নিজেদের নিরাপত্তায় কোমরে পিস্তল রাখত কিশোর গ্যাংয়ের ২ খুনি!
২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৫৮ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:৪৮
ঢাকা: ‘বয়স বিশ কি বাইশ। এ বয়সেই মাহবুব ইসলাম ওরফে কাটার রাসেল (২০) ও হৃদয়ের (২২) রয়েছে একাধিক কিশোর গ্যাং। তারা নিজেদের নিরাপত্তায় কোমরে রাখতো বিদেশি পিস্তল। গ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ে এলাকায় দাপট দেখিয়ে চলতো তারা। এলাকার মানুষজনও ভয়ে প্রতিবাদ করতো না। সম্প্রতি কলেজছাত্রকে খুনের পর ফিল্মি স্টাইলে গা ঢাকা দিয়েছিল তারা’— বলছিলেন র্যাব-১’র অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল।
রাজধানীর উত্তরখানে কলেজছাত্র খুনের ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের দুজনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা তুলে ধরেন র্যাব-১’র অধিনায়ক।
লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, “উত্তরা এলাকায় কাটার রাসেল ‘দি বস’ নামের একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখার জন্য ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল গড়ে তুলেছে সে। তাদের এমন চলাফেরার কারণে স্থানীয়রা তাদের এড়িয়ে চলতো। আর এতে নিজেদের ক্ষমতাবান মনে করতো তারা।”
তিনি বলেন, ‘কলেজছাত্রকে চুরিকাঘাত করে যেদিন খুন করা হয় সেদিন রিকশার চাকা থেকে ময়লা পানি শরীরে লেগেছিল কাটার রাসেলের। এর জের ধরে সে রিকশাচালককে মারধর করছিল। এ সময় কলেজছাত্র সোহাগ ওই রিকশার যাত্রী ছিল। সাধারণ বিষয় নিয়ে রিকশাচালককে মারধর করায় প্রতিবাদ করেন সোহাগ। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেল তার গ্রুপের নাদিম, সানি, মেহেদী, সাদ, সাব্বিরকে ডেকে নিয়ে এসে সোহাগকে মারধর করে এবং এক পর্যায়ে তার পেটে ছুরিকাঘাত করে। পরে স্থানীরা সোহাগকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
র্যাব-১’র অধিনায়ক বলেন, ‘এই ঘটনার পরে রাসেল ও হৃদয় নিজেরা আত্মগোপনে যাওয়ার পাশাপাশি দলের অন্য সদস্যদের আত্মগোপনে যেতে সহায়তা করে। এছাড়া পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে হৃদয় ও রাসেল দেশ ছাড়ার পরিকল্পনাও করছিল। কাটার রাসেল ও হৃদয় অত্যন্ত ধুরন্ধর। তারা বিদেশি অপরাধবিষয়ক টিভি সিরিয়াল দেখে পুলিশের হাত থেকে গ্রেফতার এড়ানোর নানা কৌশল অবলম্বন করছিল। এমনকি তারা মোবাইল বা অন্য প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে বিরত ছিল। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় তারা বারবার স্থান পরিবর্তন করছিল। ফলে তাদের ধরতে র্যাবের গোয়েন্দা সদস্যদের বেশ বেগ পেতে হয়। এমনকি তাদের গ্রেফতারে ম্যানুয়াল পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হই আমরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তলসহ আট রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।’
গ্রেফতারকৃতরা কীভাবে বিদেশি পিস্তল সংগ্রহ করেছিল?- এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব অধিনায়ক শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘ওই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো বড় সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের এসব অস্ত্র সরবরাহ করেছে। খুব শিগগিরই গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব বিষয়ে জানতে পারব। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে যেটি জানতে পেরেছি তা তদন্তের স্বার্থে এখনই বলা সম্ভব নয়।’
উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে ছুরিকাঘাতে নিহত হয় সোহাগ। ঘটনার পরদিন নিহতের বড় ভাই মেহেদী হাসান সাগর বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মাহবুবুল ইসলাম রাসেল ওরফে কাটার রাসেল, হৃদয়, সাদ, সাব্বির হোসেন ও সানির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এরপর তাদেরকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র্যাব।
কলেজছাত্র কাটার রাসেল কিশোর গ্যাং কোমর টপ নিউজ নিরাপত্তা পিস্তল সোহাগ খুন