সীমান্তে হত্যা উদ্বেগজনক: নয়াদিল্লিকে ঢাকা
১৯ আগস্ট ২০২০ ২১:৪৮ | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২০ ২২:০৭
ঢাকা: দুইদিনের ঢাকা সফর শেষে বুধবার (১৯ আগস্ট) ফিরে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা। তার আগে ঢাকায় দুইদেশের পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে দেড় ঘণ্টার বৈঠক হয়। যেখানে সীমান্ত হত্যা, কোভিড ১৯ টিকা, মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি যৌথভাবে উদযাপনসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে সীমান্ত হত্যার বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রীংলার কাছে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বুধবার (১৯ আগস্ট) জানানো হয়, চলতি বছরের প্রথমার্ধে সীমান্তে যতগুলো হত্যার ঘটনা ঘটেছে, তা উল্লেখ করে ঢাকার পক্ষ থেকে বৈঠকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, সীমান্ত হত্যা দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির লঙ্ঘন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের পরিচয় দেবে বলে এই সময়ে ঢাকার পক্ষ থেকে আশা করা হয়।
নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে জানান হয় যে বিএসএফ এর কাছে এই বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং আগামী মাসে ঢাকায় দুইদেশের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্তায় জানান হয়, দুইদেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বার্তা পৌঁছে দিতে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা ঢাকা সফর করেন। ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সম্মানে বুধবার (১৯ আগস্ট) মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা-নয়াদিল্লি দুই পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকটি বেশ আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সকল বিষয় আলোচনা করা হয়। এর বাইরে চলমান কোভিড ১৯ পরিস্থিতি বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পায়। এই সময়ে নয়াদিল্লির সচিব ঢাকাকে আবারও জানিয়েছে যে, প্রতিবেশী সবার আগে, নরেন্দ্র মোদির এই নীতির আওতায় ভারতের কাছে বাংলাদেশ সবার আগে।
কোভিড ১৯ সংক্রমণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশি কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। কিন্তু এবারের ঢাকা সফরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে দেখা করার অনুমতি দেওয়ায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা।
চলমান কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতেও উন্নয়নের স্বার্থে দুইদেশের উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ অব্যাহত ছিল, বিশেষ করে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মত ভারতের জাহাজ চলাচল করেছে, এতে দুইদেশই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এই সময়ে ঢাকা নয়াদিল্লিকে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম দেওয়ায় এবং নয়াদিল্লি ঢাকাকে ১০টি রেলবগি (লকোমোটিভ) দেওয়ায় উভয়েই উভয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন তার কাউন্টার পার্টকে জানান, কোভিড ১৯ টিকার জন্য সহায়তা করতে ঢাকা প্রস্তুত আছে। এই টিকার পরীক্ষামূলক কার্যক্রমেও (ট্রায়াল রান) ঢাকা সহায়তা করতে চায়। এই সময় হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা জানান যে এই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ থাকবে। এ ছাড়া এই টিকা যাতে সুলভ মূল্যে বাজারে ছাড়া যায়, সে বিষয়েও ভারত মনযোগি বলে হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা জানান।
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন তার কাউন্টার পার্টকে অনুরোধ করেছেন যে তাবলিগের যে সদস্যরা লকডাউনের কারণে ভারতে আটকা পড়েছে এবং আসামের কারাগার যে ২৫ বাংলাদেশি জেলে বন্দি আছে, তাদেরকে যেন দ্রুত মুক্তি দেয়া হয়। জবাবে হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা জানান তারা সবাই দ্রুত বাংলাদেশে ফিরবে, ভারত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছে।
বার্তায় আরও জানানো হয়, উভয় দেশই বিশ্বের একাধিক রাজধানী, জাতিসংঘের প্রধান দপ্তর এবং একাধিক কূটনৈতিক মিশনে যৌথভাবে মুজিব বর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উৎসব করবে বলে বৈঠকে একমত পোষণ করেছে।