আজ প্রমাণিত— ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
২৬ আগস্ট ২০২০ ১৩:২৫ | আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২০ ১৬:৪৭
ঢাকা: ষড়যন্ত্রকারীরা শত চেষ্টা করলেও ইতিহাসকে মুছে ফেলতে পারেনি, ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট যে পরাজিত শক্তির উত্থান হয়েছিল, তারা আমাদের বিজয়কে নসাৎ করতে চেয়েছিল। আমি মনে করি, এখন আর সেই সুযোগ নেই। ইতিহাস তার আপন গতিতে চলে। ইতিহাসকে কেউ মুছতে পারে না— সেটা আজ প্রমাণিত সত্য।
বুধবার (২৬ আগস্ট) সকালে ৭ জুন ঐতিহাসিক ৬-দফা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিল। সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
এদিন বক্তৃতায় স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে ছয় দফা আন্দোলনের ভূমিকা ও প্রেক্ষাপটের কথা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই ছয় দফা দাবি ঘোষণার পর জাতির জনককে গ্রেফতার করা হয়। তখন আবার পশ্চিম পাকিস্তানের কিছু নেতা আর আমাদের দেশের এক শ্রেণির দালাল পাওয়া যায়। তারা নিজেদের সঙ্গে হাত মেলায়। তারা এখানে ছয় দফার বদলে আট দফা নিয়ে এসে হাজির। তখন আব্বা জেলে। আমার মা এব্যাপারে খুবে সচেতন ছিলেন। আমাদের অনেক বড় বড় নেতারা আট দফার দিকে ঝুঁকে গিয়েছিলেন— সেটি সত্যিই খুব লজ্জাজনক।
‘আমার মা ফজিলাতুন নেছা অত্যন্ত দৃঢ়চেতা ছিলেন। আমাদের ৩২ নম্বরের বাড়িতে সভা হলো, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। সেখানে ছয় দফা না আট দফা— এটা নিয়ে তুমুল বিতর্ক। সেখানে সিদ্ধান্ত হলো, আমরা একমাত্র ছয় দফাই মানব। এখানে আট দফার দরকার নেই। ঠিক এভাবে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই কিন্তু আমাদের এগুতে হয়েছিল,’— বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর যখন দেখল এভাবে কিছু হচ্ছে না, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে জাতির পিতাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলো। তখন তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলা হলো। আমাদের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমিও তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। কামালও তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছে। সেখানে আন্দোলন হয়, সংগ্রাম হয়। সারাদেশের মানুষ এই ছয় দফাকে লুফে নিয়েছিল। কোনো একটা দাবি এত অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ এমনভাবে গ্রহণ করতে পারে, তাতে অকাতরে বুকের রক্ত ঢেলে দিতে পারে— এটা সত্যি এক অনন্য অবস্থা। একমাত্র বাংলাদেশেই এটা সম্ভব হয়েছিল, সেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে।’
তিনি বলেন, জাতির পিতা কারাগারে ছিলেন, এ কথা সত্য। কিন্তু কারাগারে যখন আমরা সাক্ষাৎ করতে যেতাম, তখন তিনি মা’কে বিস্তারিত বলে দিতেন কী কী করতে হবে। মা এসে তখন সেটা পৌঁছে দিতেন পার্টির কাছে এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কাছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের লক্ষ্য ছিল যে করেই হোক এই মামলায় তাকে ফাঁসির রায় দিয়ে হত্যা করা। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে তখন এমনভাবে গণজাগরণ তৈরি হলো যে আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান বাধ্য হয়েছিল মামলা প্রত্যাহার করে নিতে। ঊনসত্তরের ২২ ফেব্রুয়ারি তাকে মুক্তি দেয়। সেটাও ছিল অদ্ভুত। ঠিক দুপুরের আগে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে একটা মিলিটারি গাড়িতে করে বঙ্গবন্ধুকে সোজা ৩২ নম্বরের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে কয়েক মূহূর্তে পালিয়ে চলে যায়। ওরা তখন মানুষের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত ছিল। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খবর পেয়ে বাড়ি চলে এসে দেখি, লোকে লোকারণ্য। এভাবেই কিন্তু ছয় দফার আন্দোলন এক দফায় পরিণত হয়।
‘ছয় দফার ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের বিজয় অর্জন। সেই দিক থেকে ছয় দফা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,’— বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতিহাস আসলে মুছে ফেলাই হয়েছিল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর আমাদের অনেকেই জানতেই পারেনি, ৭ মার্চের ভাষণও নিষিদ্ধ ছিল। এই ভাষণ কখনো কেউ শুনতে পারত না। এটা বাজাতে গিয়ে আমাদের আওয়ামী লীগের বহু নেতোকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। আস্তে আস্তে মানুষ সব জানতে পারছে। আমার খুব ভালো লেগেছে যে আমাদের নতুন প্রজন্ম তাদের যে আগ্রহ, তারা চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
ইতিহাসের অনিবার্যতায় আজ জাতির পিতার দর্শন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্ব জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। এমনকি জাতিসংঘ উদ্যোগ নিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে জাতিসংঘ এরই মধ্যে একটি স্ট্যাম্প রিলিজ করেছে। বিশ্বনেতারা বিভিন্ন দেশে অনেক কর্মসূচি নিয়েছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভা পরিচালনা করেন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সভায় বক্তৃতা পর্বের আগে ‘শতবর্ষে শত পুরস্কার’ শীর্ষক অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও সনদ তুলে দেওয়া হয়।
ফাইল ছবি
অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতা ছয় দফা জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি টপ নিউজ পুরস্কার বিতরণী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব জন্মশতবর্ষ