Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৪ বছর কনডেম সেলে থাকা হুমায়ুন আপিলে খালাস


২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:৩৮

ঢাকা: স্কুলছাত্রী হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে ১৪ বছর কনডেম সেলে কাটিয়ে অবশেষে আপিল বিভাগ থেকে খালাস পেয়েছেন কুমিল্লা লাকসামের বাসিন্দা মো. হুমায়ুন কবির।

মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ তাকে খালাস দিয়ে এ রায় দেন। এই রায়ের মাধ্যমে হুমায়ুন কবির গ্রেফতারের পর ১৬ বছর জেলে খেটে কারামুক্তির স্বাদ পেতে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

আদালতে হুমায়ুন কবিরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এবিএম বায়জিদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। পরে আইনজীবী এবিএম বায়জিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ মামলায় হত্যার মোটিভ প্রমাণিত হয়নি। সাক্ষ্য প্রমাণসহ যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করে অপরাধ সন্দেহতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন।’ তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকায় মুক্তি পেতে বাধা নেই বলেও জানান আইনজীবী।

মামলার বিবরণী থেকে উল্লেখ করে এ আইনজীবী জানান, ২০০৪ সালের ৩০ জুন লাকসামের কনকশ্রী গ্রামের সাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহেদা আক্তার জ্যোতি বেলা সোয়া ১০টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু স্কুল ছুটি হওয়ার পরও বাড়ি ফিরে না আসায় স্কুলে খোঁজ করে তার অভিভাবকরা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারে শিশুটি স্কুলে যায়নি। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ও সম্ভাব্য স্থানে তাকে খুঁজে না পেয়ে ওই দিনই থানায় সাধারণ ডয়রি (জিডি) করেন শিশুটির চাচা মো. জসীম উদ্দিন।

ওই স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়ার পথে মাথা ব্যথায় জ্যোতিকে সাকেরা গ্রামের মাস্টার বাড়ির পাশে কালভার্টের ওপর শুয়ে পড়তে দেখেন। এ সময় আরও ৫/৬ জন লোক সেখানে ছিল। ওই সময় হুমায়ুন কবির এসে সবাইকে তাড়িয়ে দিতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী যাওয়ার সময় জ্যোতিকে বাড়ি যেতে বললে হুমায়ুন কবির শিশুটির মামা পরিচয় দিয়ে বলে, সে তাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে। কিন্তু হুমায়ুন কবির বাড়ি পৌঁছে দেয়নি।

বিজ্ঞাপন

পরে এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থার আবেদন জানিয়ে লাকসাম থানায় এজাহার দায়েরের পর ওই বছরের ২ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে পুলিশ। পরে ৪ জুলাই ট্রাকচালক হুমায়ুন কবিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিনই কালভার্টের পাশে জঙ্গলের ভেতর থেকে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।

এ মামলায় ২০০৬ সালের ৫ এপ্রিল বিচারিক আদালত হুমায়ুন কবিরকে মৃত্যুদণ্ড দেন। নিয়ম অনুসারে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে এবং হুমায়ুন জেল আপিল করেন। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডদেশ বহাল রাখেন। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে ফের জেল আপিল করেন হুমায়ুন। ওই আপিলের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

পরে আইনজীবী এবিএম বায়েজিদ বলেন, ‘এ মামলায় ক্রেডিবল সাক্ষী ছিল না। অভিযোগে বলা হয়েছে, শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধারের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিচারের সময় জেরা করা হয়নি। এছাড়া হুমায়ুন কবির তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন শিশুটি তার খালাতো বোনের মেয়ে। শিশুর বাবা তার কাছে ১ হাজার ৬০০ টাকা পেতেন। কিন্তু শিশুটির বাবা সাক্ষ্যে বলেছেন, তিনি হুমায়ুন কবিরকে চেনন না।

আইনজীবী আরও বলেন, ‘এছাড়া শিশুটির মাকেও এ মামলায় সাক্ষী করা হয়নি। তাকে সাক্ষী করা হলে জানা যেত, হুমায়ুন কবির আদৌ পরিচিত কেউ কি না। ফলে এখানে সন্দেহ রয়ে গেছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন।’

আপিল কনডেম সেল খালাস টপ নিউজ স্কুলছাত্রী হত্যা হত্যা মামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর