শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঝুঁকিতে ফেলা ঠিক হবে না
৩০ আগস্ট ২০২০ ১৭:৩৪ | আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২০ ২৩:৪৭
ঢাকা: ‘করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত স্কুল কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যেতে পারে’-বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।
শনিবার (২৯ আগস্ট) রাতে সেন্টার ফর স্যোসাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রিচার্স ফাউন্ডেশনের (সিসার্ফ) উদ্যোগে সারাবাংলা লাইটহাউজে ‘ভ্যাকসিন: করোনায় আশার আলো’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন।
শবনম আযীমের উপস্থাপনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।
ডা. আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই সময়ে স্কুল-কলেজ খুলে আমাদের সন্তানদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলা কোনোভাবেই উচিত হবে না। পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে। কারণ একটা বাচ্চা আক্রান্ত হলে, তার মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি সবই টেনশনে পড়ে যাবেন। ফলে এই সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোনোভাবেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলা উচিত হবে না।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগে আরও চিন্তাভাবনা করা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সব কিছুর বিষয়েই ভাবতে হবে। তবে প্রাইমারি স্কুল ও হাই স্কুলের শিক্ষার্থীর বিষয়ে বিশেষ জোর দিয়েছিলাম। কারণ একটা ক্লাসে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী থাকে। এসব শিক্ষার্থীদের পক্ষে সামাজিক দূরত্ব, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস করা সম্ভব হবে না। এছাড়া বাচ্চাগুলোর পক্ষে স্বাস্থ্যবিধিও যথাযথভাবে মেনে চলা কঠিন হবে। ফলে তাদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা অনেকদিন পরে স্কুলে গেলে দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি ও খেলাধুলা করবে, একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরবে। এতে করে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাবে। অবার স্কুলে অনেক স্টাফ রয়েছে, শিক্ষক রয়েছে, শুধু তাই নয়, বাচ্চাগুলো স্কুলে দিতে অনেক মায়েরা, অভিভাবরকরা স্কুলে যাবেন। শত শত অভিভাবক বাচ্চাগুলোকে স্কুলে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করবেন। ফলে বাচ্চা ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। বাচ্চারা সংক্রমিত হয়ে ঘরে ফিরলে তাদের মাধ্যমে মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, এমনকি ভাই বোনের মাঝেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য এখনই স্কুল খোলার কোনো দরকার নেই। এমনকি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ও খোলার দরকার নেই। কারণ অনেক ছাত্রছাত্রী হলে গাঁদাগাদি করে থাকে। সেখানে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে কি না কিংবা মানা সম্ভব হবে কি না। এ নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।’
ডা. আবদুল্লাহ বলেন, ‘ভ্যাকসিনের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে আগে বড়দের ভ্যাকসিন দিতে হবে। কারণ সব ভ্যাকসিনেই প্রথম অবস্থায় কম বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। ফলে করোনা ভ্যাকসিনে কতটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা বিবেচনা করতে আগে বড়দের মাঝে ভ্যাকসিন প্রযোগ করা হবে। তারপর শিশুদের মাঝে দেওয়া হবে। ততদিন আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। আর স্বাস্থ্যবিধি মানা কোনো কঠিন কাজ না।’
আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর প্রধান বলেন, ‘করোনার সময়ে যারা স্কুল কলেজ খুলেছে, দেখা গেছে সেখানে সংক্রমণ বেড়ে গেছে। বাচ্চারা আক্রান্ত হলে তাদের বাবা-মাসহ পরিবারের লোকজন অক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটা প্রমাণিত হয়েছে। সেখানে স্কুল কলেজ খুলে দেওয়ায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবার তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে অবকাঠামো। এই অবকাঠামোর মধ্যে বর্তমান সময়ে স্কুল কলেজ খুলে দেওয়া অসম্ভব। ইতোমধ্যে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হযেছে। এটা ভালো সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি ওই সময়ের মধ্যে পরিস্তিতি যথেষ্ট উন্নতি না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার মেয়াদ আরও বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অবকাঠামো কোনোভাবেই করোনা মোকাবিলার সক্ষমতা নেই। ফলে পরিস্থিতি যথেষ্ট উন্নতি না হলে তা খোলার কথা চিন্তা করাও উচিত হবে না।’