কবরস্থানে গিয়ে ‘জীবিত’ হয়ে ওঠা সেই নবজাতককে বাঁচানো গেল না
২১ অক্টোবর ২০২০ ২৩:৫৯ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০ ০০:০৯
ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মৃত ঘোষণার পর দাফনের সময় নড়েচড়ে ওঠা সেই নবজাতককে বাঁচানো যায়নি। কবরস্থান থেকে হাসপাতালে ফিরে আসার পর চিকিৎসকদের ছয় দিনের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে মারা গেছে শিশুটি।
বুধবার (২১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
নবজাতকটির বাবা ইয়াছিন এবং ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া সারাবাংলাকে শিশুটির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন-
- দাফনের সময় কেঁদে উঠলো ‘মৃত’ নবজাতক
- ‘মৃত’ নবজাতক জীবিত হয়ে ওঠার ঘটনায় তদন্ত কমিটি
- ‘মৃত নবজাতক জীবিত’ হয়ে ওঠায় চিকিৎসকদের ব্যর্থতা রয়েছে: ঢামেক
- দাফনের আগে নবজাতকের জীবিত হয়ে ওঠা মিরাকল: ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক
বুধবার রাতে বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশুটির শারীরিক অবস্থা বরাবরই আশঙ্কাজনক ছিল বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। আজ (বুধবার) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকরা।
নবজাতকটির বাবা ইয়াছিন সারাবাংলাকে বলেন, ডাক্তাররা গত কয়েকদিনে অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো গেল না। ডাক্তাররা বলে দিয়েছেন, ও মারা গেছে।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন ও হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জী বরাবরই জানিয়ে আসছিলেন, অত্যন্ত অপরিণত অবস্থায় শিশুটি জন্ম নিয়েছে। তাকে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হলেও তার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
এর আগে, গত বুধবার (১৪ অক্টোবর) ৬ মাস ১৬ দিনের অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী শাহিনুর বেগমকে ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করেন ইয়াছিন। ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তির পর সেখানকার চিকিৎসকরা তার স্ত্রীকে দেখেন এবং জানান তার রক্তচাপ অনেক বেশি। বাচ্চাটি ডেলিভারি না করালে তার প্রেশার কমবে না। ওই অবস্থায় তাকে জরুরিভিত্তিতে ডেলিভারি করানো হয়। তবে হৃদস্পন্দন না থাকায় শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
শুক্রবার সকালে শিশুটিকে নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে ভর্তি করাতে গেলে প্রয়োজনীয় টাকা না থাকায় ইয়াছিন তাকে রায়েরবাগ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করতে নিয়ে যান। দাফনের আগে কবর খোঁড়ার শেষ পর্যায়ে হঠাৎ কান্নার শব্দ পেলে তারা বুঝতে পারেন, শিশুটি নড়াচড়া করছে। পরে তাকে ফের ঢামেক হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়।
এ ঘটনায় শুক্রবার হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন— হাসপাতালের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শিখা গাঙ্গুলি, অ্যানেসথেশিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুব্রত কুমার মন্ডল ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন)।
পরে তদন্ত কমিটির সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কথা বলে শনিবার (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৃত’ নবজাতকের ‘জীবিত’ হয়ে ওঠার এই ঘটনাটি ‘মিরাকল’। পরে মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর হাসপাতাল পরিচালক জানান, এ ঘটনায় চিকিৎসকদের ব্যর্থতা খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে চিকিৎসক ও নার্সদের চেষ্টায় কোনো ঘাটতি ছিল না।
কবরস্থানে গিয়ে জীবিত টপ নিউজ ঢামেক হাসপাতাল নবজাতক মৃত ঘোষণা