আদালতে হাজির ‘নিহত’ মামুন, পুলিশি নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন আসামি
১ নভেম্বর ২০২০ ১৯:৫০
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে জীবিত ব্যক্তিতে হত্যা ও অপহরণের অভিযোগ এনে ছয় নির্দোষের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া পুলিশ ও সিআইডির তিন কর্মকর্তাকে তলব করেছেন বিচারক। আগামী ৫ নভেম্বর আদালতে উপস্থিত হয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিতে হবে। রোববার (১ নভেম্বর) এই আদেশ দেন নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র বিচারিক হাকিম ফারহানা ফেরদৌস।
শুনানিতে আসামি ছাড়াও যাকে খুন করা হয়েছিল দাবি করে মামলা হয়, সেই মো. মামুন হাজির ছিলেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী মামলাটি নিষ্পত্তি করে ছয় আসামির মুক্তির আবেদন করেন। এ সময় আসামিরা তাদের ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
মামুন আদালতকে জানান, তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে রাগ করে বাড়ি ছেড়েছিলেন। পরে প্ররোচনায় পরে তার বাবা নিখোঁজের দুই বছর পর অপহরণ করে হত্যার মামলা করেন।
আসামি তাসলিমা বলেন, ‘পুলিশ ছয় বছর ধরে হয়রানি করেছে আমার পরিবারকে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর রিমান্ডে এনে অত্যাচার করেছেন দারোগা মিজানুর রহমান। মামুনকে হত্যার মিথ্যা কথা স্বীকার করার জন্য মেরেছেন। খুন, অপহরণ না করে মিথ্যা মামলায় সাজা খেটেছি। যারা এই মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করেছে তাদের শাস্তি চাই।’
তাসলিমার ভাই সোহেল মিয়া বলেন, ‘এসআই মিজান রিমান্ডে নিয়ে গাছমা দিয়ে মুখ বাইন্ধা মারছে। সে মিথ্যা বলাতে চেয়েছিল যে, আমরা খুন করেছি। কিন্তু আমরা বলি মিথ্যা বলি নাই। আমরা স্বীকার করি নাই।’
মামুন ২০১৪ সালে নিখোঁজ হন। ২০১৬ সালের ৯ মে ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ এনে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন তার বাবা আবুল কালাম। এতে আসামি করা হয়-
তাসলিমা আক্তার, তার বাবা রহমত উল্লাহ, ভাই রফিক মিয়া, খালাতো ভাই মো. সাগর, সোহেল মিয়া ও ছাত্তার মোল্লাকে।
প্রথমে তদন্ত করে ছয় জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে প্রতিবেদন দেন ফতুল্লা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান। এতে তিনি এক চাক্ষুষ সাক্ষির জবানবন্দিও জমা দেন। এতে দাবি করা হয়, ওই নারী নিজে দেখেছেন, আসামিরা মামুনকে খুন করে শীতলক্ষ্যায় মরদেহ ভাসিয়ে দিয়েছে।
ফতুল্লা থানা পুলিশের পর মামলাটি তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারাও খুনের বিষয়টি নিশ্চিত করে। তবে মরদেহ খুঁজে না পাওয়ার কথা জানায় আদালতকে জানান। এর পর মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি।
২৩ মাস তদন্ত শেষে তারাও আদালতে অপহরণের প্রমাণ হাজির করে প্রতিবেদন দেয়। এর শুরু হয় বিচার। কিন্তু গত ৩০ সেপ্টেম্বর শুনানি চলাকালে মামুন নিজেই এক মাস আগে হাজির হন বিচারকের সামনে। সৃষ্টি হয় চাঞ্চল্য। এরইমধ্যে মিথ্যা অভিযোগে দেড় বছর কারাভোগ করেছেন তাসলিমা। তার বাবা ও ভাইসহ আরও তিন জন বিভিন্ন মেয়াদে ছিলেন জেলহাজতে।
এক মাস আগে মামুন ফিরে আসার পর আদালত তদন্ত কর্মকর্তা ফতুল্লা থানার উপপরির্দশক (এসআই) মিজানুর রহমান, সিআইডির উপপরির্দশক জিয়াউদ্দিন উজ্জ্বল ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দে্রয়ার নির্দেশ দেয়। ৩ কর্মকর্তা আদালতে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর মামলার শুনানি হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এমদাদ হোসেন সোহেল বলেন, ‘আমরা আদালতে ৬ জনের অব্যাহতির জন্য আদালতে আবেদন করেছি। আদালতকে বলেছি, যেহেতু ভিকটিমকে উদ্ধার হয়েছে সেহেতু মামলাটি চলতে পারে না। আদালত বক্তব্য শুনে পুলিশ কর্মকর্তাকে সশরীরে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।’
অপহরণের অভিযোগ টপ নিউজ তিন কর্মকর্তাকে তলব পুলিশ ও সিআইডি প্রতিবেদন বিচারক