Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুপার সেজে বানান ভুয়া বিল, উপপরিচালক হয়ে দেন অনুমোদন


২৯ অক্টোবর ২০২০ ১০:১৩ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ১৩:০৫

প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, রংপুর। ছবি: গুগল ম্যাপ

‘প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) সুপারের চেয়ারে বসে তিনি মনগড়া সব ভুয়া বিল তৈরি করেন। আর উপপরিচালকের চেয়ারে বসে আবার তিনিই সেই ভুয়া বিলের অনুমোদন দেন। এভাবে গত ৪ বছরে তিনি প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমন কোনো খাত নেই যেখান থেকে তিনি সরকারি অর্থ লুট করেননি। শিক্ষক বদলিতেও বদলি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে অর্থের বিনিময়ে বদলি করেন। যারা টাকা দেন না, তাদের ফাইল পাঠিয়ে দেওয়া হয় অধিদফতরে।’

বিজ্ঞাপন

যেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ তিনি হলেন রংপুর পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট খোন্দকার মো. ইকবাল হোসেন। বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক পদে।

অভিযোগ রয়েছে, ভুয়া-বিল ভাউচার তৈরিতে রাজি না থাকায় উচ্চমান সহকারী মো. সামসুদ্দিনকে  তিনি অফিসে আসতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তার পরিবর্তে সুপারের ইচ্ছেমাফিক সব ভুয়া-বিল ভাউচার তৈরি করে দেন কম্পিউটার অপারেটর রফিকুল ইসলাম। এই কাজে সহযোগিতা করেন অফিস সহায়ক গোলজার হোসেন।

জানা যায়, রংপুর পিটিআইতে বছরে পানির বিল বাবদ বরাদ্দ ৯০০০ টাকা। যদিও পিটিআইতে পানির ডিপ-টিউবওয়েল আছে। অথচ পানির বিল ভুয়া ভাউচার তৈরি করে ওই টাকাও আত্মসাৎ করেছেন পিটিআই সুপার। ফটোকপি বাবদ বরাদ্দ ৯০০০ টাকা। অফিসে নিজস্ব ফটোকপি মেশিন আছে। এ খাতে কোনো টাকাই খরচ করেননি। সুইপারের নামে বছরে ৩০০০ টাকা বরাদ্দ। সেই টাকাও ভুয়া বিল ভাউচার করে তুলে ফেলা হয়েছে।

রুটিন মেইনটেইন্সের জন্য গত একবছরে মোট তিন বারে দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ সেই খাতেও হয়নি কোনো কাজ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার নীতিমালা অনুযায়ী রুটিন মেইনটেইনসের নির্দিষ্ট কমিটির মাধ্যমে কাজ করতে হয়। কিন্তু সুপার ইকবাল সেসবের কোনো তোয়াক্কাই করেননি। কোনো কাজ না করেই তিনি একাই এসব টাকা তুলে নিয়েছেন।

পিটিআই সংলগ্ন ‘পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে’র নামে দেওয়া বরাদ্দের ৫০ হাজার টাকারও কোনো কাজ করেননি। বই কেনার জন্য ১ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। টাকা তোলা হলেও কেনা হয়নি কোনো বই।

অন্যদিকে, গত অর্থবছরে পিটিআইতে ভ্রমণ ব্যয় বাবদ অফিসারদের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও কর্মচারীদের জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। অভিযোগ রয়েছে, ভ্রমণে অফিসের গাড়ি ব্যবহার করার পরও তিনি বরাদ্দের পুরোটাই তুলে আত্মসাৎ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

ইনস্ট্রাক্টর ও গাড়ি চালকরা জানান, পিটিআইয়ের ডিপিএড প্রশিক্ষণার্থীদের বই পিটিআই এর লাইব্রেরি পর্যন্ত সরকারিভাবে পৌঁছে দেওয়া হয়। এবছর ৫০ হাজার টাকা বই বহন বাবদ বরাদ্দ ছিল। কিন্তু বই সরকারিভাবে পৌঁছে দেওয়ায় বরাদ্দের অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও ভুয়া বিল দেখিয়ে সেই অর্থও হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। মোটরসাইকেল মেরামত বাবদ ৩২ হাজার টাকা ও মাইক্রোবাস মেরামত বাবদ ৮৭ হাজার টাকা বরাদ্দও কাজ না করেই তুলে নিয়েছেন সুপার।

এছাড়া, গত অর্থবছরে মনিহারি বাবদ ৯৭ হাজার টাকা, কম্পিউটার বাবদ ৮৩ হাজার ৩০০ টাকা, অন্যান্য যন্ত্রপাতি বাবদ ৩৮ হাজার ৬০০ ও  কনটিজেনসি বাবদ ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছিল। এই টাকা দিয়ে কোন কম্পিউটার, যন্ত্রপাতি বা অফিস সরঞ্জাম কেনা বা মেরামত করা হয়নি। আন্তঃপিটিআই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বরাদ্দ ছিল ৪৫ হাজার টাকা। এত টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে মাত্র ১৫০ টাকার মেডেল বাবদ মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইন্টারনেট বাবদ ৩২ হাজার ২৪০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এ খাতে বাস্তবে খরচ হয় ৭ হাজার টাকা।

আরও অভিযোগ, পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদের মোটরসাইকেলের তেলের ছয় মাসের বিলে স্বাক্ষর নিয়ে তিন মাসের টাকা দিয়েছেন সুপার। ইন্সাট্রাকটরদের বলা হয়েছে, করোনার মধ্যে যেহেতু তারা অফিস করেননি তাই অর্ধেক দেওয়া হলো। আর বাকি অর্ধেক টাকা তিনি একাই মেরে দিয়েছেন। ডিডি অফিসে সাত লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে ঠিকাদারদের মাধ্যমে কিছু আসবাবপত্র কেনার জন্য। ঠিকাদার ২০টা চেয়ার, আলমারি ৬টা, ফাইল কেবিনেট ৬টা, আরও কিছু কাজ করেছেন। আর ডিডির নামে পৃথকভাবে যে সব বরাদ্দ এসেছে সেই টাকা দিয়ে কিছু না কিনে ঠিকাদার যেগুলো কিনেছেন সেগুলোই কুমিরের বাচ্চার মতো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবাইকে দেখাচ্ছেন তিনি।

পিটিআই সূত্রে জানা গেছে, এই সুপার গত ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ১৪১/৮নং স্মারকে ভারতে সংক্ষিপ্ত একটা প্রশিক্ষণে ছিলেন। ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল তিনি কর্মস্থল ত্যাগ করেন। আগের দিন ও পরের দিন ধরলে ১০ দিন তিনি ভারতে ছিলেন। অথচ ভারতে অবস্থানকালীন রংপুর পিটিআইতে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে নিজের নাম দিয়ে ভাতাও উত্তোলন করেছেন তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে রোববার (২৫ অক্টোবর) রংপুর পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট খোন্দকার মো. ইকবাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। আমার অফিসের কেউ একজন অবৈধ সুবিধা করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। সাংবাদিকদের মিথ্যা অভিযোগ করে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’ সরেজমিনে তদন্ত করলে পুরো বিষয়টি পরিস্কার হওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।

উপপরিচালক হয়ে দেন অনুমোদন রংপুর সুপার হয়ে বানান ভুয়া বিল

বিজ্ঞাপন

চমক জয়া আহসান!
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:০৫

আরো

সম্পর্কিত খবর