Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধর্ষণ মামলার পর পলাতক পূর্বাশা’র এমডি, পাশে আছেন ‘গুণধর’ ২ ছেলে


২৮ অক্টোবর ২০২০ ১৯:৫৯ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ১৩:০০

ঢাকা: এক নারীকে আড়াই বছর ধরে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে ধর্ষণ করার অভিযোগে মামলা হওয়ায় আত্মগোপনে গেছেন পূর্বাশা কম্পোজিট টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আলী হোসেন। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে গত দশ দিন ধরে তিনি বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মামলার পর প্রথম কয়দিন গ্রামের বাড়ি ভালুকায় অবস্থান করলে পুলিশের তৎপরতা টের পেয়ে সেখান থেকেও গা ঢাকা দিয়েছেন আলী হোসেন।

বিজ্ঞাপন

আলী হোসেনের পারিবারিক সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে, আলী হোসেনকে মামলার ঝামেলা থেকে বাঁচাতে দায়িত্ব নিয়েছেন তার দুই ছেলে নাসির আল হোসেন সুজন ও নায়েমুল আলী হোসেন শোভন। তাদের সহযোগিতায় আত্মগোপনে থাকছেন আলী হোসেন। এমনকি পরিবার সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন আসামি। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়িক প্রয়োজনেও আলী হোসেন কথা বলছেন কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও।

আলী হোসেনকে এলাকায় দেখেছেন এমন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ১৯ অক্টোবর উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হওয়ার পর ওইদিনই ঢাকা গ্রামের বাড়ি জামিরদিয়া (মাস্টারবাড়ি) যান আলী হোসেন। সেখানে পূর্বাশা সিএনজি স্টেশন নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও আছে তার। এলাকায় গিয়ে আলী হোসেন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবসাও তদারকি করেন।

জানা যায়, পরে বড় ছেলে সুজনের পরামর্শে ভালুকা থেকে চলে যান তিনি। তাকে ধরতে ভালুকায় অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। তবে তার আগেই তিনি সটকে পড়েন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলী হোসেন আত্মগোপনে যাওয়ার পর ঢাকায় ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তার ছোট ছেলে শোভন ও ময়মনসিংহে ব্যবসা দেখাশোনা করছেন তার বড় ছেলে সুজন। এর মধ্যে শোভন দায়িত্ব নিয়েছেন ঢাকার ঝামেলা মোকাবিলার আর সুজন দায়িত্ব নিয়েছেন ভিকটিম নারীর ওপর ‘চাপ সৃষ্টির’ মাধ্যমে সমাধানে আসার। এ জন্য বিভিন্ন লোক ধরাধরি শুরু করেছেন সুজন। এদের মধ্যে কয়েকজন শিল্পপতি-ব্যবসায়ীও রয়েছেন, যারা ওই নারী ও তার আত্মীয়-স্বজনকে হুমকি-ধমকির পাশাপাশি তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।

 

আরও পড়ুন: ৩ বছর ধরে ধর্ষণ, পূর্বাশা গ্রুপের এমডির বিরুদ্ধে মামলা

বিজ্ঞাপন

ছবিতে আলী হোসেনের দুই ছেলে সুজন ও শোভন

 

আরও পড়ুন: ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ, আত্মগোপনে পূর্বাশা’র এমডি

আলী হোসেনের অফিসিয়াল সূত্রও জানিয়েছে, আত্মগোপনে থাকলেও অফিসিয়াল কাজকর্মের ব্যাপারে তিনি নতুন সিমকার্ডের মাধ্যমে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। নিয়মিত ডিজিএম ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তিনি। এমনকি তার পরিবার সদস্যদের সঙ্গেও সুযোগ বুঝে যোগাযোগ করছেন তিনি।

এ বিষয়ে আলী হোসেনের ছোট ছেলে শোভন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার বাবা একজন সৎ মানুষ। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।’ এ সময় তিনি দাবি করেন, তিনি মামলার বাদীকে চেনেন। তার বাবার অফিসে ওই নারী আসা-যাওয়া করতেন। ওই নারী চাকরি পাওয়ার জন্য আসতেন বলে শোভন জানান।

তবে ভিকটিম নারীর দাবি, তিনি প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কখনও পূর্বাশা এমডির কাছে চাকরি কিংবা এ সংক্রান্ত কোনো আলোচনা হয়নি।

মামলার বাদী জানান, তিনি অধিকাংশ দিনই পূর্বাশা কম্পোজিট টেক্স লিমিটেডের করপোরেট অফিসে এমডির রুমে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বিষয়টি অফিসের কয়েকজন স্টাফও জানতেন। তিনি চাকরি হারানোর ভয়ে তারা কোনো টুঁ-শব্দ করেননি। আলী হোসেন তার অফিসের সিসি ক্যামেরা ও ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে গোপনে ভিডিও ধারণ করে সেগুলো প্রকাশের ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করেছেন। তিনি জিম্মি হয়ে পড়েছিলেন। আলী হোসেনের কথামতো না চলায় একাধিকবার শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন তিনি। তবে মান-সম্মানের ভয়ে চুপ ছিলেন ওই নারী।

‘এখন মানসিক ও শারীরিক নিপীড়নের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’ বলেন মামলার বাদী।

এদিকে আলী হোসেনের বড় ছেলে সুজন বলেন, ‘ওই নারী মামলা করেছেন। এ বিষয়ে তার কাছ থেকে শুনতে পারেন, আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’

‘আপনার বাবা তো আপনাদের সহযোগিতায় আত্মগোপনে আছেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাবার সঙ্গে ২০ তারিখের পর আর যোগাযোগ নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না আর।’

উল্লেখ্য যে, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে আড়াই বছর ধরে ওই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে আলী হোসেনের (৬০) বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২০ এর ৯(১) সহ ৩১৩/৫০৬ পেনাল কোড ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলার এজাহারে ওই নারী উল্লেখ করেছেন, তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গার্মেন্টস পণ্য প্রতিষ্ঠান পূর্বাশা গ্রুপের এমডি আলী হোসেন ওই কোম্পানির করপোরেট গ্রাহকদের মধ্যে একজন। সেই সূত্রে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৯ জুন প্রথম ৭ নম্বর সেক্টরের লেক ড্রাইভ রোডের ৬৮ নম্বর বাসার ষষ্ঠ তলায় বিকেল ৫টায় সাক্ষাৎ হয়। ওইদিন তার সঙ্গে ব্যবসা সংক্রান্ত কথা হয়। কথা বলার একপর্যায়ে আলী হোসেন তাকে জাপটে ধরেন। নিজেকে বাঁচাতে ওই নারী চেষ্টা করেন। ওই সময় চেয়ারে ব্যথা পেয়ে ওই নারী পড়ে যান। পায়ে আঘাত পেলেও আলী হোসেন তাকে প্রথম দফায় ধর্ষণ করেন।

এরপর ২০১৮ সালের ৫ জুলাই ওই নারীকে ফোন করে জানায়, ১৯ জুনের ঘটনার ছবি ও ভিডিও করা হয়েছে। কথামতো না চললে তার কাছে থাকা ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর ২০১৮ সালের ২১ জুলাই তার অফিসে গিয়ে শারীরিক অবস্থা খারাপ জানালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে টেস্ট করালে প্রেগনেন্সি পজিটিভ ধরা পড়ে। এরপর চাপ দিয়ে গর্ভপাত করায় আলী হোসেন।

একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় পুনরায় ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ফের ধর্ষণ করেন আলী হোসেন। এরপর ২০১৯ সালের ১ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে ছবি ও ভিডিও স্বামীর কাছে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে আবারও ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার পর ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট প্রেগনেন্সি পজেটিভ ধরা পড়লে আবারও গর্ভপাত করায় আলী হোসেন।

এরপর চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায়, ৬ মার্চ ও ১৩ মার্চ সাড়ে ৪টায় ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। তার কথামতো না চলায় প্রায় সময়ই বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন আলী হোসেন। তার কাছে থাকা ছবি ও ভিডিও ওই নারীর স্বামীকে লোক-মারফত ফোন করে জানিয়ে দেন। ফলে ওই নারীর ১৭ বছরের সংসারও ভেঙে গেছে আলী হোসেনের কারণে।

ভিকটিম নারী বলেন, ‘আলী হোসেন আমার সংসার নষ্ট করেছে। সন্তানের ভবিষ্যত নষ্ট করেছে। তার উপযুক্ত শাস্তি আশা করি।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আলী হোসেনের তিনটি মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

আলী হোসেনের বিরুদ্ধে এই মামলার তদন্ত করছেন উত্তরা পশ্চিম থানার সাব-ইন্সপেক্টর মাসুদা। তিনি বলেন, ‘ওই আসামি পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে সম্ভাব্য জায়গায় অভিযান চলছে। তার বাসাতেও আমরা গিয়েছি। আশা করি খুব শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।’

উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘পুলিশ মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানাতে পারব।’

আলী হোসেন টপ নিউজ ধর্ষণ ধর্ষণ মামলা পূর্বাশা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর