Wednesday 22 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনুমতি ছাড়াই ২ কোটি টাকায় ৩ গাড়ি কিনল বিআইডব্লিউটিএ


৬ নভেম্বর ২০২০ ১৫:৪১

ঢাকা: ভারত-বাংলাদেশ নৌ-প্রটোকলের অধীনে কোনো গাড়ি বরাদ্দ ছিল না। এমনকি গাড়ি কেনার বিষয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কোনো ছাড়পত্র বা পূর্বানুমোদনও নেওয়া হয়নি। অব্যয়িত অর্থ ফেরত দেওয়া লাগবে বিধায় তড়িঘড়ি করে মাত্র সাতদিনের মধ্যে প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়ে দুটি জিপ গাড়ি ও একটি মিনিবাস কিনেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপপরিচালক (প্রশাসন) সিরাজুল ইসলাম।

গত ২৩ থেকে ৩০ জুন সময়ের মধ্যে গাড়ি কেনার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেন বিআইডব্লিউটিএ’র ওই কর্মকর্তা। যেখানে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করতেই সময় লাগে নূন্যতম এক মাস, সেখানে এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে গাড়িগুলো কেনা হলো?- এমন প্রশ্নের উত্তর খোদ বিআইডব্লিউটি’র অনেক কর্মকর্তাই দিতে পারছেন না। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, ‘মন্ত্রণালয় এই জিপ ক্রয়সংক্রান্ত জবাব চেয়েছে। আমরা জবাব পাঠিয়ে দিয়েছি। এবার মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিআইডব্লিউটি’র চিঠির জবাবে দাবি করা হয়েছে, অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ৮ জুলাই জারিকৃত পরিপত্রে যানবাহন ক্রয় সংক্রান্ত চিঠির আগেই জিপ দুটি কেনা হয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব দেওয়ার জন্য প্রকৃত তথ্য গোপন করে ‘মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা অবৈধভাবে ভোগ’ করার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে গোঁজামিল একটি পত্র তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে চিঠি আদান-প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই নিজের খেয়াল-খুশি মতো সাতদিনের মধ্যে অন্তত দুই কোটি টাকা দিয়ে তিনটি গাড়ি কেনার অন্তরালে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ভূইয়ার বিরুদ্ধে। তবে তার বিরুদ্ধে অনুমতি না নিয়ে গাড়ি কেনা ছাড়াও লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে উপ-পরিচালকের গাড়ি কেনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবর বিআইডব্লিউটিয়’র এক কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ-ভারতের নৌ-প্রটোকলের অধীনে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থের অব্যয়িত অর্থ থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা দিয়ে দুটি জিপ গাড়ি কেনেন উপ-পরিচালক (প্রশাসন) সিরাজুল ইসলাম। গাড়ি দুটির মধ্যে একটি নিশান এক্সট্রিল (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮-৭১৫৬), অপরটি হুন্দাই কোম্পানির (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮-৭১৫৭)। নিশান গাড়িটি বর্তমানে বিআইডব্লিউটিয়’র নৌনিট্রা বিভাগের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম ব্যবহার করলেও হুন্দাই গাড়িটি পড়ে আছে যানবাহন পুলে। এছাড়া রাজস্বখাতভুক্ত ৫২ আসন বিশিষ্ট একটি স্টাফ বাস পুরাতন দেখিয়ে বিক্রি করে তার স্থলে ৩০ আসন বিশিষ্ট একটি এসি মিনিবাস ৬৯ লাখ টাকায় কিনে সেখানেও দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অব্যয়িত অর্থ যাতে ফেরত দেওয়া না লাগে সেজন্য কোনো প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া একক ক্ষমতাবলে দুটি জিপ গাড়ি কেনেন উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। তবে এই গাড়ি কিনে এখন কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন তিনি। নিজের অপরাধ ঢাকতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে এরই মধ্যে নাকি দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন ওই কর্মকর্তা।

জানা গেছে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয় থেকে ২৬ জুলাই পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক ৮ জুলাই জারিকৃত পরিপত্রে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় সকল প্রকার নতুন/প্রতিস্থাপন হিসেবে যানবাহন ক্রয় সম্পূর্ণরূপে নিষেধ রয়েছে। তারপরেও ২০১৯-২০ অর্থবছরের একেবারে শেষ সপ্তাহে এসে কীভাবে সরকারের দুই কোটি টাকা খরচ করে এই কর্মকর্তা দিনটি গাড়ি কিনলেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন। যেমন: বিআইডব্লিউটিএ’র বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্তে গাড়ি কেনার প্রয়োজনীয়তা আছে কি-না?, গাড়ি কেনার বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে সেখান থেকে ছাড়পত্র নেওয়া হলো না কেন? এছাড়াও প্রশ্ন উঠেছে টেন্ডার প্রক্রিয়া, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোটেশন অনুসারে গাড়ি বুঝে নেওয়া, বিল পরিশোধ, হিসাবপত্র সংরক্ষণ ইত্যাদি নিয়ে।

গত ২ জুন বিআইডব্লিউটিএ ১৮.১১.০০০০-১৯/১৯৩৩ স্মারকে নৌ-প্রটোকলের অধীনে দুটি জিপগাড়ি ক্রয়ের ছাড়পত্রের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর জবাবে ২৬ জুলাই অর্থাৎ ৫৪ দিন পরে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় টিএ শাখার উপসচিব আনোয়ারুল ইসলাম ১৮.০০-৩০/১ নম্বর স্মারকে বিআইডব্লিউটিয়ের সরঞ্জামাদি কেনার তালিকায় গাড়ির শূন্য পদ আছে কি-না জানতে চান। তখন উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম সই করে তার অধীনস্ত উপসহকারী প্রকৌশলীকে (যানবাহন) মার্ক করেন। কিন্তু নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র বা অনুমোদন আসার আগেই অর্থাৎ ২৩ থেকে ৩০ জুন মাত্র ছয়দিনের মধ্যে জিপ গাড়ি দুটি কেনার সময় সরকার নির্ধারিত ওপেন টেন্ডার মেথড (ওটিএম) পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। এক্ষেত্রে তিনি ডিরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড (ডিপিএম) গাড়ি দুটি কেনেন। তবে সরকারি ক্রয়-নীতির পরিপন্থী হওয়ায় এখনও এই গাড়ি দুটি কেনার অনুমোদন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত হয়নি।

আবার গত ২২ জুন বিআইডব্লিউটিএ’র রাজস্বখাত থেকে একটি স্টাফ বাস ক্রয়ের ছাড়পত্রের জন্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ‘ডিপিএম’ পদ্ধতিতে ৩০ আসন বিশিষ্ট একটি মিনি এসিবাস ৬৯ লাখ টাকায় মাত্র চারদিনের মধ্যে কিনে ৩০ জুনের মধ্যে বিল পরিশোধ করেন। যা গাড়ি কেনার যাবতীয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তার অধীনস্ত যানবাহন শাখার কম্পিউটারে সংরক্ষিত তথ্য ও সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট অনুমতি ছাড়া গাড়ি কেনার বিষয়ে জানতে চান। জবাবে বিআইডব্লিউটিএ আবারও অনুমতির জন্য চিঠি লিখেছে। এ সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘বিআইডব্লিউটিএ’র উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি শুধু সই করেছি। সবকিছুই ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে হয়েছে।’ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আপনাকে কেন ডেকেছিল?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুদক ডেকেছিল। গাড়ি কেনার বিষয়ে জবাব দিয়ে এসেছি।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর