পরিবারের দাবি ‘ধর্ষণ’, চিকিৎসক বলছে ‘আলামত মেলেনি’
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:০৯ | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:১২
নড়াইল: নড়াইলে চার বছরের এক শিশু ধর্ষিতা হয়েছে কি হয়নি এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া উঠেছে। শিশুটির পরিবারের দাবি, ওই গ্রামের অপু বিশ্বাস নামে এক তরুণ তাদের মেয়েকে মুঠোফোনে ছবি দেখানোর নাম করে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। তবে নড়াইল সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, মেয়েটি দুদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও তাকে ধর্ষণ করার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
গত ৩০ আগস্ট মধ্যরাতে ওই শিশুটিকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন ডা. সুব্রত নাগ। ওই চিকিৎসক জানান, মেয়েটিকে নার্স দেখেছেন। নার্সের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পরে ভিকটিমকে মেডিকেল বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়।
চার বছরের ওই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তির সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ‘টিম তারুণ্য হানড্রেড’ নামে সামাজিক এক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা রাসেল বিল্লাহ ও নড়াইল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম। পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে রাসেল বিল্লাহ বলেন, ‘চার বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে এরকম খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই এবং শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। অভিযুক্ত অপু বিশ্বাসের পরিবার স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিকেল রিপোর্ট মিথ্যা দিয়েছে।’
রাসেল আরও জানান, অভিযুক্ত অপু বিশ্বাসের বাবার কাছ থেকে এক টুকরো জমি কিনে শিশুটির বাবা-মা সেখানে ঘর তুলে বসবাস করছেন। সেই হিসেবে অপু বিশ্বাস তাদের প্রতিবেশী। শিশুটির বাড়িতে অপু বিশ্বাসের যাতায়াত ছিল।
নড়াইল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওইদিন হাসপাতালে আমিও ছিলাম। ডা. সুব্রত নাগ বলেছিলেন শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু পরে তিনি বক্তব্য ঘুরিয়ে ফেলেছেন।’
‘আমি অভিযুক্ত অপু বিশ্বাসের সঙ্গেও কথা বলেছি। সে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে এবং এই ঘটনার জন্য সে দুঃখও প্রকাশ করেছিল’ উল্লেখ করেন নড়াইল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম।
ওইদিনের বক্তব্য সর্ম্পকে জানতে চাইলে সুব্রত নাগ বলেন, ‘আমি মেয়েটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিনি। শিশুটি ধর্ষিতা হয়েছে কি হয়নি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। ওই শিশুটিকে মেডিকেল বোর্ডে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে একজন গাইনি ডাক্তার শিশুটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। মেডিকেল বোর্ড যে রিপোর্ট দিয়েছে সেটিই প্রকৃত সত্য।’
তার বক্তব্য খণ্ডিত আকারে প্রকাশিত হয়েছে বলেও দাবি করেন ডা. সুব্রত নাগ। বিষয়টি বিব্রতকর বলেও জানান ওই চিকিৎসক।
এদিকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের মামলাটি আদালতে ওঠে। শুনানিকালে আদালত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনে অসঙ্গতি পান। এ বিষয়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি আদালতে পাঠানোর পাশাপাশি স্বশরীরে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আদালত বলেন।
ওই দিন ধর্ষণের আসামি অপু বিশ্বাসের জামিন আবেদন করা হলেও বিচারক নিলুফার শিরিন জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
শিশুটির বাবা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়ের কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে আমরা জানতে পারি। মেয়ের সঙ্গে খারাপ কাজ করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
ছেলের পরিবার স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। থানায় মামলা হওয়ায় তিনি হুমকি-ধমকিও পাচ্ছেন বলে শিশুটির বাবা জানান।
নড়াইল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মশিউর রহমান বাবু বলেন, ‘একজন নারী চিকিৎসক ওই শিশুটিকে পরীক্ষা করেছেন। ধর্ষণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ভ্যাজাইনাল সোয়াব সংগ্রহ করা হয় সেখানেও কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। মার্ক অব ভায়োলেন্সের কোনো প্রমাণও মেলেনি।’
আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরও বলেন, ‘যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে তা সত্য। রিপোর্টের বিষয়ে কোনো সংশয় সৃষ্টির কারণ নেই।’