বেগমগঞ্জের ওই নারীকে ২ বার ধর্ষণ করেছিলেন দেলোয়ার, অবশেষে মামলা
৭ অক্টোবর ২০২০ ১৫:০৬ | আপডেট: ৭ অক্টোবর ২০২০ ১৬:৫৬
নোয়াখালী: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিওধারণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত কথিত দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেনের নামে মামলা করেছেন ওই নারী। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা এই মামলায় দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন তিনি। জানিয়েছেন, এর আগে দুই দুইবার তাকে ধর্ষণ করেছেন দেলোয়ার।
মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) রাতে ওই নারী বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় দেলোয়ারের সহযোগী আবুল কালামকেও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ এনে আসামি করা হয়েছে। বুধবার (৭ অক্টোবর) বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ চৌধুরী মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে নির্যাতনের শিকার ওই নারী অভিযোগ করেছেন, গত ২ সেপ্টেম্বর দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার আগেই দেলোয়ার তাকে দুই বার ধর্ষণ করেছিলেন। এর মধ্যে একবার ধর্ষণ করা হয় প্রায় একবছর আগে। দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করা হয় রমজান মাসের কিছুদিন আগে। দ্বিতীয়বার ধর্ষণের সময় দেলোয়ারের সহযোগী কালামও তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন-
- গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন: দেলোয়ার ও বাদল গ্রেফতার
- বেগমগঞ্জের সেই দেলোয়ার অস্ত্র মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে
- বেগমগঞ্জে নারী নির্যাতন: মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি
- গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনে জড়িত ৯ জন চিহ্নিত, গ্রেফতার ৪
- বেগমগঞ্জে নারী নির্যাতন: মেম্বার, মামলার ৫নং আসামি গ্রেফতার
- নোয়াখালীতে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে বখাটেদের মারধর, গ্রেফতার এক
- বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নির্যাতন: গ্রেফতার ২ আসামি ছয় দিনের রিমান্ডে
- শারীরিক সম্পর্কে রাজি না হওয়ায় বেগমগঞ্জের গৃহবধূকে শ্লীলতাহানি: র্যাব
- বেগমগঞ্জের ওই নারীর ভিডিও অপসারণ, নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ হাইকোর্টের
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা অস্ত্র মামলায় দেলোয়ার রিমান্ডে আছেন। তাকে এই মামরায় গ্রেফতার দেখানো হবে। আরেক আসামি আবুল কালামকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত দলের কাছে নির্যাতনের শিকার ওই নারী তার ওপর নির্যাতনের সব তথ্য তুলে ধরেন। পরে তদন্ত দলের প্রধান মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মিলনায়তনে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
ব্রিফিংয়ে আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর বলেন, ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করেছেন, তিনি বাবার বাড়ি চলে আসার পর থেকেই দেলোয়ার তাকে ‘কুপ্রস্তাব’ দিয়ে আসছেন। তাতে সাড়া না দিলে তিনি হুমকি-ধমকিও দিয়েছেন। বছরখানেক আগে দেলোয়ার ওই নারীর ঘরে ঢুকে প্রথমবার ধর্ষণ করেন। গত রমজানের কিছুদিন আগে দেলোয়ার তার সহযোগী কালামের মাধ্যমে ওই নারীকে একটি নৌকায় ডেকে পাঠান। সেখানে দেলোয়ার ও কালাম দু’জনেই তাকে ধর্ষণ করতে চান। এসময় তিনি দেলোয়ারের কাছে অনুনয়-বিনয় করলে কালামকে টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দেন দেলোয়ার। এরপর নৌকায় তাকে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের ভিডিওগুলো ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় তাকে। প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। ফলে ওই নারী ধর্ষণের শিকার হলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারেননি।
বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার দায়ের করা দুই মামলায় দেলোয়ারের নাম না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণে ভুক্তভোগী নারী দেলোয়ারের নামে মামলা করেননি বলে আমাকে জানিয়েছেন। এমনকি আদালতে ২২ ধারার জবানবন্দিতে নিরাপত্তাহীনতা ও ভয়ের কারণে দেলোয়ারের নাম বলেননি।
এদিকে, ওই নারীকে গত ২ সেপ্টেম্বর বিবস্ত্র করে নিপীড়নের ভিডিও গত রোববার (৪ অক্টোবর) ভাইরাল হয়। পরে রাতেই অভিযান চালিয়ে র্যাব নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে প্রধান অভিযুক্ত দেলোয়ারকে। এসময় তার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে আছেন দেলোয়ার। নিপীড়নের ঘটনায় বেগমগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলায় দেলোয়ারের নাম না থাকায় তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো যায়নি।
২ বার ধর্ষণ গৃহবধূকে ধর্ষণ টপ নিউজ থানায় মামলা দেলোয়ার হোসেন দেলোয়ার বাহিনী বিবস্ত্র করে নির্যাতন বেগমগঞ্জ