‘আ.লীগ ক্ষমতায় না থাকলে কত মানুষ মারা যেত, বলা যায় না’
৩ অক্টোবর ২০২০ ১৪:০২ | আপডেট: ৩ অক্টোবর ২০২০ ১৪:২০
ঢাকা: সরকারের পাশাপাশি সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলেই মানুষকে দুরবস্থায় পড়তে হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন সরকার ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমি দেখেছি যখনই যাকে বলেছি, কেউ এতটুকু পিছুপা হয়নি। মানে সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার মনে হয় একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলেই মানুষ এই সহযোগিতাটা পেয়েছে। এখানে যদি অন্য কেউ থাকত কত যে মানুষ মারা যেত, কত যে দুরাবস্থা হতো— ভাষায় বলা যায় না।
শনিবার (৩ অক্টোবর) সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তব্যের শুরুতে করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুবরণকারী নেতাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে এবার শুধু করোনা দুর্যোগ না, আমাদের আরও অনেক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। করোনার মধ্যেই আসলো ঘূর্ণিঝড়, তারপর বন্যা। সব মিলিয়ে সারাদেশের মানুষের জীবন দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে ছিল। কিন্তু সেই সময় আমাদের দলের নেতাকর্মীরা প্রত্যেকে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকায় এলাকায় তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের পাশে ছিল। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা অসচ্ছল অনেকেই আছে, যারা করোনার মধ্যে ভীষণ কঠিন অবস্থায় পড়লেও অন্যের কাছে হাত পাততে পারেননি। তাদের খুঁজে বের করে তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজটি তারা করেছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কাজটি তারা করেছে। বন্যায় সময়ও আমাদের নেতাকর্মীরা কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে।
আরও পড়ুন- জনগণের পাশে আছি, তাদের আস্থা আমাদের সম্বল: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, এই যে সরকার-প্রশাসন-সংগঠন সবাই মিলেমিলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে, এরকম দৃষ্টান্ত বোধহয় খুব কম আছে। আমি যখন যাকে বলেছি, কেউ এতটুকু পিছুপা হয়নি। আমার মনে হয় একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলেই মানুষ এই সহযোগিতাটা পেয়েছে। এখানে যদি অন্য কেউ থাকত, কত যে মানুষ মারা যেত বা কত যে দুরাবস্থা হতো— তা ভাষায় বলা যায় না। যদিও আমরা অনেকের অনেক কথা, ভাষণ শুনি। আবার আমরা যেগুলো করে ফেলি বা যেগুলো নির্দেশনা দেই বা যেসব পদক্ষেপ নেই, পরে দেখি অনেকে তাই নিয়েই উপদেশ দিচ্ছেন।
‘করোনার কারণে সারাবিশ্ব অর্থনৈতিকভাবে স্থবির। সে ক্ষেত্রে আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি, আমাদের অর্থনীতিটা যেন থেমে না যায়। সেভাবে বাজেট দিয়েছি। বাজেটে খুব বেশি একটা কমাইনি। বরং গত বাজেটের চেয়ে কিছুটা বাড়িয়েছি। আমরা বাজেটটা ঠিক রেখেছি, যেন আমাদের অর্থনীতিটা গতিশীল থাকে,’— বলেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনা মহামারি সংক্রমণের সময়ে সব স্তরের মানুষের জন্য সরকারঘোষিত প্রণোদনার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। কেউ যেন নিজ নিজ জায়গায় স্থবির না হয়ে পড়ে, বরং প্রণোদনার মাধ্যমে কিছুটা হলেও নিজের ও সংশ্লিষ্ট সবার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে— সে কারণেই প্রণোদনা প্যাকেজগুলো ঘোষণা করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা আসবে। আর মন্দার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, খাদ্যভাব দেখা দেয়। বাংলাদেশে যেন কোনোভাবেই খাদ্যাভাব দেখা না দেয়, কৃষক যেন মাঠে থাকে, ফসল যেন উৎপাদন হয়— আমরা সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। কারণ কৃষক মাঠে থাকলে ফসল ফলবে, সেটা আমাদের কাছে থাকলে অন্তত আমাদের খাবারের অভাবটা হবে না। আল্লাহর রহমতে সেটা কিন্তু হয়ওনি। এসময় করোনার মধ্যে কৃষকের ধান কাটার সময় পাশে দাঁড়ানোর জন্য নেতাকর্মীদের প্রশংসা করেন তিনি।
করোনা সংক্রমণের সময় মানুষ যেন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য সরকার সবকিছু করেছে বলে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, এই করোনাভাইরাস আমাদের এখানে আক্রমণ করলে আমাদের কী পরিমাণ মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে, তার মধ্যে কত জনকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হতে পারে, কত জনকে কোয়ারেনটাইনে রাখতে হতে পারে— সব বিষয় নিয়ে আমরা হিসাব করেছি। সেই অনুযায়ী আমরা হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করেছি। আমরা নিশ্চিত করেছি যেন প্রতিটি জেলা হাসপাতাল পর্যন্ত অক্সিজেন সাপোর্টটা থাকে, আইসিইউ সাপোর্টটা থাকে। হ্যাঁ, শুরুতে এটা করতে কষ্ট হয়েছে— এটা ঠিক। এখন কিন্তু আমরা প্রায় সব জায়গায় এটা করে ফেলেছি। সঙ্গে সঙ্গে দুই হাজার ডাক্তার ও নার্স আমরা নিয়োগ দিয়ে দিয়েছি। আলাদা ভাবে তিন হাজার নার্স আমরা নিয়োগ দিয়েছি । টেকনিশিয়ান লাগবে— তাদেরও আমরা নিয়োগ দিয়েছি। এর জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়— সবাইকে একসঙ্গে বসে নিয়ে অন দ্য স্পট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কারণ নিয়োগটা আগে দরকার ছিল।
তিনি বলেন, আমরা কিন্তু দ্রুত সেই পদক্ষেপগুলো নিয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়কে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে। কিন্তু একটা কথা তো স্বীকার করতে হবে, যখন যেটা নির্দেশ দিয়েছি তারা করেছে। অনেক কাজ আছে, সেগুলো করতে অনেক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। আমি বলেছি— এটা ইমার্জেন্সি, এত কিছু মানতে হবে না। আগের মানুষকে সেবা দিতে হবে। তারপর যদি কোথাও অসুবিধা হয়, আমরা দেখব। তারা কিন্তু সেভাবেই কাজ করেছে। তারা কাজ করেছে বলেই কিন্তু আমরা এই করোনাটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।
ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ দুই মাস লকডাউনে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছিল। ধীরে ধীরে আমরা সব উন্মুক্ত করলাম। কিন্তু যেসব মন্ত্রণালয় এই কাজের জন্য জরুরি, তারা কিন্তু সম্পূর্ভাবে অফিস ছেড়ে চলে যায়নি। সীমিত আকারে করেছে। তাছাড়া এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে যখন আমরা নির্বাচনি ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছি, অনেকে অনেক কথা বলেছে। কত কথা শুনতে হয়েছে। আজ দেখা গেল সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই আমরা সবকিছু সচল রাখতে পেরেছি, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগটা আমরা রাখতে পেরেছি।
প্রবাসীদের জন্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশেই তো এখন কাজ বন্ধ। ফলে এসব দেশে আমাদের যারা কাজ করেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। প্রয়োজনে কিন্তু বিশেষ প্লেন পাঠিয়ে হলেও তাদের আনা হয়েছে। কারণ তারা আমাদের সন্তান। তাদের ভালোমন্দ তো আমাদের দেখতে হবে। তাদের জন্য কিছু ব্যবস্থাও আমরা করেছি। তাদেরও আমরা প্রণোদনা দিচ্ছি। অনেক জায়গায় আমাদের লোকের কাজ ছিল না। তাদের নগদ টাকা-পয়সা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। এভাবে প্রত্যেকটা সেক্টরে আমরা কিন্তু কাজ করেছি। সেটা করেছি বলেই আজ এরকম একটি ভালো অবস্থায় আমরা আছি।
আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি করোনাভাইরাস কেন্দ্রীয় কমিটির সভা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা টপ নিউজ দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার