লুইজ গ্লাকের হাত ধরে ২৭ বছর পর সাহিত্যের নোবেল যুক্তরাষ্ট্রে
৮ অক্টোবর ২০২০ ১৮:১৭ | আপডেট: ৯ অক্টোবর ২০২০ ০০:০২
৭৭ বছর বয়সী মার্কিন কবি লুইজ গ্লাক জিতে নিয়েছেন এ বছরের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। নোবেল কমিটি বলছে, ‘অভ্রান্ত কাব্যিক কণ্ঠস্বর’ যা ‘পরম সৌন্দর্যে’র সঙ্গে মিলিত হয়ে ‘ব্যক্তির অস্তিত্বকে সার্বজনীনতা’র মাত্রা দেয়— এমন কাব্যগুণের কারণেই নোবেল জিতে নিয়েছেন গ্লাক। ষষ্ঠদশ নারী সাহিত্যিক হিসেবে নোবেল জিতলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে এ বছরের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হিসেবে গ্লাকের নাম ঘোষণা করা হয়। আর এর মাধ্যমে ২৭ বছর পর সাহিত্যের নোবেল গেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এর আগে টনি মরিসন সবশেষ মার্কিন সাহিত্যিক হিসেবে সাহিত্যে নোবেল জয় করেছিলেন ১৯৯৩ সালে।
গ্লাক দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সাহিত্য জগতের পুরোধা এক ব্যক্তিত্বের স্থান নিয়ে আছেন। শৈশব আর পারিবারিক আবহ ঘুরে ফিরে এসেছে তার কবিতায়। গ্রিক ও রোমান মিথলজির বিভিন্ন উপাদান নিয়েও ভাঙাগড়ার কাজ তার কবিতায় স্পষ্ট হয়ে এসেছে। ন্যাশনাল বুক ওয়ার্ড ছাড়াও পুলিৎজার পুরস্কারও রয়েছে গ্লাকের ঝুলিতে।
লুইজ গ্লাকের কাব্যকে ‘অকপট ও আপসহীন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন নোবেল পুরস্কার কমিটির চেয়ার অ্যান্ডারস অলসন। তিনি বলছেন, তার কবিতাগুলো একইসঙ্গে ‘রসবোধে পরিপূর্ণ এবং বুদ্ধিদীপ্ত’। ‘ফেইথফুল অ্যান্ড ভার্চুয়াস নাইট’ থেকে শুরু করে ‘দ্য ওয়াইল্ড আইরিস’সহ গ্লাকের ১২টি কাব্যগ্রন্থের প্রতিটিই ‘স্পষ্টতা অর্জনের নিরন্তর লড়াই’য়ে নিমগ্ন। যেকোনো মতবাদে সহজেই আস্থা স্থাপন না করার বৈশিষ্ট্যের জন্য গ্লাককে এমিলি ডিকিনসনের সঙ্গেও তুলনা করেছেন অলসন।
গ্লাকের বিশাল কাব্যভাণ্ডারের মধ্যে পুলিৎজার বিজয়ী ‘দ্য ওয়াল্ড আইরিস’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘স্নোড্রপ’ কবিতাটি উদ্ধৃত করেছে নোবেল কমিটি। শীতের শুষ্কতা-রুক্ষতা শেষে যেমন প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পায়, সেই স্মৃতির বন্দনা গ্লাক এই কবিতায় করেছেন। গ্লাক লিখেছেন—
‘বেঁচে থাকার প্রত্যাশা করি নাই
তবু বিস্ময় দিয়েছে পৃথিবী
কখনো ভাবি নাই
আবার মেলব চোখ, অনুভবের আলপনায়—
এই স্যাঁতস্যাঁতে পৃথিবীর বুকে আমার শরীর
ফের উঠবে জেগে, সেই স্মৃতি মনে করে
দীর্ঘ শীতের শেষের আলোয়, বসন্তের আগমনী শুনে
যেভাবে জেগে ওঠা যায়’
কানেক্টিকাটের ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক গ্লাক। ১৯৬৮ সালে প্রকাশ পায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ফার্স্টবর্ন’। এরপর দু’হাত ভরে লিখে গেছেন। ১২টি কাব্যগ্রন্থের পাশাপাশি কাব্য সংকলনও রয়েছে তার। এর মধ্যে ‘অ্যাভারনো’ সংকলটিতে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে রেখেছে গ্রিক মিথোলজির দুই চরিত্র পারসিফোনি আর হেডিস।
নোবেলজয়ী সাহিত্যিকদের মধ্যে কবির সংখ্যা বেশ কম। লুইজ গ্লাকের আগে সবশেষ কবি হিসেবে ২০১১ সালে নোবেল জিতেছিলেন সুইডেনের টমাস ট্রান্সট্রমার।