Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিজির অনিয়ম তদন্তের ‘বিরুদ্ধে’ ধান গবেষণায় ‘কৌশলী’ প্রতিবাদ!


৩ নভেম্বর ২০২০ ২১:৩৪ | আপডেট: ৪ নভেম্বর ২০২০ ১২:০৩

ঢাকা: অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. শাহজাহান কবীরের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে কৃষি মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি। তার বাড়ি, গাড়ি, ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অ্যাপায়ন অনুদানে পরিশ্রমী লুটপাট নিয়ে সারাবাংলা ডটনেটেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে ‘প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধান গবেষণার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ অ্যাখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ড. শাহজাহান কবীরের অনুসারীরা। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানী-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভয় ভীতি দেখিয়েও সমাবেশে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রি’র একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, উনার (ডিজি) ব্যক্তিগত অপরাধকে ঢাকতে তিনি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছেন। আর এই সমাবেশ আয়োজনের দায়ভার নিতে চাচ্ছে না শ্রমিক ও বিজ্ঞানীদের কোনো সংগঠনই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজির আগের প্রমাণিত অপরাধ এবং বর্তমানের প্রায় প্রমাণিত অপরাধ ঢাকতেই কৌশলী এই প্রতিবাদ!

গাজীপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সকালে ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সুনাম সুমন্নত রাখার স্বার্থে বিভিন্ন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে’ শীর্ষক ব্যানারে ওই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সর্বস্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের ব্যনারে ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, এই সমাবেশ আয়োজনে কলকাঠি নেড়েছেন খোদ অভিযুক্ত ডিজিই।

 

প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেছেন, মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের বাইরের কিছু ব্যক্তি এবং ধান গবেষণার ভেতরের কিছু লোক ব্রি’র অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করতে তথাকথিত গণমাধ্যম ব্যবহার করে ব্রি’র মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করতে চায়। ব্রি’র বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তারা।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ওই প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজনে নেতৃত্ব দেন কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ধান গবেষণা শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ, খাবার ব্যবস্থাপনা বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিএসও) মো. সিরাজুল ইসলাম ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) ড. আনছার আলী। সমাবেশে তারাও উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রি’র কর্মকর্তারা জানান, কর্মকর্তা, শ্রমিক ও কর্মচারীদের সমাবেশে অংশ নিতে বাধ্য করেছেন ধান গবেষণার ডিজি। সাবেক পরিচালক ড. আনছার আলী এবং সিএসও সিরাজুল ইসলাম সমাবেশ আয়োজনের অগ্রভাগে ছিলেন। আর ২০১৩ সালে শ্রমিকরা বিজ্ঞানীদের লাঞ্চিত করার যে ঘটনা ঘটিয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিলেন ড. শাহজাহান কবির ও শ্রমিক নেতা আব্দুল মজিদ। তখনও বিজ্ঞানীদের স্বার্থ দেখেননি সিরাজুল ইসলাম ও আনছার আলী। তারা এবারও ২০১৩ সালের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে।

আরও পড়ুন-

ব্রি’র কর্মকর্তারা আরও বলছেন, জাতীয় চার নেতার হত্যার দিনে যেখানে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর কথা সেখানে ডিজির অপকর্ম ঢাকতে তারা এমন দিনেও প্রতিবাদ করেছে, যা চার নেতার প্রতি অবমাননাও। ব্রিতে সবকিছুই ডিজির ইচ্ছে মতো হচ্ছে। এমনকি তদন্ত কমিটিকেও তিনি চ্যালেঞ্জ করছেন। হয়তো নিশ্চিত শাস্তি জেনেই তিনি এমনটি করছেন। বিজ্ঞানীদের চাপ দিয়ে সেখানে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শ্রমিক-কর্মচারী ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে তার কিছু পোষা লোক রয়েছে। তারা ডিজির চেয়েও আতঙ্কিত। তারা নিজেদের পিঠ বাঁচাতেও প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে। বাকিরা যারা গেছে সবাই ভয়ে, বাধ্য হয়ে। কারণ শ্রমিক নেতা আব্দুল মজিদ যেভাবে চায় ব্রিতে সবকিছু সেভাবেই হয়। কোনো কিছুই তার কনর্সান ছাড়া হয় না।

সমবেশে আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা আব্দুল মজিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজকের প্রতিবাদ সমাবেশ আমি অর্গানাইজ করিনি। বিজ্ঞানী সমিতি করেছে। আমি সমাবেশে ছিলাম, অসুস্থ থাকায় পরে চলে এসেছি।’ আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের ঘটনা অনেক আগের। সেটা তো তদন্ত হয়েছে।’

এদিকে প্রতিবাদ সমাবেশে অনেকটা বাধ্য হয়েই অংশ নিতে হয়েছে বিজ্ঞানী সমিতির সভাপতি আমিনা খাতুনকেও। তবে তিনি তা অস্বীকার করছেন। আর বিজ্ঞানী সমিতির পক্ষে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে কি-না?- এমন প্রশ্নের উত্তরে আমিনা খাতুন সারাবাংলাকে বলেন,‘আমাদের সমিতির পক্ষে প্রতিবাদ সমাবেশে আয়োজন করা হয়নি। যারা এটি বলছে, তারা ভুল বলেছেন। আপনি ব্যানারে দেখবেন লেখা রয়েছে, ধান গবেষণার সর্বস্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকবৃন্দ। আর সেখানে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সুনাম সমুন্নত রাখার স্বার্থে বিভিন্ন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা লেখা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ে ডিজির বিরুদ্ধে যে তদন্ত হচ্ছে তার বিরুদ্ধে তো সরকারি কর্মচারী হিসেবে আমরা কিছু বলতে পারি না। সেটা তদন্তনাধীন বিষয়। আর প্রতিষ্ঠানটির সুনামের বিষয়টি উল্লেখ থাকায় আমি অংশ নিয়েছি।’

 

ডিজির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ধান গবেষণার সুনামের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত কি-না?- এমন প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞানী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘এটি আমি বলতে পারব না। যারা আয়োজন করেছে তারা জানেন।’ তবে চাপ প্রয়োগ করে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিতে বাধ্য করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। আর নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রি’র এক কর্মকর্তা জানান, কৌশল হিসাবেই বিজ্ঞানী সমিতির সভাপতিকে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিতে হয়েছে।

এদিকে সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ড. আনছার আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ধান গবেষণায় গিয়েছিলাম অন্য কাজে। পরে দেখি ওই পরিস্থিতি। সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে অংশ নিয়েছি। আমি মনে করি, ওই প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেওয়া আমার পক্ষে যথার্থই ছিল। আমি পাঁচ বছর তার (ডিজি) সঙ্গে কাজ করেছি। তিনি আমরা কলিগ, তার সম্পর্কে আমি জানি।’

প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কী কাজ নেই? করোনার মধ্যে আজসহ মাত্র দুবার ধান গবেষণায় গিয়েছি।’ ডিজির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত এবং গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ ধান গবেষণার সুনাম ক্ষুণ্ন করে কি-না?- এর জবাবে তিনি বলেন, ‘তদন্ত হবে, তাতে বাধা নেই। যার মধ্যে কর্মস্পৃহা আছে, যিনি কাজ করছেন, যদি তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত না হয়- তাহলে ওই ব্যক্তির কর্মস্পৃহা বাধাগ্রস্ত হবে বলে আমি মনে করি। তাই সমাবেশে অংশ নিয়েছি।’

সমাবেশ আয়োজনে কলকাঠি নাড়া কিংবা ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে মন্তব্য জানতে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীররকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে তার আস্থাভাজনদের একজন সারাবাংলাকে জানান, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দিতেই এই সমাবেশ। ডিজি সমাবেশে অংশ নেননি। তিনি ঢাকায় ছিলেন।

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কৃষি মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) ড. মো. আবদুর রৌফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবাদ সমাবেশে তারা কী বলেছে, কী করেছে- সেটা তো আমার জানা নেই। এর জন্য যদি কোনো তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয় সেটি তারা দেখবে। তবে আমরাও বিষয়টি দেখার চেষ্টা করব। আর উনাকে (ধান গবেষণার ডিজি) জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের তারিখ নির্ধারিত হলে আপনাদের জানানো হবে।’

কৃষি মন্ত্রণালয় কৌশলী প্রতিবাদ টপ নিউজ ড. মো. শাহজাহান কবীর ডিজি তদন্ত কমিটি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ব্রি

বিজ্ঞাপন

রিশাদ-জাহানদাদে কুপোকাত সিলেট
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:২১

আরো

সম্পর্কিত খবর