Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিইসির কাছ থেকে এ রকম হাস্যকর কথা কল্পনাও করিনি: ফখরুল


১৩ নভেম্বর ২০২০ ১৪:৫১ | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ১৬:৫২

ঢাকা:আমেরিকার নির্বাচন কমিশন আমাদের কাছ থেকে শিখতে পারে’— প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার এমন বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ অভিহিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার কাছ থেকে এ ধরনের কথা কল্পনাও করেননি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ রকম হাস্যকার কথা একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছ থেকে আসতে পারে, কল্পনাও করিনি।’

শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন- যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিন: ফখরুল

এর আগে, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমেরিকার নির্বাচন কমিশনের উচিত আমাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। আমেরিকা যেখানে চার-পাঁচ দিনে ফলাফল দিচ্ছে, আমরা সেখানে চার-পাঁচ মিনিটে দিয়ে দিচ্ছি।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এ বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে। আপনারা লক্ষ করেছেন, গতকাল ঢাকা-১৮ আসনে যে উপনির্বাচন হয়ে গেল, সেখানে নির্বাচনের মাঝেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলে ফেললেন, এই নির্বাচন কমিশন এত ভালো যে আমেরিকার নির্বাচন কমিশনের উচিত তাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। আমেরিকা চার-পাঁচ দিনে যে ফলাফল দিচ্ছে, তারা সেই ফলাফল চার-পাঁচ মিনিটে দিয়ে দিচ্ছে। এ রকম হাস্যকর কথা একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছ থেকে আসতে পারে— এটা কল্পনাও করতে পারি না।’

বিজ্ঞাপন

‘এ থেকেই বোঝা যায় আমাদের গণতন্ত্রের অবস্থা কোথায়, নির্বাচনের অবস্থা কোথায়?,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে কথাটা বলতে চাই সেটা হলো— শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা পৃথিবীতে গণতন্ত্রই হচ্ছে একমাত্র ব্যবস্থা যেটা সব খারাপের পরও ভালো। অর্থাৎ খারাপ কিছুটা থাকলেও এটাই হচ্ছে একমাত্র ব্যবস্থা, যেটা জনগণের জন্য মানুষের কল্যাণের জন্য উত্তম ব্যবস্থা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা বাংলাদেশে একেবারেই নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে একটা পার্লামেন্ট আছে, যেখানে জনগণের কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না। দুই/তিন/চার/পাঁচ মিনিটের মধ্যে আইন পাস হয়ে যায় এবং যে আইনগুলোর মধ্যে জনগণের কল্যাণ থাকা তো দূরের কথা, তারা আরও কষ্টের মধ্যে পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, তাহলে জবাদিহিতা থাকে না, অ্যাকাউন্টিবিলিটি থাকে না। আজ এই বিষয়টিই সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারও কোনো জবাবদিহিতা নেই। স্বাস্থ্য সেক্টরে দুর্নীতি এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে, এখন আর মানুষ কথাও বলতে চায় না। আপনারা লক্ষ করেছেন, ড্রাইভারের চার/পাঁচশ কোটি টাকা ধরা পড়ে, একজন পিয়নের দুইশ কোটি টাকা ধরা পড়ে। কিন্তু বড় কেউ ধরা পড়ে না। শাহেদ ধরা পড়ে, কিন্তু শাহেদের সঙ্গে যারা বসলেন— মন্ত্রী এবং সচিব, তাদের কেউ ধরা পড়ে না।’

প্রসঙ্গ বিএনপির রাজনীতি

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। জিয়াউর রহমান যখন রাজনৈতিক দলটি গঠন করেন, তখন পরিটিক্যাল ভ্যাকুয়াম ছিল, রাজনৈতিক শূনত্যা ছিল। শূন্যতাকে পূরণ করবার জন্য বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা ইন্ট্রোডিউস করলেন। সমস্ত দলকে তিনি নিবন্ধন দিলেন। এর আগে কিন্তু রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ছিল না। আওয়ামী লীগেরও নিবন্ধন ছিল না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, উনি (জিয়াউর রহমান) যখন বিএনপি গঠন করেন, তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দেশপ্রেমিক নেতাদের নিয়ে এলেন। তার (জিয়া) মূল বিষয়টা ছিল উদার রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা। ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর অল্প দিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা তৈরি করে নেয়। চীনের সঙ্গে, মিডিল ইস্টের সঙ্গে সম্পর্ক তখনই স্থাপিত হয়ে এবং পাশ্চাত্য বিশ্ব তাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমরা দেখেছি, ইরাক-ইরাান যুদ্ধে তাকে নেগোশিয়েশনের জন্য পাঠানো হয়। জাপানাকে হারিয়ে জাতিসংঘের অস্থায়ী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ।’

বিএনপি কতদূর এগিয়েছে?— এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্রের চর্চা যদি না থাকে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ যদি না থাকে, তাহলে গণতান্ত্রিক দলগুলোর জন্য কাজ করা কঠিন হয়ে যায়। কোনো অন্যায় হলে গণতান্ত্রিক দলগুলো মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে তার প্রতিবাদ করে, পার্লামেন্ট থাকলে সেখানে কথা বলতে পারে। কিন্তু এখানে তো সেরকম কিছু নেই। পার্লামেন্টে বিএনপির মাত্র পাঁচ/ছ য়জন প্রতিনিধি আছে।’

‘বিএনপি সবসময় গণতান্ত্রিকভাবে কাজ করতে চায়, করার চেষ্টা করছে। সেদিক থেকে আমরা মনে করি যে বিএনপি এখনো আছে, প্রতিটি জায়গায় ভিজিবল। এই যে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি, কেন নিচ্ছি? নিচ্ছি এই কারণে যে গণতন্ত্রের মিনিমাম যে স্পেস, সেই স্পেসে আমরা থাকতে চাই। আমাদের চেয়ারপারসন দুই বছর ধরে কারাগারে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে। তারপরও গত দুই বছর আমরা নিয়মিত স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক করছি। আমাদের দল চলছে যৌথ সিদ্ধান্তে। এই সংকটের সময় বিএনপি যে ভূমিকা পালন করছে, আমি মনে করি সেটা যথেষ্ট,’— বলেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার চারপাশে বিশ্বস্ত ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে পারেননি— এ বক্তব্য সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘এ কথা একেবারেই সঠিক নয়। সবচেয়ে বিশ্বস্ত নেতৃত্ব তৈরি করেছেন তিনি। তার প্রমাণ গত দুই বছর তিনি জেলে গেলেও দল ভেঙে যায়নি। কেউ চলে যায়নি।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের মামলার যে অগ্রগতি, তার শরীরের যে অবস্থা, তাতে তার রাজনীতি ফোরার সম্ভবনা কতটুকু?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিলেন, ‘আমরা তো মনে করি উনি এখনো অ্যাকটিভ আছেন। বেগম খালেদা জিয়া কখনো রাজনীতি থেকে চলে যাননি এবং যাবেন না। রাজনীতিতে তার যে অবদান, সেটির শেকড় অত্যন্ত গভীরে। তিনি আছেন এবং থাকবেন।’

মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানের শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেন রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ।

টপ নিউজ ডিআরইউ নির্বাচন কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিইসি সিইসি’র বক্তব্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর