একাদশ সংসদের ৬১ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী: টিআইবি
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:১৯ | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:৪১
ঢাকা: চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৬১ শতাংশ ব্যবসায়ী। বাকিদের মধ্যে আইনজীবী ১৩ শতাংশ, রাজনীতিক ৫ শতাংশ এবং অন্যান্য পেশার ২১ শতাংশ। প্রথম জাতীয় সংসদে ১৮ শতাংশ সদস্যের পেশা ছিল ব্যবসা। এটি ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে একাদশ সংসদে এসে ৬১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ‘পার্লামেন্টওয়াচ: একাদশ জাতীয় সংসদ – প্রথম থেকে পঞ্চম অধিবেশন (জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০১৯)’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআিইবি‘র ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) মোরশেদা আক্তার ও নিহার রঞ্জন রায়। এ সময় টিআইবি‘র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
টিআইবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী সংসদ সদস্যর সংখ্যা প্রায় ৭৭ শতাংশ। এর বাইরে এইচএসসি সমমানের প্রায় ১২ শতাংশ এবং এসএসসি ও তার কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন সংসদ সদস্য রয়েছেন ১১ শতাংশ। পেশাগত দিক থেকে ব্যবসায়ী, আইনজীবী ও রাজনীতিকের বাইরে সংসদ সদস্যদের অন্যান্য পেশার মধ্যে রয়েছে শিক্ষক, চিকিৎসক, কৃষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তা, গৃহিণী, পরামর্শক ইত্যাদি।
আরও পড়ুন- একাদশ সংসদের প্রতি অধিবেশনে কোরাম সংকট ১৯ মিনিট: টিআইবি
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারতের ১৭তম লোকসভায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে রাজনীতিক ৩৯ শতাংশ, ব্যবসায়ী ২৩ শতাংশ, আইনজীবী ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য পেশার সদস্য রয়েছেন ৩৮ শতাংশ। এছাড়াও সরাসরি নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে পুরুষ ৯২ শতাংশ ও নারী ৮ শতাংশ। সংরক্ষিত আসনসহ এই হার যথাক্রমে পুরুষ ৭৯ শতাংশ ও ২১ শতাংশ। নির্বাচিত সদস্যদের একাংশ তাদের হলফনামায় সঠিক তথ্য (আয়ের উৎস, সম্পদের পরিমাণ, নির্বাচনি ব্যয় ও ব্যয়ের উৎস ইত্যাদি) প্রদান করেননি। নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে ২১ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ছিল।
টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একাদশ সংসদের প্রথম পাঁচটি অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের গড় উপস্থিতি প্রতি কার্যদিবসে ২৩৩ জন (মোট সদস্যের ৬৭ শতাংশ)। পুরুষ সদস্যদের গড় উপস্থিতি ছিল ২২ শতাংশ, যেখানে নারী সদস্যদের গড় উপস্থিতি ছিল ৮৫ শতাংশ। অন্যদিকে সংসদ নেতা সংসদ অধিবেশনের ৯২ শতাংশ কার্যদিবসে উপস্থিত ছিলেন। বিরোধী দলীয় নেতার উপস্থিতি ছিল ৪৮ শতাংশ কার্যদিবসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি ও বিরোধী উভয় দলীয় সদস্যের বক্তব্যেই খেলাপি ঋণ, ব্যাংক খাতে সরকারের অব্যাহত ভর্তুকি ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার হ্রাস, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হলেও তা সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকদের কাছে প্রাধান্য পায়নি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির ওপর বিরোধী দলের সদস্যরা ৪৮৪টি ছাঁটাই প্রস্তাব দিলেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় খাতে মাত্র চারটি ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর তারা আলোচনার সুযোগ পান। তবে সেসব ছাঁটাই প্রস্তাবও কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এই নাকচ হওয়ার ক্ষেত্রেও সংসদে সরকারি দলের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ‘অর্থবিল-২০১৯’-এর ওপর বিরোধী দলীয় সদস্যদের জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবও কণ্ঠভোটে নাকচ হয়।
টিআইবি‘র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদীয় কার্যক্রমে সরকারের কোনো জবাবদিহিতা চোখে পড়ছে না। বরং সরকারের একচেটিয়া মতামতের প্রতিফলন ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রেই স্পিকারের সঠিক ভূমিকা চোখে পড়ছে না, কেবল আনুষ্ঠানিকতা দেখা যাচ্ছে। সংসদে অনেক সংসদ সদস্য অসংসদীয় আচরণ করলেও তাদের বিরুদ্ধে স্পিকারের কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি চোখে পড়েনি।
একাদশ সংসদ গবেষণা প্রতিবেদন টপ নিউজ টিআইবি সংসদ সদস্য সংসদ সদস্যদের পেশা