ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল: প্রাথমিক ফলে ফাইজারের ভ্যাকসিন ৯০% কার্যকর
৯ নভেম্বর ২০২০ ২১:২৯ | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২০ ১২:১০
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে ৯০ শতাংশেরও বেশি সুরক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছে ফাইজার ও বায়োএনটেক উৎপাদিত ভ্যাকসিন। ৪৩ হাজার ৫শ মানুষের ওপর প্রয়োগ করে তার ফল প্রাথমিকভাবে বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এমন উদ্ভাবনের প্রতিক্রিয়ায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দু’টি বলছে, আজকের দিনটি বিজ্ঞান ও মানবতার জন্য একটি মহান দিন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ফাইজার ও বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের এই ভ্যাকসিনটি পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে বিশ্বের ছয়টি দেশের ৪৩ হাজার ৫শ মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছিল। তাদের কারও শরীরেই এই ভ্যাকসিনের কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এখন এই ভ্যাকসিনটি যেন এ মাসের মধ্যেই বাজারে আনা যায়, সেটি নিশ্চিত করতে জরুরিভিত্তিতে এটি বাজারজাতকরণের অনুমতির আবেদন করার পরিকল্পনা করছে উৎপাদনকারীর প্রতিষ্ঠান দু’টি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই এর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণা শুরু করে। বিশ্বের শতাধিক দেশে এরই মধ্যে বিভিন্ন ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, যেগুলো নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এরই মধ্যে বেশকিছু ভ্যাকসিন পরীক্ষার তৃতীয় ধাপ তথা মানবশরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ফাইজারের এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের ক্ষেত্রেই প্রথম ফল জানা গেল।
ফাইজার-বায়োএনটেকের এই ভ্যাকসিনটি যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও তুরস্কে প্রয়োগ করা হয়েছে। ৪৩ হাজার ৫শ জনের শরীরে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দেওয়া হয়েছে দু’টি ডোজ। প্রয়োগের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই ভ্যাকসিন ৯০ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছে।
ফাইজার বলছে, তারা তারা এ বছরের শেষ নাগাদ এই ভ্যাকসিনের পাঁচ কোটিরও বেশি ডোজ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। ২০২১ সাল নাগাদ ১৩০ কোটি ডোজ উৎপাদনের বিষয়ে তারা আশাবাদী। তবে এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ঋণাত্মক ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় এই ভ্যাকসিন।
এই ভ্যাকসিনের বিষয়ে ফাইজারের চেয়ারম্যান ড. অ্যালবার্ট বোরলা বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান যে স্বাস্থ্য সংকট, তার অবসান ঘটানোর জন্য বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপে খুব কাছে চলে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্য একটি পদক্ষেপ।
বায়োএনটেকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আগার শাহিন এই ভ্যাকসিন পরীক্ষার ফলকে ‘মাইলফলক’ বলে অভিহিত করেছেন।
ফাইজার ও বায়োএনটেকের এই করোনা ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই ফল অবশ্য চূড়ান্ত নয়। প্রতিষ্ঠান দুইটি বলছে, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ তাদের হাতে এই ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত তথ্য জমা হবে।
চূড়ান্ত ফল না হলেও এরই মধ্যে এই ভ্যাকসিনের সাফল্যের খবর ছড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। এটি বাজারে নিয়ে আসার আগে আরও কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা ফাইজার-বায়োএনটেকের এই সাফল্যের খবর রীতিমতো তাদের হাসিকে চওড়া করে দিয়েছে। আসছে বসন্ত নাগাদ বিশ্বের জীবনযাত্রা ফের স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে— এমন আশাবাদও জানাচ্ছেন তারা।
ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের অধ্যাপক পিটার হরবি বলেন, এই খবর আমার হাসিকে আকণ্ঠ বিস্তৃত করেছে। এটি বড় একটি স্বস্তি। ভ্যাকসিনের কারণে বাস্তবেই মহামারি পরিস্থিতিতে বদল আসছে— সেটি দেখার জন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই খবরটি পাওয়ার মুহূর্তটি আমার চোখে পানি এনে দিয়েছে।
করোনাভাইরাস করোনার ভ্যাকসিন কোভিড ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল টপ নিউজ প্রাথমিক ফল ফাইজার বায়োএনটেক ভ্যাকসিন