Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হৃদরোগে থেমে গেল ধান বিজ্ঞানী তমাল লতা আদিত্যের প্রাণ


১ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৩১ | আপডেট: ১ অক্টোবর ২০২০ ২১:৪৫

নিজের উদ্ভাবিত ব্রি ধান৮২ জাতের ধানের সঙ্গে ড. তমাল লতা

ঢাকা: প্রখ্যাত ধান বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণা পরিচালক ড. তমাল লতা আদিত্য আর নেই। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে থেমে গেল এই ধান বিজ্ঞানীর জীবন। ব্রি ৫৭, ব্রি ৫৮, ব্রি ৬৩, ব্রি ৭০, ব্রি ৮০, ব্রি ৮১, ব্রি ৮২, ব্রি ৮৮, ব্রি ৯০ ও ব্রি ৯৫ জাতের ধান উদ্ভাবনে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এছাড়া ধানের উচ্চ ফলনশীল আরও জাত উদ্ভাবনের গবেষণাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তমাল লতা আদিত্য। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) বিকেলে যশোরের মনিরামপুরের শ্বশুরালয়ে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

বিশিষ্ট এই ধান গবেষকের মৃত্যুতে দেশের কৃষি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান। শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। শোক বার্তায় প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ধান গবেষণার মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে তার অসামান্য অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে।

ব্রি ৫৭, ব্রি ৬৩, ব্রি ৭০, ব্রি ৮১, ব্রি ৮২-সহ উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ড. তমাল লতা

কৃষিমন্ত্রী তার শোকবার্তায় বলেছেন, ‘এ দেশের উপযোগী  অনেকগুলো উন্নত জাতের ধানের উদ্ভাবন ও সেগুলো জনপ্রিয় করে তুলতে তার অসাধারণ অবদান রয়েছে। ধান গবেষণার মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও কৃষিক্ষেত্রে তার গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা এ দেশের কৃষিবিদসহ সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ কৃষিসচিব প্রয়াতের আত্মার চিরশান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

ব্রি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তমাল লতা আদিত্য দীর্ঘদিন ধরে ডায়বেটিস ও হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছিলেন। বুধবারও তিনি একটি কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওই কর্মশালা থেকে গাজীপুর ফেরার পথে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

ড. তমাল লতা আদিত্য ১৯৬৭ সালের ৩১ অক্টোবর ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার কুন্ডল বালিয়া গ্রামে জন্ম নেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ২০০২ সালে ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ প্রজনন ও বায়োটেকনোলজি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিজ্ঞাপন

১৯৯৪ সালের ২১ নভেম্বর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে ব্রি’র উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে যোগ দেন তমাল লতা। ২০১০ সারের ৯ আগস্ট মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে পদন্নোতি পান। পরে ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর পরিচালক গবেষণা (চলতি দায়িত্ব) পদে যোগ দেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ পদেই দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

শোক বার্তায় ব্রি জানিয়েছে, ধান প্রজননবিদ হিসাবে বহু ধানের জাত উদ্ভাবনে তমাল লতা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। বিশেষ করে ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৬৩, ব্রি ধান৭০, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮১, ব্রি ধান৮২, ব্রি ধান৮৮, ব্রি ধান৯০ এবং ব্রি ধান৯৫ জাতগুলো উদ্ভাবনে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও ব্রি ধান৪৬, ব্রি ধান৪৯, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৭১ জাতগুলো উদ্ভাবনেও তার অবদান ছিল। ধান গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেশ-বিদেশে একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন ড. তমাল। পিবিজিএসবি ইয়াং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড ২০১৩-১৪, প্রফেশনাল এক্সিলেন্সে অ্যাওয়ার্ড ২০১৪, বেস্ট সায়েন্টিস্ট ব্রি অ্যাওয়ার্ড-২০১৪, এসটিআরএএসএ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ ও ইন্টারন্যাশনাল সেনাধিরা রাইস রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ অর্জন করেন কৃতি এই ব্যক্তিত্ব। তার নেতৃত্বেই ব্রি’র উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার অর্জন করে। ড. আদিত্য আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জয়া আলোকিত নারী ২০২০ সম্মাননাতেও ভূষিত হয়েছিলেন।

ড. তমাল লতা আদিত্য ব্রি’র গবেষণা কর্মসূচি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা জার্নালে তার ৩০টির বেশি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি পেশাগত কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ভারত, নোপাল, ভুটানসহ পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনসহ বেশকিছু পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ব্যক্তিজীবনে চিকিৎসক স্বামী ও দুই পুত্রসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন ড. তমাল। লতা। ধান গবেষণার মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে তার অসামান্য অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে বলে প্রত্যাশা ব্রি’র।

উচ্চ ফলনশীল ধান টপ নিউজ ড. তমাল লতা ড. তমাল লতা আদিত্য ধান গবেষণা ধান বিজ্ঞানী ধানের জাত ধানের জাত উদ্ভাবন

বিজ্ঞাপন

লন্ডনের পথে খালেদা জিয়া
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৩৯

আরো

সম্পর্কিত খবর