Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনার ৮ মাসে রেমিট্যান্স সোয়া লাখ কোটি টাকা


১০ নভেম্বর ২০২০ ১৮:০৫ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২০ ১২:১২

ঢাকা: করোনায় বিশ্ব অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও গত আট মাসে (মার্চ থেকে অক্টোবর) প্রবাসীরা ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (১ ডলার ৮৫ টাকা ধরে) ১ লাখ ২৫ হাজার ২১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। করোনাকালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের টালমাটাল অর্থনীতি সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে অভিমত অর্থনীতিবিদদের। তাদের মতে, করোনাকালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে এই মুহূর্তে রেমিট্যান্স প্রবাহের ঊর্ধ্বমুখী ধারা ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনা সংক্রমণ রোধে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন পর্যন্ত সারাদেশে কয়েক দফায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এই অবস্থায় বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের অর্থনীতি বেসামাল হয়ে পড়ে। বেসরকারি খাতে কর্মী ছাঁটাই, বেতন কমানোসহ নানা কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই না করলেও বেতনভাতা কমিয়ে অর্ধেক করে দেয়। এতে মানুষের আয় কমে যায়। ফলে অনেক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে দিকে ছোটে। এই অবস্থায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে আশার আলো সঞ্চার করে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনাকালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিরি চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে বেশকয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- অনেক প্রবাসী করোনার কারণে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন, এইসব প্রবাসীরা দেশে আসার আগে তাদের সঞ্চিত সব টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ফলে গত মে মাস থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে এবং তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তবে এই অবস্থা কতটা টেকসই হবে সেটাই বড় কথা। রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখাটাই হবে সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার ধাক্কা সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে পড়েছে। এই অবস্থায় প্রবাসীরা তাদের হাতে থাকা সঞ্চয় ধরে রাখা নিরাপদ মনে করছেন না। ফলে অনেকেই তাদের কাছে থাকা সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এতে করে দেশে গত ৪/৫ মাস ধরে রেমিট্যান্স বাড়ছে। তবে এটা কতদিন বহাল থাকে সেটাই বড় কথা।’

তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে বাংলাদেশ তার করোনাকালীন সংকট সহজে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। রেমিট্যান্স বাড়ার কারণে করোনাকালে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর প্রথম দশ মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৭৮২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে করোনাকালীন (মার্চ থেকে অক্টোবর) রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। করোনাকালের প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২০১৬ ও ২০১৭ সালের পুরো বছরে পাঠানো রেমিট্যান্সের চেয়েও বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, করোনার আট মাসের মধ্যে ছয় মাসই রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথমেই গত মে মাসে রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এরপর গত জুন মাসে সে রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এভাবে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়েই রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়।

সুত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাই মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়, যা এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। সদ্য বিদায়ী অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা ২১১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি এক মাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে চতুর্থ সর্বোচ্চ ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে গত আগস্টে। এছাড়াও প্রবাসীরা চলতি বছরের মে মাসে ১৭৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং জুনে ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসার তালিকায় ৫ম ও ৬ষ্ঠ স্থানে রয়েছে। ফলে রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে শীর্ষ ছয়টি স্থান দখল করেছে বছরের সর্বশেষ ছয় মাস। এছাড়াও চলতি বছরের জানুয়ারিতে জানুয়ারিতে ১৬৩ কোটি ৮০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৫ কোটি ২০ লাখ, মার্চে ১২৮ কোটি ৬০ লাখ এবং এপ্রিলে ১০৪ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে।

অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৬৩১ কোটি মার্কিন ডলার; ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার; ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।

পঞ্জিকা বছর হিসাবে, ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মাকির্ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। ২০১৮ সালে দেশে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো যথাক্রমে- সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।

৮ মাস করোনা ভাইরাস প্রবাসী বাংলাদেশি রেমিট্যান্স সোয়া লাখ কোটি টাকা