Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নেট লাইন থেকে রাজস্ব চায় ডিএসসিসি, বিচ্ছিন্ন ৯০ হাজার সংযোগ


১৭ আগস্ট ২০২০ ০১:১১ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২০ ০২:১০

ঢাকা: পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে পরিত্যক্ত ও ঝুলন্ত ক্যাবল (ওভারহেড ক্যাবল) অপসারণ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গত ৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রমের ফলে ধানমন্ডি, ঝিগাতলা, হাজারীবাগ, ওয়ারী, খিলগাঁও, আজিমপুরসহ ডিএসসিসির বিভিন্ন এলাকার প্রায় দেড় লাখ ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে গ্রাহকের পাশাপাশি বিড়ম্বনায় পড়েন ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরাও। তবে এরই মধ্যে জোড়াতালি দিয়ে ৬০ হাজার গ্রাহককে সংযোগ দিতে পারলেও এখনও সংযোগ বিচ্ছিন্ন প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক।

বিজ্ঞাপন

এমন পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে রোববার (১৬ আগস্ট) বিকেলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সদস্যরা ডিএসসিসির রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে সংগঠনটির সদস্যদের জানানো হয়, ডিএসসিসি এলাকায় সড়ক ব্যবহার করে ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যবসা করতে হলে প্রত্যেক কোম্পানিকে বছরে ২৫ লাখ টাকা করে রাজস্ব দিতে হবে। তা না হলে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে আইএসপিএবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ কোনো ঘোষণা না দিয়ে ডিএসসিসি আমাদের ইন্টারনেটের ক্যাবলগুলো কেটে ফেলছে। এতে প্রায় দেড় লাখ গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফের নতুন তার দিয়ে সংযোগ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার গ্রাহককে। কিন্তু এখনও বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে ৯০ হাজারের মত ব্যবহারকারীর সংযোগ। ইন্টারনেট লাইন কেটে ফেলায় আমাদের শুধু ক্যাবল-ই ক্ষতি হয়েছে ৫-৬ কোটি টাকার মত। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরাও বিল দেবে না বলে জানিয়েছে। এখানেও অনেক ক্ষতি হবে।’

তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে আমরা চেয়েছিলাম, বিষয়টার একটা সমাধান। কারণ বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না রেখে ডিএসসিসি তারগুলো কেটে দিয়েছে। তাই আমরা একটা বিকল্প ব্যবস্থা প্রত্যাশা করে ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের জানালেন, এখন থেকে ক্যাবল সংযোগ নিতে হলে প্রত্যেক কোম্পানিকে বাৎসরিক ২৫ লাখ টাকা করে রাজস্ব দিতে হবে। কিন্তু ঢাকায় বিটিআরসি থেকে অনুমোদন পাওয়া কোম্পানি আছে প্রায় ১২শ’। প্রত্যেক কোম্পানিকে যদি ২৫ লাখ টাকা করে রেভিনিউ দিতে হয় তবে তার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। কিন্তু এত টাকা তো আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি ২৫ লাখ টাকা করে রাজস্ব দিতেও হয় তবে সে টাকা তো গ্রাহকের কাছ থেকেই নিতে হবে। কিন্তু গ্রাহক যেখানে ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য দাবি করছে সেখানে বাড়তি দাম হলে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে?’

আমিনুল হাকিম বলেন, ‘আজ আমরা তাদের শর্তগুলো শুনলাম। তবে এখনও আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। সোমবার (১৭ আগস্ট) আমরা ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গেও এ বিষয়ে বৈঠক করব। কারণ ডিএসসিসিকে ২৫ লাখ টাকা দেওয়া মানে ডিএনসিসিকেও ২৫ লাখ টাকা দেওয়া। কিন্তু দুই সিটিকে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা করতে হলে এটা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। তাই আগামীকাল ডিএসসিসি মেয়র কী সিদ্ধান্ত দেয় তার ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তাদের বাৎসরিক একটা রাজস্বের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ডিএসসিসি এলাকায় ক্যাবল টেনে ব্যবসা করতে হলে রাজস্ব তাদের দিতেই হবে। সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হলে আপনাদের জানাবো।’

রাজস্ব পেলে ব্যবসায়ীরা কী ধরণের সুবিধা পাবেন? জানতে চাইলে আরিফুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাদের মাটির নিচ দিয়ে সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সেইসঙ্গে প্রত্যেক কোম্পানিকে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শৃঙ্খলায় আনা হবে। এছাড়াও আনুষাঙ্গিক যেসব সুবিধা দিলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারবে সেটা করা হবে। এছাড়া নগরবাসী যেন কোনো অসুবিধায় না পড়ে সেগুলো বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে ইন্টারনেট প্রোভাইডারদের অভিযোগ, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ডিএসসিসি শুধু ইন্টারনেটের ক্যাবলগুলো কেটে দিচ্ছে। স্যাটেলাইট লাইনসহ অন্যান্য সংযোগ কাটছে না। এমন অভিযোগ সত্য নয় জানিয়ে ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরফান উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্যান্য লাইন রেখে দিয়ে শুধু ইন্টারনেটের ক্যাবল কাটা হচ্ছে- এমন অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। কারণ আমরা কোনটা কীসের লাইন সেটি দেখছি না। আমরা দেখছি, কোন কোন লাইনগুলো জঞ্জালে ভরা। কোন ক্যাবলগুলো পরিবেশের সৌন্দর্যহানি করেছে। আমরা সেসব ক্যাবলগুলো কেটে দিচ্ছি। আমাদের পক্ষে তো খোঁজ করা সম্ভব না কোনটা ডিস লাইন আর কোনটা ইন্টারনেট লাইন। কারণ সব লাইনই দেখতে একই রকম। আমরা কোনো পক্ষপাতমূলক কাজ করছি না। যদি তাই করতাম তবে আমার নিজের বাসাতেও ইন্টারনেট সংযোগটা বিচ্ছিন্ন হতো না।’

গ্রাহকদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে ডিএসসিসির এমন সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক? এমন প্রশ্নে ইরফান উদ্দিন বলেন, ‘গ্রাহকের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা না রাখার বিষয়ে ডিএসসিসির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারকরা ভালো বলতে পারবেন। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমি কেবল তা পালন করেছি। তবে আমার জানা মতে, গত তিন/চার বছর ধরে মেয়ররা বারবার বলে আসছিলেন জঞ্জালযুক্ত ক্যাবল সরিয়ে নেওয়ার জন্য। তাতে কেউ নজর দেয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেব‌ল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন-২০০৬ এর ২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী- সেবাপ্রদানকারী কেব‌ল‌ সংযোগের কাজে কোন সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার স্থানীয় কার্যালয়ের লিখিত অনুমোদন ব্যতিত কোন স্থাপনা ব্যবহার বা সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না। অর্থাৎ ক্যাবল ব্যবসায়ীরা অনুমতি ছাড়া খুঁটি বা ল্যাম্পপোস্ট ব্যবহার করতে পারবে না। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে অনধিক দুই বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয়দণ্ড দণ্ডিত হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রতিটি কোম্পানিই এ অপরাধটা করেছে। অনুমতি না নিয়েই ডিএসসিসির ল্যাম্পপোস্ট এবং বিদ্যুতের খুঁটিগুলোতে এমনভাবে ক্যাবল সংযোগ দিয়েছে যে, খুঁটিগুলো বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এরপরও আমরা কিন্তু জরিমানা করিনি। শুধু সংযোগ কেটে দিয়েছি; যাতে তারা শৃঙ্খলায় আসতে পারে।’ এরপরও যদি ইন্টারনেট প্রোভাইডাররা শৃঙ্খলায় না ফের তবে ভবিষ্যতে জরিমানা করা হবে বলেও জানান তিনি।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে ইন্টারনেটের তার কেটে ফেলায় ই-কমার্সে বড় প্রভাব পড়েছে। এতে ক্রেতারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। মোবাইল নেট ব্যবহার করায় উদ্যোক্তাদের খরচ বেড়ে গেছে। সব কিছুই ইন্টারনেটে। মোবাইল ইন্টারনেটে বাড়তি চাপ পড়ায় তা মাঝে মধ্যে ড্রপ করছে। যা আইটি খাতের জন্য খুবই অমঙ্গলজনক।’

তিনি বলেন, ‘লাইন কেটে ফেলা তো সমাধান না। বেসরকারি খাতগুলো নিয়ে আগে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। হঠাৎ লাইন কেটে ফেলায় আইটি খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। এতে অনেকে নিরুৎসাহিত হবে। সবক্ষেত্রে আইটি খাতকে স্বাগত জানানোর মনোভাব থাকতে হবে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কেন উনারা রেভিনিউ চান এটা পরিষ্কার নয়। এটা তো সিটি করপোরেশনের কিছু না। আইএসপিএবিকে বিটিআরসি নিয়ন্ত্রণ করে।’

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইলেক্ট্রিট তার, টেলিফোন লাইন, ইন্টারনেট ক্যাবল যখন একসঙ্গে অনেক জমা হয়ে যায় তখন তা পরিষ্কার করা কঠিন। দেশে ৯০ এর দশকের পর থেকেই এটা বাড়তে শুরু করেছে। তখন আমরা বলেছি, এটা দৃষ্টিদূষণ ও পরিবেশ দূষণ করছে। গত ২০ দশকে বিশ্বের সব দেশ তাদের তার আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে গেছে। আমাদের এখানে এখনও পরিকল্পনাই হয়নি। মেয়র আনিসুল হক উত্তর সিটিতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর সেটা এগোয়নি।

তিনি বলেন, ‘পূর্বাচলে যে আমাদের আধুনিক শহর সেখানে ভূগর্ভস্ত লাইনের ব্যবস্থাও করা হয়নি। এটা ভয়ংকর পরিবেশ দূষণকারী। নগরীতে গাছ লাগানো হয় পরিবেশের সৌন্দর্য্য বাড়াতে। কিন্তু তারের জন্য কিছু দিন পর পর গাছের ঢাল বা গাছ কাটতে হয়। এটি সবুজ নগরী গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও বড় রকমের প্রতিবন্ধকতা। আবার হঠাৎ করে তার কাটাও শোভনীয় নয়। এই করোনার সময়ে তো এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। কারণ এখন জীবন যাপনের ধরণই বদলে গেছে। সব কিছু ইন্টারনটের ওপর নির্ভর করছে।’

ইকবাল হাবিব বলেন, ‘এটার সমাধান হতে পারে সব কিছু আন্ডারগ্রাউডে বা ডাক্টিং সিস্টেমে নিয়ে যাওয়া। বিটিসিএল তাদের তারগুলো নিচে নিয়ে গেছে। স্বল্পকালীন সময়ে তাদের পোস্টগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। পরে বিদ্যুতের লাইন থেকে শুরু করে সবকিছু কম্বাইন্ড ডাক্টিং সিস্টেমে নিতে হবে। পুরো নগরী জুড়েই একটি স্মার্ট ডাক্টিং সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। সব সেবাকে একটি কম্বাইন্ড ডাক্টিং সিস্টেমে আনতে হবে। যিনি কম্বাইন্ড ডাক্টিং সিস্টেম পরিচালনা করবেন তিনি সবার কাছ থেকে পরিচালনা ব্যয় নেবেন বা পয়সা চার্জ করবেন। তবে এটা করতে হলে আন্তরিকতার সঙ্গে করতে হবে। তাড়াহুড়া করা চলবে না। কারণ আজ হোক বা কাল হোক, আমাদের সব তার আন্ডারগ্রাউন্ডে নিতেই হবে।’

২৫ লাখ টাকা ইন্টারনেট সংযোগ টপ নিউজ ডিএসসিসি রাজস্ব

বিজ্ঞাপন

ফর্মে ফিরেও বাবরের আক্ষেপ
৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:২১

কুরস্কে ইউক্রেনের নতুন হামলা
৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৪৯

আরো

সম্পর্কিত খবর