Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘শিক্ষক ছাঁটাই চুক্তির বাইরে হলে আইনি প্রতিকার সম্ভব’


৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:২২ | আপডেট: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:৫৪

ঢাকা: কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বেতন ঠিকমতো না দিলে, হঠাৎ করে ছাঁটাই করলে কিংবা নিয়োগপত্রের চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত কাজ করালে আইনের মাধ্যমেই এর প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। পরিশ্রমের বিপরীতে বেতন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির অধিকার। এর বাইরে কোনো অনিয়ম হলে কার্যবিধি আইন, বাংলাদেশ শ্রম আইন ও পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশনে মামলার মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।

বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা লিগ্যাল চেম্বার’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের এ পর্বের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: নিয়োগবিধি, বেতন, ছাঁটাই ও অন্যান্য’।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা ডটনেটের পক্ষে ব্যারিস্টার ইফ্ফাত গিয়াস আরেফিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও যুক্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী সম্পাদক ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ ফারুক।

অনুষ্ঠানে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দিব্যি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মঞ্জুরী কমিশন কমিটির পক্ষ থেকে সর্তক বার্তা দেওয়ার পর তারা শিক্ষক নিয়োগ, তাদের বেতন-ভাতা, কাজের চুক্তি কাগজে-কলমে ঠিক করে নেয়। তবে বাস্তবে গড়মিল রয়েছে।

এ বিষয়ে ইউজিসি’র কর্মপরিধি নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে তদারকি করার জন্য মঞ্জুরী কমিশন থেকে কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু মঞ্জুরী কমিটি শুধু তদন্ত করে পরামর্শ দিতে পারে, কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারে না। তারা তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট পেশ করেন। এরপর বিষয়টি সম্পূর্ণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত থাকে। আইনের ফাঁক থাকার কারণে অনেক কিছুর করার ইচ্ছা থাকলেও করা সম্ভব হয় না।

বিজ্ঞাপন

কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মের কথা তুলে ধরে অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমার সময়ে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তিনটা রিপোর্ট করি। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ নেয়নি। এমনকি যৌন হয়রানির রিপোর্ট পেলেও অভিযুক্তরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী থাকায় পার পেয়ে যায়। এ বিষয়ে আমাকে কয়েকবার হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছে। আমাদের মঞ্জুরী কমিটির তদন্ত করার ক্ষমতা আছে, কিন্তু এই কমিটিকে কোনো সিদ্ধান্ত এক্সিকিউট করার এখতিয়ার দেওয়া হয়নি। এজন্য তারা বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে আর সাটিফিকেট বিক্রি করে যাচ্ছে। তদন্ত হয় কিন্তু অ্যাকশন হয় না।’

অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৩, ৬, ৯, ১২ ৩৫, ৩৯ ও ৪৩ ধারায় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, নিয়োগ, কার্যপরিধি নিয়ে বলা হয়েছে। কেই যদি ঠিকমতো বেতন না পান, তাহলে সিভিল (১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি আইন) আইনে মামলা করতে পারবেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শুধু অনুমোদন দিচ্ছে মঞ্জুরী কমিশন। কিন্তু তাদের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। দ্বৈত ক্ষমতা বন্ধ করতে হবে। মঞ্জুরী কমিশনকে ক্ষমতা দিলে আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ হবে।’

ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ ফারুক বলেন, ‘বেতন না দেওয়ার কথাটা অনেক পুরনো কথা। কোভিড-১৯ কারণে এ অভিযোগটি আমাদের সামনে বেশি আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়েগুলোতে ৪৩ ধারা অনুযায়ী মঞ্জুরী কমিশন কমিটি নিজ উদ্যোগে তদন্ত করতে পারেন। কিন্তু এ পর্যন্ত তদন্ত কয়টা করেছে? আর সেই রিপোর্ট পেয়ে মন্ত্রণালয়ে কয়টা ব্যবস্থা নিয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্জুরী কমিশন মেনে নিয়েছে যে আইনে কিছু গ্যাপ রয়েছে।’

বেতন ও অন্যান্য সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে অনিয়ম হলে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ সালের ১, ৪,৬ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। মঞ্জুরী কমিশনের দিকে না তাকিয়ে থেকে ভুক্তভোগীরা শ্রম আদালতে মামলা করলে প্রতিকার পাবেন। শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করতে বেশি টাকাও কিন্তু খরচ হয় না।’

আলোচকরা বলেন, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান উন্নয়নকে সামনে রেখে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। এতদিন হয়তো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই নিয়মশৃঙ্খলা মানেনি। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারী-কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়গুলো তাদের বিধিমালা অনুযায়ী করতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ চাইলেই কাউকে ছাঁটাই করতে পারবে না। চাইলেই চুক্তিপত্রের বাইরের কোনো কাজ করাতে পারবে না। আর তা করতে চাইলে আইনের মাধ্যমেই তার প্রতিকার পাওয়ার উপায় রয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ছাঁটাই শিক্ষক নিয়োগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর