মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন ধ্বংস করে দিচ্ছে সরকার: মির্জা ফখরুল
৩ নভেম্বর ২০২০ ২১:১৯ | আপডেট: ৪ নভেম্বর ২০২০ ০১:৩৪
ঢাকা: সরকার মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন ধবংস করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার স্মরণে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন আমরা একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে বাস করছি, যখন এই সরকার একটা দানবের মতো মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, গণতন্ত্র ধবংস করে দিচ্ছে তখন তাকে (সাদেক হোসেন খোকা) আমাদের প্রয়োজন ছিল। তাকে প্রয়োজন ছিল দেশনেত্রীকে মুক্ত করবার জন্য, দেশকে মুক্ত করবার জন্য, গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার জন্য।’
‘তিনি (সাদেক হোসেন খোকা) আজীবন এক সংগ্রামী মানুষ। তার এই হঠাৎ করে চলে যাওয়া আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে অনেকখানি ব্যাহত করেছে—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তার সাহস, তার ধৈর্য, তার দেশপ্রেম আমাদের প্রয়োজন ছিল’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই আজ শুধু তাকে স্মরণ নয়, তার যে কাজ, তার যে পথ চলা, তার যে সংগ্রাম সেটিকে সামনে রেখে সাহসিকতা সঙ্গে গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার চেষ্টা করি, দেশনেত্রীকে মুক্ত করবার চেষ্টা করি, সত্যিকার অর্থে দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করি।’
সাদেক হোসেন খোকার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার মনে আছে তার (সাদেক হোসেন খোকা) মৃত্যুর কিছুদিন আগে আমি নিউইয়র্ক গিয়েছিলাম তার সঙ্গে দেখা করার জন্যে। তখন তার শরীর খুব খারাপ হয়ে গেছে- বলা যায় তার শরীর কাঠ হয়ে গেছে। তিনি আমাকে তার উপরের ঘরে নিয়ে গেলেন- অনেক কথা বললেন। আমাকে তিনি কয়েকটা পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, আপনি কখনো ধৈর্য হারাবেন না, বিএনপির যে সংগ্রাম, গণতন্ত্রের যে সংগ্রাম- এই সংগ্রাম একদিনে শেষ হবে না, বেশ একটা দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রাম। এই সংগ্রামে সবচেয়ে যে জিনিস দরকার হবে তা হচ্ছে ধৈর্য আর সমস্ত মানুষকে সম্পৃক্ত করা, সমস্ত শক্তিকে সম্পৃক্ত করা আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে আরও বেশি করে প্রতিষ্ঠিত করা।’
করোনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি, ’আপনারা সুস্থ থাকুন— একথা বার বার করে এজন্য বলছি যে, আমাদের অনেক নেতা, অনেক কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে শুরু করে জেলা নেতারা পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেজন্য সবাই সুস্থ থাকার চেষ্টা করবেন।
দেশ গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সাদেক হোসেন খোকা সব সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আমাদের অত্যন্ত কষ্ট লাগে যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফেরিওয়ালারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বার বার হত্যা করছে। পঁচাত্তর সালে একবার হত্যা করেছে। আবার এখন গণতন্ত্রকে হত্যা করে আজকে গণতন্ত্রহীন এবং বিচারহীন একটি দেশে পরিণত করেছে।’
গেরিলারা যুদ্ধ না হলে দেশ স্বাধীন হতো না মন্তব্য করে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আজকে অনেকে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধ করেও নাই, দেখেনও নাই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ না হলে কনভেনশন ওয়ারে পাশের দেশের সীমানার মধ্য থেকে যুদ্ধ করলেও বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। দিস ইজ রিয়েলিটি।”
তিনি বলেন, ‘আমি-খোকা আমরা একসাথে মাঠে-ময়দানে গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করি। আমি সেই খোকাকে সালাম করি। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জীবনকে বাজী রেখে দেশমাতৃকার জন্য যে ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। দুর্ভাগ্য তার— একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও নিজের মাটিতে এসে প্রাণ ত্যাগ করার সুযোগটা হলো না এই সরকারের কারণে।’
সাদেক হোসেন খোকার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্কে কথা স্মরণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আগে-পরে, সামনে-পিছনে যে যাই বলুক, খোকাকে সত্যিকার অর্থে আমি ভালোবাসতাম। তার অনুপস্থিতি এখনো আমাকে পীড়া দেয়। বন্ধু হিসেবে আমাদের মধ্যে ছিল গভীর সম্পর্ক। আমাদের মধ্যে যে ধরনের সম্পর্ক ছিল, এই সম্পর্কটা আমি এখন কারোর মধ্যে দেখি না।’
দলের ঐক্যবদ্ধ শক্তি জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ আজকে যদি এই স্বৈরাচার সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হয় তাহলে সবাইকে পাশাপাশি থাকতে হবে, রাজনৈতিকভাবে থাকতে হবে। একে অপরকে ঠ্যাং মারার যে রাজনীতি এখন চলছে এটা দিয়ে নিজেদের পা ভাংগতে পারবো কিন্তু শত্রুর কোনো ক্ষতি করতে পারবো না, কিছুই করতে পারবো না। আমার এই কথা অনেক ব্যাখ্যা হতে পারে কিংবা বিভিন্ন কথা হতে পারে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বক্তব্য রাখেন।