইসলাম জানান তিনি তার মায়ের কোভিড-১৯ সংক্রমণের তথ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এরপরে উনারাই মাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।
এ বিষয়েও হাসপাতালের ম্যানেজার মেহেদী হাসান অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সাসপেক্টেড হতে পারে তাই ভর্তি রাখা হয়েছে। যদি তার সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায় তবে আমরা সরকারি হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে দেব।’
এ সময় প্রতিবেদক সাইফুল ইসলামের মায়ের কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট মেহেদী হাসানকে দেখালেও তিনি অস্বীকার করেন।
এ সময় হাসপাতালটিতে আইসিইউ চিকিৎসা দেওয়ার অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলেও কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি মেহেদী হাসান। হাসপাতালটির মালিকের বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর সঙ্গে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়াটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ভাইরোলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার জন্য আলাদাভাবে গাইডলাইন করা আছে। সম্পূর্ণ আলাদাভাবে ট্রায়াজ পলিসি মেইনটেইন করে চিকিৎসা দিতে হবে তা সেই গাইডলাইনেই আছে। কোনোভাবেই একজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে সাধারণ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া যাবে না। এতে করে সংক্রমণ তো সাধারণ রোগীর মাঝেও ছড়িয়ে পড়বে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক ডা. ফরিদ মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এভাবে কোভিড-১৯ ও নন কোভিড আক্রান্তদের একসঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’