নগর উন্নয়নে বন্দর-কাস্টমসের আয়ের ভাগ চায় চসিকের পরামর্শক কমিটি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:১৯ | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:১৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের আয়ের একটি অংশ নগর উন্নয়নে বরাদ্দের পক্ষে মত দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের গঠিত পরামর্শক কমিটি। একইসঙ্গে সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করতে আইন সংশোধন করে সিটি করপোরেশনের ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষেও মত দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।
শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পরামর্শক কমিটির সভায় এসব মতামত এসেছে। রুদ্ধদ্বার কক্ষে সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয় তুলে ধরেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
চসিকের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে সাবেক দুই মেয়রসহ বিশিষ্টজনদের নিয়ে ১৭ জনের একটি কমিটি করেন প্রশাসক। শনিবার কমিটি প্রথম সভায় বসেছিল।
সভায় আলোচনায় চসিককে স্বাবলম্বী করার প্রসঙ্গ এলে প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বন্দর ও কাস্টমসের আয়ের অংশ নগর উন্নয়নে বরাদ্দের বিষয়টি তোলেন। তিনি বলেন, ‘ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ শহরে সবচেয়ে সুবিধা ভোগ করছে চট্টগ্রাম বন্দর। জাতীয় অর্থনীতিতে বন্দর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। একটি টেকসই অর্থনীতির জন্য উৎপাদনশীল বন্দর প্রয়োজন। আর উৎপাদনশীল বন্দরের জন্য একটি সচল শহর দরকার। শহর সচল না থাকলে বন্দর কিভাবে চলবে? কাস্টম থেকে প্রচুর অর্থ নিয়ে যাচ্ছে এনবিআর। সেখান থেকে নগর উন্নয়নে কেন এক শতাংশ দেওয়া হবে না।’
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা প্রশাসক সুজনের এই প্রস্তাব সমর্থন করেন। তারাও নগর উন্নয়নে বন্দর ও কাস্টমসের আয়ের একটি অংশ বরাদ্দ দেওয়ার দাবি করেন।
সভায় যারা কর দেবে না, তাদের সিটি করপোরেশন থেকে প্রাপ্য সেবা দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন চসিক প্রশাসক। সভা শেষে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা সিটি করপোরেশনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে অথচ ট্যাক্স দিচ্ছে না, তারা করপোরেশনের সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর, বিপিসিসহ সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান এই শহরের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে আয় করে, তাদের সরকারি কর তফসিল অনুযায়ী ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। এ ব্যাপারে পরামর্শক কমিটি বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে।’
সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে সিটি করপোরেশনের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর পক্ষে মত আসার কথা জানিয়েছেন চসিক প্রশাসক। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভা ও সমন্বয় সভায় প্রতিটি সেবা সংস্থার প্রধানের উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তারা উপস্থিত না হলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়ে আইনে উল্লেখ নেই। যার কারণে যেকোন একজন কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে দায় সারেন সংস্থা প্রধানরা। যাকে পাঠান তার সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। ফলে সমন্বয়হীনতার কারণে নগরের নানা দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। এই দুর্ভোগ লাঘবে আইন সংশোধন করে ১৯৯৩ সালের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিশিষ্টজনেরা। সবগুলো পরামর্শ একত্র করে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগে মেয়র প্রতি মাসে সভা করতেন, ওয়ার্ড কমিশনাররাও থাকতেন। সকল সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা ছিলেন অফিসিয়াল কমিশনার। সব সেবা সংস্থার প্রধানের এ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়াটা বাধ্যতামূলক ছিল। তখন মেয়রের ক্ষমতা ছিল। এখন মেয়রের হাত-পা আইন দিয়ে বাঁধা। সিটি করপোরেশনকে তার গতিতে কাজ করতে দিতে হবে।’
সভায় পরামর্শক কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও সরকারি সংস্থা পিকেএসএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল করিম, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশ, নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমডোর জোবায়ের আহমেদ, নগর পরিকল্পনাবিদ ও রাশিয়ার অনারারি কনসাল স্থপতি আশিক ইমরান, শিক্ষাবিদ হাসিনা জাকারিয়া, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সভাপতি প্রবীর কুমার সেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস এবং বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি এম এ সালাম।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন টপ নিউজ পরামর্শক কমিটি সমন্বয় সেবা সংস্থা