‘ভ্যাকসিনও শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে না’
৭ অক্টোবর ২০২০ ০৩:২২
ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন আসার ব্যাপারে আশাবাদী হলেও তা কতটুকু কাজে দেবে, তা নিয়ে সংশয় জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ভ্যাকসিন ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ করবে। কোনো ভ্যাকসিন যেহেতু শতভাগ কাজ করবে না, সুতরাং উদাসীনতা না করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য চিকিৎসার কথা না ভেবে দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) আয়োজিত ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন- সমালোচনা হলেও স্বাস্থ্যখাত এখন বিশ্বে প্রশংসিত: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, জনগণ এখন অনেক বেশি সচেতন। এখন দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে কথা উঠেছে, প্রধানমন্ত্রীও এটা বলেছেন। অনেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, আমি এটা ওনাকে (প্রধানমন্ত্রী) বলেছি কি না। আমি তাদের বলেছি, উনি আসলে তথ্য-উপাত্ত নিয়েই কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, সবার সমন্বিত কাজের ফলে এখন দেশের অবস্থা অনেক ভালো। অনেক সংকট ও অভিযোগ থাকলেও সংশ্লিষ্টরা অনেক ভালো কাজ করেছেন। ঢেউ নিয়ে আমরা যেটা বলছি, এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি আমি দেখি না। না এলে ভালো। তবে প্রস্তুতি রাখতে হবে, এলে মোকাবিলা দরকার।
ডা. আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ভ্যাকসিন আসার ব্যাপারে আশাবাদী হলেও তা কতটুকু কাজ করবে, সেটা নিয়ে সংশয় আছে। তবে এটার সংরক্ষণ ও ট্রান্সপোর্টেশনের ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। একইসঙ্গে কোনো ধরনের গড়িমসি না করে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে সবাইকে আরও বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ওয়েভের ব্যাপারে আমাদের কাছে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে, শীতে অবস্থা খারাপ হতে পারে। এজন্য প্রস্তুতি চলছে। আমরা বসে নেই। তবে ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য চিকিৎসার কথা না ভেবে দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ভ্যাকসিন ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ করবে। কোনো ভ্যাকসিনই শতভাগ কাজ করবে না জানিয়ে অবহেলা না করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ করেন মহাপরিচালক।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন বলেন, আমরা প্রথম ঢেউ সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। সবার চেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। এখন দ্বিতীয় ধাপে এই ঢেউ এলে সবাই মিলে সেটাও মোকাবিলা করার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, করোনাকালে অনেক দেশ কোনো উপায় না পেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু আমাদের দেশের সংশ্লিষ্টরা অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সরঞ্জামের অভাব ছিল, সেটা এখন নেই। উপজেলায় পর্যন্ত সক্ষমতা অর্জন হয়েছে। সুতরাং এখন ভয়ের কিছু নেই।
আরও পড়ুন- ‘ঘরবন্দি থাকায় মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব, বাড়ছে সহিংসতা’
তিনি আরও বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এলেও সেটা এখন বড় কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না। তবে আমাদের আরও সচেতনতা বাড়ানোর দরকার। যারা মাস্ক পরে না, তাদের নিজের জন্য হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন খান। দেশের ক্রান্তিকালে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার কারণে পৃথিবীতে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। উন্নত দেশগুলো এ মহামারি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা করোনার সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা করোনাভাইরাস সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছি। এতে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসা পেয়েছেন। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হারও অনেক কম।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী আমাদের দেশে এখনো শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামেনি। সুতরাং এটা বলার সুযোগ নেই যে আমাদের প্রথম ঢেউ শেষ হয়েছে। তারপরও আসন্ন শীতের প্রস্তুতি হিসেবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। এই প্রসঙ্গে আলোচনার অবতারণা।
তিনি বলেন, দেশের এই অবস্থায় আমার মনে হয়, আত্মতুষ্টিতে ভোগার মতো তেমন কিছু নেই। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী হওয়ার অনেক কিছু আছে। এগুলোকে পুঁজি করে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব মো. আলী নূর বলেন, দ্বিতীয় ঢেউ আসবে কি না, সেটা নিয়ে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও সচেতনতা দরকার। প্রথমে তো অবস্থা খারাপ ছিল, সেটা মানতেই হবে। কিন্তু সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ হয়েছে। আগামীতে দ্বিতীয় ঢেউ বা যে সংকট আসুক, আমরা তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। মাল্টি সেক্টরাল অ্যাপ্রোচের মাধ্যমে সেটা মোকাবিলা করা হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী। সভাপতিত্ব করেন বিপিএমসিএ সভাপতি এম এ মুবিন খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শামিম আরা মুন্নি।
অক্সফোর্ড করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম করোনাভাইরাস টপ নিউজ ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ডা. মো. এনামুর রহমান ভ্যাকসিন স্বাস্থ্য সুরক্ষা