অ্যানিমেল ট্রায়ালে সফল ‘ব্যানকোভিড’— দাবি গ্লোব বায়োটেকের
৫ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৪৬ | আপডেট: ৫ অক্টোবর ২০২০ ১৬:২৪
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে ভ্যাকসিন হিসেবে ব্যানকোভিড অ্যানিমেল ট্রায়ালে সফল বলে দাবি করেছে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির দাবি তাদের উদ্ভাবিত টিকার অ্যানিমেল (প্রাণি) মডেলে নিয়ন্ত্রিত ও পূর্ণাঙ্গ প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। এতে তাদের টিকা প্রাণিদেহে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
সোমবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর গুলশান-২ এ অবস্থিত হোটেল লেকশোরে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছে গ্লোব বায়োটেক।
সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের উদ্ভাবিত টিকা ‘ব্যানকোভিড’ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের সিইও ড. কাকন নাগ। তিনি বলেন, “আমাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত ‘ব্যানকোভিড’ টিকাটি ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে প্রথম ও একমাত্র আবিষ্কৃত টিকা। ইতোমধ্যে অ্যানিমেল মডেল ইঁদুরে নিয়ন্ত্রিত ও পূর্ণাঙ্গ প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ব্যানকোভিড সম্পর্ণ নিরাপদ ও কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। যার বিস্তারিত ফলাফল বায়ো-আর্কাইভে (biorxiv) প্রি-প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘আমরা বর্তমানে কন্ট্রাক্ট রিসার্স অর্গানাইজেশনের (সিআরও) সঙ্গে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রটোকল তৈরির কাজ করছি। আশা করছি, তারা খুব শিগগিরই বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে (বিএমআরসি) ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নৈতিক ছাড়পত্রের জন্য এই প্রটোকলসহ আবেদন করবেন। বিএমআসির নৈতিক অনুমোদন সাপেক্ষে দ্রুততম সময়ে তারা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছেও প্রটোকলস ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার জন্য আবেদন করতে পারবেন।’
ড. কাকন নাগ বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবিত BANCOVID নামের BAN একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা COVID-19 কে ব্যান বা প্রতিহত করতে সক্ষম হবে। আমরা দ্রুততম সময়ে টিকাটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসীর সেবায় ব্যানকোভিডকে উৎসর্গ করতে চাই। বর্তমানে সারাবিশ্বে করোনা আক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এই সংক্রমণে ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টটি শতভাগ দায়ী বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদও (বিসিএসআইআর) বাংলাদেশে সংক্রমণের জন্য ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী বলে নিশ্চিত করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে গ্লোব বায়োটেক জানায়, এনসিবিআই ভাইরাস ডাটাবেসে প্রাপ্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক করোনার সব সিকুয়েন্স বায়োইনফরমেটিক্স টুলসের মাধ্যমে বিশদ পর্যালোচনা করে তাদের টিকার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই টিকা সারাবিশ্বে অধিক কার্যকরী হবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা আমাদের টিকার টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকুয়েন্স এনসিবিআই ডাটাবেসে জমা দিয়েছি, যা ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের গবেষণাগারে আবিষ্কৃত টিকাটির বিশদ বিশ্লেষণের পর প্রাথমিকভাবে ল্যাবরেটরি অ্যানিমেল মডেলে (খরগোশ) প্রয়োগ করে যথাযথ অ্যান্টিবডি তৈরিতে সন্তোষজনক ফলাফল পেয়ে টিকা গবেষণার সফলতা জাতিকে জানিয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘আমরা গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড ২০১৫ সালে দুরারোগ্য রোগ নিরাময়ের জন্য বায়োলজিক্স, নোভেল ড্রাগ এবং বায়োসিমিলার উৎপাদনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অত্যাধুনিক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করে যাত্রা শুরু করি। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চলমান করোনাভাইরাসের প্রকোপে মানুষ বিপর্যস্ত। তাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে আমাদের গবেষণার পাশাপাশি করোনা শনাক্তকরণ কিট, টিকা ও ওষুধ আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণা কর্মকাণ্ড শুরু করি। এরই অংশ হিসেবে গত ২ জুলাই আমরা করোনার টিকা উদ্ভাবনের ঘোষণা করি।’
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. মামুনুর রশিদ কিরণ। তিনি বলেন, ‘গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের এই ভ্যাকসিন আবিস্কারের ঘটনা আসলে সমগ্র বাংলাদেশের সাফল্য। আমাদের জন্য এটা একটা গর্ব করার মত ঘটনা। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও যে বড় কিছু আবিস্কার করে দেখাতে পারে, সেটাই আমরা প্রমাণ করেছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেডর চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ, পরিচালক আহমেদ হোসেন, শহিদ উদ্দিন আলমগীর, আবদুল্লাহ আল রশিদ, সামির আল রশিদ, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের সিইও ড. কাকন নাগ, সিএসও ড. নাজনীন সুলতানাসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অ্যানিমেল ট্রায়ালে সফল গ্লোব বায়োটেক প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ব্যানকোভিড ভ্যাকসিন