আজ মহানবমী, আনন্দের মাঝে বিষাদের সুর
২৫ অক্টোবর ২০২০ ০৯:২৩ | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২০ ১৪:১৩
ঢাকা: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আজ মহানবমী। কাশফুলের ঝাঁকে আজ মন খারাপের হাওয়া, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবে বাজতে শুরু করেছে বিষাদের সূর৷ আর মাত্র এক দিন পরেই মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে যাবেন দুর্গতিনাশিনী দেবীদুর্গা। পেছনে ফেলে যাবেন ভক্তদের চার দিনের আনন্দ-উল্লাস আর বিজয়ার দিনের অশ্রু। তাই বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তদের মনে আজ একটাই আকুতি- না পোহায় যেন এই নবমী নিশি।
একদিকে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের আশঙ্কা আর অন্যদিকে কার্তিকের নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি। দুইয়ে মিলে এবার আনন্দ ভক্তদের অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে। কিন্তু তাতে তো আর বিপদনাশিনী মায়ের ধরণীতে আগমনকে ভুলে যাওয়া যায় না। আর তাই বিষাদের সুর বাজলেও মহানবমীতে নানা আচার-রীতি পালনের মধ্য দিয়ে পূজা শেষে যথারীতি থাকবে অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ। মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে যাবেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা আর একদিন পরেই- এমন বিশ্বাস নিয়ে এই মহানবমীর দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মেতে উঠবেন মায়ের আরাধনায়। বিসর্জনের আগে আরতি ও বন্দনায় মায়ের বিদায়ের মুহূর্তকে মাতিয়ে তুলতে চাইবেন সকল ভক্তরা।
রোববার (২৫ অক্টোবর) সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার মহানবমী। এ দিন সকাল সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে বিহিত পূজার মাধ্যমে পালিত হবে মহানবমী। সনাতন ধর্মমতে এই নবমী পূজার আছে বিশেষ মাহাত্ম্য। এই দিন অগ্নিকে প্রতীক করে সব দেবদেবীকে আহুতি দেওয়া হয়। অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। শাস্ত্র অনুযায়ী মহানবমী তিথি অন্যান্য তিথির তুলনায় ‘শুভ’। তাই এই তিথিতে দেবীর আরাধনা করলে পূণ্য লাভ হয়। নবমীর পূণ্য তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে পৃথিবীতে শুভ শক্তির প্রকাশ ঘটান দেবী দুর্গা। নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। পুরাণ মতে, অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী শুরুর ২৪ মিনিট অর্থাৎ মোট ৪৮ মিনিট সময়কে সন্ধিক্ষণ বলা হয়। আর এই সন্ধিক্ষণেই আয়োজিত হয় সন্ধি পুজো। এই সময়ই নাকি চিন্ময়ী দুর্গা পূজিতা হন মুণ্ডমালিনী চতুর্ভূজা চামুণ্ডারূপে। কারণ ঠিক ওই সময় দেবী দূর্গার ললাট থেকে জন্ম নেওয়া চামুণ্ডা, অসুর শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেছিলেন বলে পুরাণে বর্ণিত আছে। এই মাহেন্দ্রক্ষণে সন্ধিপুজোর রীতি বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে।
একদিকে পুজোর শেষদিনের আনন্দ আর অন্যদিকে একদিন পরেই ভক্তদের বিদায় জানিয়ে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে যাওয়ার ক্ষণ। মূলত মহানবমীর এই দিনেই ভক্তদের মনের অচিনপুরে কেউ যেন বাজিয়ে দিয়ে যায় বিসর্জনের বাঁশি। শারদ বিসর্জনের প্রাক্কালে ধুনোর গন্ধের মত চারিদিকে ছড়িয়ে যায় নিস্তব্ধতার হাতছানি। ‘যেও না নবমী-নিশি,না হইও রে অবসান’ নবমীর দিন ভক্তরা এমন আগ্রহ নিয়েই পালন করে কারণ আর একদিন পরই বিজয়া দশমী! মাকে বিদায় দেবার পালা।
এর আগে শনিবার (২৪ অক্টোবর) কল্পারম্ভ আর সন্ধিপূজার মধ্যদিয়ে শেষ হয় সনাতম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার ‘মহাঅষ্টমী’। এদিন ষোড়শ উপাচারে অনুষ্ঠিত হয় দেবীর পূজা। ১০৮ পদ্ম এবং প্রদীপ দিয়ে দুর্গতিনাশিনী দুর্গার আরাধনা করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু দর্শনার্থী অবশ্য মন্দিরে উপস্থিত হয়ে ভোগ নিবেদন আর উপবাসে অঞ্জলি গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে ভার্চুয়াল ভাবেও ভক্তরাও এদিন অঞ্জলি গ্রহন করেন।
করোনা মহামারীর কারণে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে এবার সরাসরি টেলিভিশনে এবং ফেসবুকে অঞ্জলি দেয়ার ব্যবস্থার কথা আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। ভক্তদের বাসায় বসেও অঞ্জলি নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এবার অনেক ভক্তই বাসায় বসে অঞ্জলি গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য করোনা মহামারীর কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে এবছর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে পূজামন্ডপ। থাকছে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা। জনসমাগমের কারনে সাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই দুর্গা পূজায় আগেই প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
চন্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। অগামী কাল সকালে বিহিত পূজার মাধ্যমে মহানবমী পূজা এবং সোমবার সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। এবার দেবী এসেছেন দোলায়, যাবেন হাতিতে চড়ে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সর্বশেষ দেওয়া তথ্য অনুসারে, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ২শ ২৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার মন্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। গতবছরের তুলনায় এবার ১হাজার ১শ ৭৫ টি মন্ডপে পূজা কম হচ্ছে। অন্য দিকে ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা ২শ ৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিলো ২শ ৩৭টি। আর ঢাকা জেলায় পুজা হচ্ছে ৭শ ৪০টি।