সংবিধানের ৭০ ধারায় একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়: জি এম কাদের
২৯ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৪৬ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ২২:২০
ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে সংবিধান থেকে ৭০ ধারা তুলে দিতে হবে। এই ৭০ ধারায় একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা স্বৈরতন্ত্রের পর্যায়ে পরে। এতে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা থাকে না।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় জাপা চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। ‘উপজেলা দিবস’ উপলক্ষে জাতীয় ছাত্রসমাজ এই সভার আয়োজন করে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘৭০ ধারার কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দলীয় প্রধান সরকার প্রধান হন, এতে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো সংসদ সদস্য ভোট দিতে পারেন না। দলীয় প্রধান যা বলেন, তাই কার্যকর হয়। এতে আর কোনো জবাবদিহিতা থাকে না, ফলে সুশাসন নিশ্চিত হয় না। সুশাসন নিশ্চিত করতে ৭০ ধারা তুলে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’
বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্বার্থেই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানিয়ে বিরোধী দলের এই উপনেতা বলেন, ‘প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর নয়। তাই ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে দেশের সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে সংসদে। বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় শুধু বড় দুই থেকে তিনটি দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের মতই যদি সারাদেশের ভোটের অনুপাতিক হারে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় তাহলে গণমানুষের আশা-আকাংখার প্রতিফলন হবে।’
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, ‘পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বপ্নের ফেডারেল সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। দেশে ৮টি প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে গণমানুষের প্রত্যাশা নিখুঁতভাবে পূরণ করতে পারবে। এতে প্রশাসন, বিচার, স্বাস্থ্যসহ সকল সেবা নিশ্চিত হবে। গণমানুষের ভোটের রায় সবসময় মঙ্গলময়। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে কখনো ভুল করে না। ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে ভোটে কালো টাকার খেলা বন্ধ হবে।’
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উপনিবেশিক প্রথা ভেঙে অনেক গণমানুষের কল্যাণে অনেক সংস্কার করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিনি প্রকৃত গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই গণমানুষের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিনে আমলাদের পরিচালিত করে ন্যায়বিচার ভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।’
১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর একটি আদেশে তৎকালীন বিএনপি সরকার গণমানুষের প্রত্যাশার উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় উল্লেখ করে গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, ‘কিন্তু পরবর্তী সরকার গণদাবি মেনে আবারো উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থা পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু উপজেলা ব্যবস্থা পূনঃপ্রতিষ্ঠায় সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বর্তমান উপজেলা ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষকে বোকা বানানো হয়েছে, সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।’
এসময় জাতীয় ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন প্রতি বছর ২৩ অক্টোবরকে জাতীয়ভাবে ‘উপজেলা দিবস’ পালন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি ইব্রাহীম খান জুয়েলের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এসময় বক্তব্য রাখেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, আলমগীর সিকদার লোটন, ভাইস চেয়ারম্যান- নূরুল ইসলাম তালুকদার, উপদেষ্টা গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী, ফখরুল আহসান শাহজাদা, মো. বেলাল হোসেন, এ কে এম আশরাফুজ্জামান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, এনাম জয়নাল আবেদীনসহ অন্যরা।
৭০ ধারা একনায়কতন্ত্র গোলাম মোহাম্মদ কাদের জবাবদিহিতা টপ নিউজ স্বৈরতন্ত্র