শিশুশ্রম বন্ধে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে: যুক্তরাষ্ট্র
১ অক্টোবর ২০২০ ১৫:৪৯ | আপডেট: ১ অক্টোবর ২০২০ ১৫:৫৪
ঢাকা: শিশুশ্রম বিলুপ্তিতে বাংলাদেশ মাঝারি ধরনের উন্নতি করেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘শিশু শ্রমের ওপর ২০১৯ সালের ফলাফল’ শীর্ষক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেশটির মার্কিন শ্রমবিভাগ এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের শিশুরা সবচেয়ে নিকৃষ্টতম শিশুশ্রমের ধরনগুলির সঙ্গে জড়িত আছে, যেখানে অন্তর্ভুক্ত আছে শিশুদেরকে শুটকি মাছ ও ইট তৈরিতে জোরপূর্বক শিশুশ্রম করানো। প্রতিবেদনটি মার্কিন শ্রমবিভাগে বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) প্রকাশ করা হয়।
মার্কিন শ্রমবিভাগের প্রকাশিত ‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট ধরণের শিশু শ্রমের ওপর ২০১৯ সালের ফলাফল: বাংলাদে‘ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০১৯ সালে, শিশুশ্রমের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ধরনগুলি বিলুপ্তির প্রয়াসে বাংলাদেশ একটি মাঝারী ধরণের উন্নতি করেছে। ২০১৯ সালে ৫৫৮টি কারখানা থেকে এক হাজারেরও বেশি শ্রমজীবী শিশুকে সরিয়ে এনেছে, ১,২৫৪ জন পথশিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে এবং ৩ হাজার ৫০১ শিশুকে পুনর্বাসন করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০১৭ সাল থেকে সরকারী কার্যক্রমগুলি বিপজ্জনক শ্রম পরিবেশ থেকে ৯০ হাজার শিশু সরিয়ে এনেছে এবং ৩৫ হাজারেরও বেশি শিশুকে শোষণমূলক কাজ থেকে সরিয়ে এনেছে। যে করেই হোক শিশুদের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ১৫টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে, বাংলাদেশ সরকার ২০১৭-২০১৮ এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের মধ্যে শিশুদের জন্য ব্যয় ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে। তবে, বাংলাদেশের শিশুরা সবচেয়ে নিকৃষ্টতম শিশুশ্রমের ধরনগুলির সঙ্গে জড়িত আছে, যেখানে অন্তর্ভুক্ত আছে শিশুদেরকে শুটকি মাছ ও ইট তৈরিতে জোরপূর্বক শিশুশ্রম করানো। শিশুরা পোষাক এবং চামড়ার পণ্য সরবরাহের ধারাবাহিক ব্যবস্থাপনার বিপজ্জনক কাজগুলি করে থাকে। এছাড়া, বাংলাদেশ শ্রম আইনটি অনানুষ্ঠানিক খাতের জন্য প্রযোজ্য নয়, যেখানে বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিশু শ্রম ঘটে থাকে এবং বিপজ্জনক কাজের নিষেধাজ্ঞাগুলিও ব্যাপক নয়। অধিকন্তু, শ্রম পরিদর্শকগণ জরিমানা নির্ধারণের জন্য অনুমোদিত নন এবং যখন আদালত সেটা আরোপ করে, তখন শিশু শ্রম আইন লঙঘন রোধ করার জন্য এই জরিমানাটি খুব কম হয়।
মার্কিন শ্রমবিভাগের প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে চিরতরে শিশুশ্রম একগুচ্ছ সুপারিশ করা হয়, সেগুলো হচ্ছে, সংশোধীত গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতির প্রতিফলনের জন্য জাতীয় আইন সংশোধন করা। গৃহস্থালি কাজসহ, রাস্তায় এবং ক্ষুদ্রাকার কৃষিক্ষেত্রের অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করা শিশুদের জন্য আইনটির ন্যূনতম বয়সের সুরক্ষাটি বর্ধিত করা। নিশ্চিত করা যে শিশুদের জন্য বিপজ্জনক ধরনের কাজগুলি যেন সুচিন্তিতভাবে নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়, বিশেষ করে পোষাক উৎপাদন ও শুটকি মাছের খাতগুলিসহ। অশ্লিল কাজকর্মে শিশুদের ব্যবহারকে অপরাধমূলকভাবে নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থাটি প্রতিষ্ঠা করা। অবৈধ কার্যকলাপে শিশুদেরকে ব্যবহার করা, বিশেষ করে নিষিদ্ধ মাদক দ্রব্য তৈরির ক্ষেত্রটিকে অপরাধমূলকভাবে নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থাটি প্রতিষ্ঠা করা। স্ব-ইচ্ছায় যোগদানের অধিকারটি সুরক্ষিত রাখাসহ রাষ্ট্রিয় সামরিক বাহিনী দ্বারা স্বেচ্ছায় নিয়োগের জন্য ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর প্রতিষ্ঠা করা। স্বেচ্ছাসেবক হয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সুরক্ষাদানের বিধানসহ রাষ্ট্রীয় আওতামুক্ত কোনো আগ্নেয়াস্ত্রধারী দলগুলি যাতে ১৮ বছর বয়সের কমে কোনো শিশুকে নিয়োগ দিতে না পরে সেটাকে অপরাধমূলকভাবে নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থাটি প্রতিষ্ঠা করা। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং কাজের সর্বনিম্ন বয়সের সঙ্গে সেটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সেই ব্যবস্থাকে সুনিশ্চিত করা। শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য তলব পত্র এবং জরিমানা কার্যকর করার ক্ষেত্রে শিশুশ্রম আইন লঙ্ঘনের দণ্ড নির্ধারণের জন্য পরিদর্শককে কতৃত্ব দেওয়া এবং শিশুশ্রম আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রতিরোধ নিশ্চিত করাসহ শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করাটি সুনিশ্চিত করা।
সুপারিশমালায় আরও বলা হয়, আইএলওর প্রযুক্তিগত পরামর্শগুলি পূরণ করার জন্য শ্রম পরিদর্শকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বাড়াতে হবে। রাত্রিকালীন কাজের পালায় ঘন ঘন শ্রম পরিদর্শন কার্য পরিচালনা নিশ্চিত করা। শ্রম ও ফৌজদারি আইন প্রয়োগের জন্য একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে শিশু শ্রমের সাথে জড়িত শিশুদেরকে উপযুক্ত আইনি এবং সামাজিক পরিসেবাগুলোর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া যায় এবং মানব পাচারের লক্ষ্যে দেখা যাওয়া এমন কারখানাগুলো থেকে সরিয়ে আনা শিশুদের ওপর নজর রাখার ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। শিশুশ্রম বিলুপ্তি ও প্রতিরোধের কৌশলগুলি জাতীয় শিক্ষানীতিতে অর্ন্তভুক্ত করা।