Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাকশাল, লীগের কোন্দল, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধু হত্যা: ইনু


১৭ আগস্ট ২০২০ ২২:৫৮ | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২০ ০৩:০২

ঢাকা: সত্তরের দশকে বিশ্বের প্রায় সব দেশের অস্ত্রের রাজনীতি ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশেও তখনকার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) উভয়ই অস্ত্রের রাজনীতি করেছে। তবে জাসদ রাজনৈতিকভাবে বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করলেও তার হত্যার চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত ছিল না। বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ (বাকশাল) গঠনের ফলে তখনকার নব্য ধনীদের অসন্তোষ, প্রমোশন নিয়ে সামরিক-বেসমরিক গ্রুপের অসন্তুষ্টি, সেনাবাহিনীর মধ্যেকার অসন্তোষ, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণেই ইতিহাসের অন্যতম নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

বিজ্ঞাপন

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সেই বীভৎসতার পেছনের কারণগুলো এভাবেই তুলে ধরলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সাবেক জাসদ নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান।

ইনু বলছেন, ইতিহাসের দায় মেটাতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র উদঘাটন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের কমিটি গঠন করা হলে জাসদ তাকে স্বাগত জানাবে। আর ড. মাহফুজুর বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের যে রাষ্ট্রীয় লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, তা বাস্তবায়নের জন্য ১৪ দলের কাজ করে যাওয়া উচিত।

সোমবার (১৭ আগস্ট) সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত আয়োজন সারাবাংলা ফোকাসে ‘বঙ্গবন্ধু হত্যায় রাজনৈতিক দায়’ শীর্ষক এক আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন। সারাবাংলা ডটনেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এমএকে জিলানী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। সারাবাংলা ডটনেটের ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও বেসরকারি টেলিভিশন জিটিভিতে এ আলোচনা সরাসরি প্রচারিত হয়।

আরও পড়ুন- বঙ্গবন্ধুর ‘রক্তাক্ত বিরোধিতার’ দায় এড়াতে পারে না জাসদ

সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি কেবল একজন ব্যক্তিকে বা একজন রাষ্ট্রপতিকেই হত্যা নয়, অথবা কেবল ক্ষমতার হাতবদল করার জন্য প্রতিপক্ষ কারও পদক্ষেপ নয় কিংবা কোনো বিচ্ছিন্ন একটি ব্যক্তি বা গ্রুপেরও ঘটনাও নয়, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কেবল ব্যক্তি মুজিবকেই হত্যা করা হয়নি, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার একটা অপচেষ্টা চালানো হয়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত— তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে বড় ধরনের ওলট-পালট হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত খুনি চক্র ফারুক, রশিদ, ডালিম— তারা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন সৈনিক। ১৫ আগস্টের পর যে সরকার ক্ষমতায় গেছে, সেটা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে একটি সরকার। যে মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিপরিষদের প্রায় সবাই সেখানে ছিলেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা খন্দকার মোশতাকের ৮৩ দিনের শাসনামলে তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে পাকিস্তানপন্থার দিকেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে ক্ষমতাটা আওয়ামী লীগের কাছেই থেকে যায়। আর সেই আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিসর্জন দিয়ে, ভোল পাল্টে পাকিস্তানপন্থার দিকে অবস্থান নেয়।

ইনু বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ওপর বর্তায়। তার সঙ্গে যুক্ত হয় একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তানি পক্ষ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীরা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পরে আওয়ামী লীগের বন্ধুরা এখন তদন্ত কমিশনের কথা বলছেন। তদন্ত কমিশনকে আমি স্বাগত জানাই। কিন্তু আওয়ামী লীগের বন্ধুদের অন্য দলের দিকে আঙুল না তুলে নিজের দলের ভেতরে দেখা উচিত। অন্য কাউকে দোষারোপ করার রাজনীতি যতদিন করবেন, ততদিন বঙ্গবন্ধুর আসল খুনি, বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলব আওয়ামী লীগের সেইসব নেতারা আড়ালেই থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর দায় মূলত আওয়ামী লীগের ওপরই বর্তায়।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘যুদ্ধ বা আন্দোলেনর মধ্য দিয়ে কোনো দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তার পক্ষে সর্বাত্মক সহযোগিতা-সমর্থন থাকার পরও বিরোধিতা থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারাও এরকম বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এ ব্যাপারে কোনো মুক্তিযোদ্ধার দ্বিমত নাই। বঙ্গবন্ধু সরকারপ্রধান হবেন, তাতেও কোনো দ্বিমত নাই। উনি দেশ পরিচালনা করবেন, তাতেও কোনো দ্বিমত নাই। আমরা জাসদ যারা করেছি, পরিষ্কারভাবে বলেছি— যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে একটি বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন করা উচিত এবং এই বিপ্লবী জাতীয় সরকারের নেতৃত্ব দেবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি চেয়ারম্যান বা সভাপতি হবেন। সেই বিপ্লবী সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পরাজিত শক্তিকে ধ্বংস করে দেবে, সামনের সারিতে যুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করবে, যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তাদের ধ্বংস করে দেবে এবং দেশ পুনর্গঠনে নিয়োজিত হবে। এটাই নিয়ম কিন্তু। আমরা সেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমরা এই প্রস্তাব দেওয়ার পর আওয়ামী লীগ ও ন্যাপ বিরোধিতা করেছে। যুদ্ধের সময় যারা চুরি-চামারি করেছে তাদের হাতে ক্ষমতা থাকবে না, বঙ্গবন্ধুর ভাষায় চাটার দলের হাতে ক্ষমতা থাকবে না, বরং যুদ্ধ যারা করেছে তাদের হাতে ক্ষমতা থাকবে— এই ছিল তখনকার বিতর্ক। প্রশ্ন ছিল— ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা পাকিস্তানিদের সঙ্গে রাজাকারি করেছে, সেইসব পাকিস্তানপন্থি অফিসারদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা থাকবে, নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতর থেকে নেতৃত্ব নিয়ে নতুন প্রশাসন সাজানো হবে? বিতর্ক ছিল গণতান্ত্রিক নাকি স্বৈরাচারী পথ অবলম্বন করা হবে?

আরও পড়ুন- জাসদ নয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার দায় আ.লীগের ওপর বর্তায়: ইনু

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন মারা যান, গোয়েন্দা প্রধান থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা, এনএসআই, এসবি’র প্রধানও পাকিস্তানপন্থি, পাকিস্তানের দালাল। তারা সবাই আলবদর-রাজাকারদের সঙ্গে জড়িত ছিল। কিভাবে একটা গোয়েন্দাপ্রধান পাকিস্তানপন্থি রাজাকার হয়? বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছেন— তার জন্য দীর্ঘ চক্রান্ত হয়েছে। সেই এই চক্রান্তের খবর জানানো সম্ভব হয়নি, কেউ জানতে পারেনি। কারণ গোয়েন্দাপ্রধানরাই ছিলেন পাকিস্তানপন্থি। পাকিস্তানের দালালি যারা করেছে, তারাই সারাদেশে ওসি থেকে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যনত ছিল। উনি সেই চক্রান্তেরই শিকার হয়েছেন।’

মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় পর্যন্ত জাসদের ভূমিকা তুলে ধরে ইনু বলেন, সারা পৃথিবীতে তখন সশস্ত্র বিপ্লব, আধা সশস্ত্র বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থানে সরকার ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। জাসদ সশস্ত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার নিয়ে গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান শুরু করে। জসদ কোনো গোপন কাজ করেনি। জাসদ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে গণবাহিনী গঠন করেছে। জাসদ বিপ্লবের লক্ষ্যে কাজ করেছে। সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে রাজনীতি করার কোনো চক্রান্ত জাসদ করেনি। সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরে যারা বিপ্লবে বিশ্বাস করে, তাদের উৎসাহিত বা অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত জাসদ কোনো হঠকারী কাজ করেছে কি না, সেটি ইতিহাস বিবেচনা করবে। রাজনীতিতে হঠকারিতা পরিমাপের একটি মাপকাঠি আছে। ভারতের নকশাল আন্দোলনকে কোনো বিচারে ফেলবেন? আমরা কোনোদিন বঙ্গবন্ধুকে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্য দিয়ে উৎখাত করার রাজনীতি করিনি, যে কারণ ১৫ আগস্টের পর আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলন করে দেখিয়েছি। খন্দকার মোশতাক জাসদের বহু নেতাকে হত্যা করেছে।

ইনু আরও বলেন, খুনের রাজনীতি তৎকালীন তৃতীয় বিশ্বে ওই ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে সরকার ও সরকারের বিরুদ্ধে আধাসশস্ত্র আন্দোলন চলেছে। আওয়ামী লীগের যত লোক অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াত, তার অর্ধেক অস্ত্রও তো জাসদের কাছে ছিল না। তারা তো অস্ত্র নিয়ে মিছিল করত। তখন ভারতে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করত, বিরোধী দলকে গুলি করে মারত। খুনোখুনি দুই পক্ষই করেছে। কিন্তু আমরা চক্রান্তের রাজনীতি করিনি। কোনোদিন তো উনার (বঙ্গবন্ধু) বাসভবনে আমরা মিছিল নিয়ে যাইনি। কোনোদিন তো আমরা উনার নামে কুৎসা রটনা করিনি। রাজনীতির কারণে উনার বিরোধিতা করেছি। উনার মৃত্যুর পর মোশতাকের বিরোধিতা করেছি। রাজনৈতিক কারণেই শেখ হাসিনার সরকারে আছি এবং থাকব, যেন দুর্নীতিবাজ ও চাটার দলরা আর ক্ষমতায় আসতে না পারে, বিএনপি-জামাত ও রাজকাররা যাতে ক্ষমতায় না আসতে পারে।

মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক ও সাবেক জাসদ নেতা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, তখন জাসদ গঠন ছিল ইতিহাসের দাবি। জাসদ গঠনের পেছনে বঙ্গবন্ধুর অবদান নেই— এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু নির্বাচন দিয়েছেন। নির্বাচন হলে জাসদ গঠন হওয়াটা কোনো অন্যায় ছিল না। জাসদ নির্বাচনে গেল। জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হওয়ার আগে দিন আওয়ামী লীগ নেতারা একজন জাসদ নেতাকে হত্যা করলেন। তখনই হত্যার রাজনীতি শুরু হলো। তখন অস্ত্র সবার হাতেই। মারপিট হলে অস্ত্র দিয়েই হবে। যথারীতি মারপিট শুরু হলো। জাসদের উচিত ছিল সেটাকে পাশ কাটিয়ে রাজনীতিকে গণতান্ত্রিক পন্থায় নিয়ে যাওয়া। আমাদের আক্ষেপ হচ্ছে জাসদ সেটাকে পুরোপুরি রাজনৈতিক পন্থায় নিয়ে যেতে পারেনি। আওয়ামী লীগের নেতারা অসম্ভব অত্যাচার করছিল। তারপরও যেহেতু বিরোধী দল করব, বঙ্গবন্ধুর মতো বিশাল রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে করব, আমাকে সময় নিয়েই, দরকার হলে ৮/১০ বছর সময় নিয়েই করতে হবে। আমরা সেটা না করে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়ায় মারধর শুরু হলো। হঠাৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও হলো। আমরা সেটা জানতাম না। আঞ্চলিক নেতা হিসেবে সেটা জানার অধিকার আমাদের ছিল। জাসদের বিপর্যয় হলো।

তিনি বলেন, সশস্ত্র জাসদ তখন আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে বাধ্য হলো। মারপিট সমানে হচ্ছে। জাসদ আওয়ামী লীগকে মারছে, আওয়ামী লীগ জাসদকে মারছে। কে বেশি মারছে, কে কম মারছে— সেটা কিন্তু খুঁজে বের করতে হবে। এক পর্যায়ে জাসদ গণবাহিনী গঠন করলো। একটি প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গণবাহিনী গঠন করে সরকারকে উৎখাত করা যায় না। চুয়াত্তরে বাকশাল গঠনের আগ পর্যন্ত জাসদের কার্যক্রম খুবই সীমিত ছিল। বঙ্গবন্ধু জাসদকে কখনো পাত্তা দিতেন বলে আমার মনে হয় না। একবার শুধু বলেছেন, অস্ত্র দিয়ে বিপ্লব হয় না, এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ব্ঙ্গবন্ধুর বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত যত বক্তব্য, সেটা যদি সংবলিত করা যায়, দলীয় চোর-বাটপার-বদমায়েশদের বিরুদ্ধেই কথা বলেছেন। মজুতদার, চোরাচালানের বিরুদ্ধে বলেছেন। বঙ্গবন্ধু এগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। পরে এসে চুয়াত্তরে দেখলাম আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, নব্য ধনীদের তাড়াতে হবে। উনারাও কিন্তু জাসদের বিরুদ্ধে বলেননি। বঙ্গবন্ধু বিশ্ব মোড়লের সহায়তা নিতেন, কিন্তু তাদের কাছে মাথা নত করতেন না। চরম দুঃসময়ের সময় বাকশাল গঠিত হলো এবং একসময় সেনাবাহিনী দ্বারা নিহত হলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে বেশকিছু কারণ উল্লেখ করে ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, আপনি যদি আমেরিকার বন্ধু হন, তাহলে আপনার শত্রুর প্রয়োজন হবে না। একাত্তর বা বাহাত্তরে এটি একটি প্রবাদে পরিণত হয়েছিল। বাকশাল দেওয়ার পর যে অসুবিধাটা হয়েছে, যারা নব্য ধনী, চোরাচালান করে বড়লোক হয়েছে তাদের একটি অসুবিধা হচ্ছিল। কারণ বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হলে রাজনীতিতে নব্য ধনীদের কোনো জায়গা থাকবে না। এটা একটা কারণ। সেনাবাহিনী একটি কারণ। প্রশাসনে প্রমোশন দেওয়া নিয়ে অস্থিরতা, প্রশাসনে অসন্তুষ্ট সামরিক ও বেসামরিক একটি গ্রুপ, আন্তর্জাতিক একটি গ্রুপ, আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ— বঙ্গবন্ধু হত্যা এই তিন গ্রুপের মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে। সেখানে জাসদকে এক হাজার মাইলের মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু হত্যার দায় রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের একটি অংশকে নিতে হবে, সেনাবাহিনীকে পুরোটা নিতে হবে। আমেরিকার কিছু দায় তো আছেই, পাকিস্তানও থাকতে পারে।

সত্তরের উত্তাল সময়ের চট্টগ্রামের এই জাসদ নেতা বলেন, জাসদকে কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত করা যাবে না। তারপরও আমরা বলেছি কমিটি হোক, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই করা হোক। তখন সব দলই খুনের রাজনীতি করেছে। আওয়ামী লীগও খুন কম করেনি। জাসদও করছে, আওয়ামী লীগও করছে। স্বাধীনতার পরে যেটা দরকার ছিল, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রূঢ়ভাবে শাসন। সেটা না করে সদ্য স্বাধীন বুর্জোয়া গণতন্ত্র কায়েম করতে গিয়েই কিন্তু এই ঝামেলাগুলো হয়েছে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম বিভিন্ন দল থেকে নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বে দেশ চালাতে। সেটা হলে হয়তো আমরা এতদিনে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতাম।

সবশেষে ড. মাহফুজুর রহমান বঙ্গবন্ধুর বাহাত্তরের সংবিধানের যে মূলনীতি, তা বাস্তবায়নের রাজনীতি করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলকে। বিশেষ করে সব স্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের যে পরিকল্পনা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন, তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে তাগিদ দেন তিনি।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ টপ নিউজ ড.মাহফুজুর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যা বঙ্গবন্ধু হত্যার দায় সারাবাংলা ফোকাস হাসানুল হক ইনু

বিজ্ঞাপন

রিশাদ-জাহানদাদে কুপোকাত সিলেট
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:২১

আরো

সম্পর্কিত খবর