৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে গোপন সুড়ঙ্গে নাসিম, পরে র্যাবের হাতে ধরা
১ অক্টোবর ২০২০ ১৭:২২ | আপডেট: ১ অক্টোবর ২০২০ ২১:৪৬
ঢাকা: স্বল্পমূল্যে জমি পাওয়া যাচ্ছে- এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গোপন সুড়ঙ্গে ছিলেন আবাসন ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন নাসিম। বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫৫ মামলার পলাতক আসামি নাসিমকে তৃতীয় স্ত্রীসহ গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ৭.৬৫ এমএম বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, তিন রাউন্ড গুলি, নগদ জাল এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ১৪শ পিস ইয়াবা, দুই বোতল বিদেশি মদ, চারটি ওয়াকিটকি সেট, ছয়টি পাসপোর্ট, ৩৭টি ব্যাংক চেক এবং ৩২টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘স্বল্পমূল্যে জমি পাওয়া যাচ্ছে- সাইনবোর্ডে এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় নাসিম। কিন্তু তার দেখানো জামিগুলো ছিল খাস, দখল করা কিংবা পানি ভরা। এছাড়া স্বল্পমূল্যে প্লট পাওয়ার কথা বলে, প্লটপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার চুক্তি করেছিল। রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার কথা বলে আরও সাড়ে ১২ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করে একেকজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নেয় তারা। সব মিলিয়ে এভাবে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ইমাম হোসেন নাসিম। তিনি ৫৫টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি ছিলেন।’
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এই প্রতারকের বাবা-দাদার বাড়ি ভোলায়। দেশ স্বাধীনের আগে তার বাবা বেলায়েত হোসেন গ্রাম্য ডাক্তার ছিলেন। স্বাধীনতার পর তাকে নিয়ে তার বাবা রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় চলে আসেন। পরবর্তী সময়ে নাসিম মিরপুর এলাকায় পড়ালেখা করেন। সে নিজেকে গ্রাজুয়েট দাবি করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিতাসের তৃতীয় শ্রেণীর ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০২ সালে নাসিম রিয়েল এস্টেট নামে কোম্পানি গড়ে তোলেন।’
তিনি বলেন, ‘সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় সাইনবোর্ড দিয়ে জমি দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে ৩২টি সিমকার্ড ব্যবহার করেছে সে। আর এই সিমগুলো দিয়ে প্রতারণা করে মানুষদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যেত এবং কখনো কখনো অস্ত্র প্রদর্শন ও ওয়াকিটকি দেখিয়ে নিজের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতো। এছাড়া গ্রেফতার এড়াতে আন্ডারগ্রাউন্ডে তার গোপন সুড়ঙ্গে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্বলিত দরজাযুক্ত গোপন অফিসে আত্বগোপনে থাকতেন। নাসিমের অনুপস্থিতিতে তার তৃতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তার প্রতারণার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন।’
র্যাব-৪-এর সিও বলেন, ‘নাসিম ৫৫টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, ভূমিদস্যূতা, মাদক ও জাল টাকার ছড়ানোর মামলায় প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে স্ত্রীর সহযোগিতায় ইয়াবা ও বিদেশি মদ সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ডিলার ও খুচরা মাদক কারবারীদের কাছে বিক্রি করতো। এছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাল নোটের ব্যবসা পরিচালনা করতো।’
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক আরও বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত নাসিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদকসহ প্রতারণার চারটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। প্রতারিত ভুক্তভোগী র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। যারা মামলা করতে ইচ্ছুক র্যাব-৪ তাদের প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’