Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কর্ণফুলীর প্রস্থ কমে অর্ধেক, হুমকিতে শাহ আমানত সেতুও’


২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:২৩ | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৫২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহখ্যাত কর্ণফুলী নদীর প্রস্থ কমে অর্ধেকে নেমেছে। এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৬৬ মিটার প্রস্থের কর্ণফুলী নদী এখন ৪১০ মিটারে ঠেকেছে। এর ফলে নদীর দক্ষিণ অংশে ব্যাপক স্রোত তৈরি হয়, যে কারণে বিপদজনক অবস্থায় পড়েছে শাহ আমানত সেতু। কর্ণফুলী নদী ভরাট হয়ে এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে মূলত দায়ী করেছেন জরিপে অংশ নেওয়া গবেষকরা।

গত ৩০ আগস্ট থেকে ২১ দিনব্যাপী ‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতু থেকে ফিরিঙ্গিবাজার মনোহরখালী পর্যন্ত এই প্রস্থ জরিপ করেছে।

বিজ্ঞাপন

জরিপ পরিচালনা কমিটিতে আছেন— আহ্বায়ক প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ, সদস্য চুয়েটের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত, কর্ণফুলী গবেষক ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, জাইকা’র সাবেক পরামর্শক নোমান আহমাদ সিদ্দিকী, পরিবেশ সংগঠক আলীউর রহমান, সার্ভে কমিশনার বেলাল উদ্দিন ও সার্ভেয়ার শৈবাল শর্ম্মা। সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

বিএস শিট, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রণীত কৌশলগত মহাপরিকল্পনা ২০১৪-এর সঙ্গে তুলনা করে এই জরিপ করা হয়। এতে মূলত কর্ণফুলী নদীর ওই অংশের প্রশস্ততা ও দখলের চিত্র তুলে ধরা হয়।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাহ আমানত সেতুর নিচে ৮৬৬ মিটার প্রস্থ ছিল ২০১৪ সালে। এখন তা ভাটার সময় দাঁড়িয়েছে ৪১০ মিটার। জোয়ারের সময় তা ৫১০ মিটার পর্যন্ত পাওয়া গেছে। রাজাখালী খালের মুখে প্রশস্ততা ৪৬১ মিটার পাওয়া গেছে, যা আগে ছিল ৮৯৮ মিটার। চাক্তাই খালের মুখে এখন নদীর প্রস্থ ৪৩৬ মিটার, যা আগে ছিল ৯৩৮ মিটার। মেরিনার্স পার্ক এলাকায় প্রস্থ ৯৮১ মিটার। বন্দর কর্তৃপক্ষ সেখানে খনন করেছে। খননের পর সেখানে প্রস্থ পাওয়া যাচ্ছে ৮৫০ মিটার। ফিরিঙ্গিবাজার মোড়ে নদীর প্রস্থ ছিল ৯০৪ মিটার, বন্দর কর্তৃপক্ষ খননের পর সেখানে নদী আছে ৭৫০ মিটার। বাকি অংশ বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইচ্ছামতো গাইড ওয়াল নির্মাণ করে চিরতরে বিলুপ্ত করে দিয়েছে বলে জরিপে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জরিপ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শাহ আমানত সেতুর উত্তর অংশে ৪৭৬ মিটার নদী ভরাট হয়ে গেছে। এতে জোয়ার-ভাটার সময় নদীর দক্ষিণ অংশে ব্যাপক স্রোত তৈরি হয়। স্রোতের তীব্রতার চাপ পড়েছে কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তে শাহ আমানত সেতুর সংযোগ সড়কের বর্ধিত অংশের পিলারে। এর ফলে শাহ আমানত সেতুও বিপদজনক অবস্থায় আছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জরিপে উঠে এসেছে, কর্ণফুলী সেতুর পশ্চিম পাশে রাজাখালী খালের পূর্ব পাড়ে বেড়া মার্কেট বস্তি, রাজাখালী ও চাক্তাই খালের সংযোগস্থলে সোনালী মৎস্য আড়ত, চাক্তাই খালের পশ্চিম পাশ থেকে ফিরিঙ্গিবাজার পর্যন্ত মেরিনার্স পার্কের পুরোটাই কর্ণফুলী নদী দখল করে গড়ে উঠেছে। কর্ণফুলীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ঠিক রাখতে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে মেরিন ড্রাইভ সড়কের কর্ণফুলী নদীর তীর ধরে গাইড ওয়াল তৈরির কথা বলা হয়েছে জরিপ প্রতিবেদনে।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ইচ্ছামতো ইজারা দেওয়ার কারণে নদীর এই অবস্থা দাঁড়িয়েছে। নদীর তীর ইজারা কোনোভাবেই দিতে পারে না। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ বারবার বিভিন্ন সংস্থাকে ইজারা দিয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে ইজারা বাতিল এবং নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। এছাড়া নিয়মিত নদী ড্রেজিং করে প্রয়োজনীয় নদী শাসনের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়। বন্দরকে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি নদীর পাড় স্থায়ীভাবে চিহ্নত করা, মেরিনার্স সড়কে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ এবং থেমে যাওয়া উচ্ছেদ অভিযান পুনরায় চালুর দাবি জানানো হয়।

জরিপ পরিচালনা কমিটির সদস্য মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর প্রস্থ অস্বাভাবিকভাবে কমে প্রায় অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে। এটার জন্য অনেক সংগঠন-সংস্থা দায়ী। কিন্তু মূল দায়টা চট্টগ্রাম বন্দরের। কারণ তারা ইচ্ছামতো বিভিন্ন সংস্থাকে নদীর তীর ইজারা দিয়েছে। নিয়মিত খনন তো করেই না, খননের নামে এমন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়, যারা অর্ধেক কাজ করে পালিয়ে যায়। টাকাগুলো গচ্চা যায়। সেই টাকার হিসাব আর কেউ করে না। নদী ভরাট ও ভূমি দখল হয়ে যাওয়ার দায় কোনোভাবেই বন্দর কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। অথচ বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনকে নিয়ে বসত, তাহলে সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ তো তাদের সঙ্গে বসে না।’

ছবি: শ্যামল নন্দী

কর্ণফুলী কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন জরিপের ফল প্রকাশ টপ নিউজ প্রশস্ততা প্রশস্ততা জরিপ

বিজ্ঞাপন

জীবন থামে সড়কে — এ দায় কার?
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫২

বাসচাপায় ২ কলেজছাত্র নিহত
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর