Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘হবু বরকে’ কানাডায় নেওয়ার আশ্বাসে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা নেন জান্নাত


১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:২৬

ঢাকা: এক সিনিয়র সিটিজেন ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে ঢাকা থেকে কানাডায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাদিয়া জান্নাত (৩৮)। এ ছাড়া বিয়ে করার নাম করে আরও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বনানী সুপার মার্কেট এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার ওই নারীকে গ্রেফতার করে। তার বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলায়।

সিআইডি শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, সাদিয়া জান্নাত এবং তার স্বামী মো. এনামুল হাসান সংঘবদ্ধভাবে এই প্রতারণার কাজ করতেন। ২০১৫ সাল থেকে সাদিয়া এই কাজ করে আসছেন। সাদিয়াকে গ্রেপ্তারের পর পুরান ঢাকার সেই ব্যবসায়ী ছাড়াও আরও সাতজন ব্যক্তি জানিয়েছেন তাদের কাছ থেকেও একইভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় সাদিয়ার কাছ থেকে তিনজন ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট, দশটি মুঠোফোন, সাতটি সিল, অসংখ্য ব্যবহৃত সিম, হিসাবের খাতা এবং একটি বেসরকারি ব্যাংকে ৪৮ লাখ টাকা জমা দেওয়ার রশিদ উদ্ধার করা হয়েছে।

পুরান ঢাকার প্রতারিত সেই ব্যবসায়ী ভোজ্য তেলের ব্যবসা করেন। দেশে সয়াবিন তেল আমদানিকারকদের প্রথম দিককার একজন তিনি। তার স্ত্রী মারা গেছেন। দুই ছেলে সন্তানের জনক তিনি। এ ঘটনায় গুলশান থানায় করা মামলায় প্রতারণার পুরো ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে ১২ জুলাই গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে প্রথম সাদিয়ার সঙ্গে তার দেখা হয়। তখন সাদিয়া জানান কানাডায় তার ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা আছে। তিনি এবং তার এক ভাই মিলে দেখাশোনা করেন। আলাপের একপর্যায়ে সাদিয়া পাত্র হিসেবে তাকে পছন্দ হয়েছে এবং বিয়ে করে কানাডায় নিয়ে যাবেন বলে জানান।

বিজ্ঞাপন

কথা অনুযায়ী ব্যবসায়ী ১৫ জুলাই সাদিয়াকে তার পাসপোর্ট দেন। এরপরই শুরু হয় টাকা নেওয়া। মামলায় ব্যবসায়ী বলেছেন, সাদিয়া কানাডার ভিসার আবেদনের জন্য প্রথম তার কাছে দেড় লাখ টাকা নেন। সেই টাকা দেওয়ার পর ভিসার জন্যই আরও ৭০ হাজার টাকা নেন। নগদ সেই টাকা দেওয়ার পর ট্রাভেল ডকুমেন্টস তৈরি করা বাবদ আইনজীবীকে দেওয়ার জন্য নেন আরও ছয় লাখ টাকা। এরপর ‘কানাডার সোশ্যাল সিকিউরিটির’ জন্য নেন ৬০ লাখ টাকা। ১২ আগস্ট সেই টাকা নেওয়ার পর রাতে সাদিয়া তাকে ফোন করে বিভিন্ন লোভ দেখাতে থাকেন। তিনিও তার মিষ্টি কথায় ভুলতে থাকেন।

ব্যবসায়ীর বর্ণনা অনুযায়ী এরপরই সাদিয়া অন্য ফন্দি আঁটেন। তিনি ব্যবসায়ীকে বলেন কানাডায় শীত বেশি হওয়ায় সেখানে তিনি টিকতে পারবেন না। বরং সেখানে ব্যবসায় খাটানো তার ২০০ কোটি টাকা ফেরত নিয়ে এসে দেশেই দুজন মিলে ব্যবসার প্রস্তাব দেন। ব্যবসায়ী সেই প্রস্তাবেও রাজি হন। তখন শুরু হয় কানাডা থেকে টাকা নিয়ে আসার যাত্রা।

ব্যবসায়ী বলেছেন, কানাডা থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ভ্যাট দেওয়ার কথা বরে ২৩ লাখ টাকা নেন সাদিয়া। এরপর সাদিয়া জানান, বাংলাদেশ সরকার টাকা আনার অনুমতি দিয়েছেন কিন্তু কানাডা সরকার টাকা পাঠানোর অনুমতি দেয়নি। সে জন্য কানাডা সরকারকে ৭২ লাখ টাকা দিতে হবে। সেই টাকা দেওয়ার পর সাদিয়া তার কাছ থেকে আরও দশ লাখ টাকা নেন। সেই টাকাটি তিনি নেন ২০০ কোটি আসার কুরিয়ার ফি হিসেবে।

ব্যবসায়ীর বর্ণনা অনুযায়ী বিয়ে করে কানাডায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সাদিয়া তার কাছ থেকে তিন দফায় টাকা নেন। আবার কানাডা থেকে ২০০ কোটি টাকা নিয়ে আসার কথা বলে আরও তিন দফায় টাকা নেন। সবি মিলে টাকা নেন এক কোটি ৮০ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

এরপর গত এক সেপ্টেম্বর গুলশান দুই নম্বরের একটি বিদেশি বহুজাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয়ের ভেতর থেকে একটি বক্স এনে তার হাতে ধরিয়ে দেন। সেখানে ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ডলার আছে বলে জানান। বক্সটি বাসায় নিয়ে খুলতে বলেন সাদিয়া। তার কথামতো বাসায় এসে ব্যবসায়ী যখন বক্সটি খোলেন তখন সেখানে সাদা কাগজের একটি বান্ডিল পান।

সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শেখ মো. রেজাউল হায়দার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাদিয়া জান্নাত মাধ্যমিক পাশ করতে পারেননি। পোশাক আশাক এবং কথা বার্তায় আধুনিকতার ছাপ থাকায় কানাডা প্রবাসী বলে লোকজনের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হন। প্রথম স্বামীকে তলাক দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার পরই তিনি এই প্রতারণার কাজ শুরু করেন।

ঢাকা এবং এর আশপাশে এখন পর্যন্ত তাদের ২০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

বর্তমানে জান্নাতুল ফেরদৌস দুইদিনের রিমান্ডে আছেন।

টপ নিউজ প্রতারণা সাদিয়া জান্নাত সিআইডি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর