Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমার মায়ের মধ্যে কোনোদিন অহমিকা দেখিনি: প্রধানমন্ত্রী


৮ আগস্ট ২০২০ ১৪:৫৯ | আপডেট: ৮ আগস্ট ২০২০ ১৯:০২

ঢাকা: মা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০ তম জন্মবার্ষিকীতে স্মৃতিচারণ করে তার বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার বাবা যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে ফিরে এলেন। আমার মা প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী বলে তার মধ্যে কোনো অহমিকাবোধ কখনও ছিল না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মা কখনো সরকারি বাসভবনে এসে বসবাস করেননি। কাজের জন্য বাবা বাড়িতে সকালে নাস্তা করে চলে আসতেন। আবার দুপুরের খাবারটা আমার মা নিজের হাতে রান্না করে টিফিন ক্যারিয়ার করে পাঠিয়ে দিতেন। আব্বার খাবারটা তিনি সবসময় নিজের হাতে করতেন। তিনি যে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, পাকের ঘরে কেন রান্না করবেন, সেই সমস্ত চিন্তা তার ছিল না। তিনি জানতেন, তার নিজের হাতে করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৮ আগস্ট) সকালে গণভবন থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যম বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি যে, আমাদের দেশের মেয়েদেরও বঙ্গমাতার আদর্শ নিয়েই চলা উচিত। একটা ত্যাগের মধ্য দিয়ে একটা সংসারকে সুন্দর করা যায়, একটা প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর করা যায়, একটা দেশকে সুন্দর করা যায়, চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া; এর থেকে বড় আর কিছু হয় না। আমার মা সেই দৃষ্টান্তই রেখে গেছেন।’

‘বঙ্গমাতা ত্যাগ ও সুন্দরের সাহসী প্রতীক’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি একাডেমী ও গোপালগঞ্জে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীর কর্মসূচি উদযাপন করা হয়। বঙ্গমাতার জন্মদিনে সারাদেশে ৩২০০ দুস্থ নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন, মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে ১৩০০ নারীদের নগদ অর্থ প্রদান এবং গোপালগঞ্জ জেলার মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ল্যাপটপ বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি বাসভবনে এসে না থাকার কারণ সম্পর্কে মা বলতেন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আমি এ রকম সরকারি বাসভবনে শানশওকতে থাকব না। কারণ তারা বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হোক, সেটি আমি চাই না। এই যে বিলাসিতায় আমরা যেন গাঁ না ভাসাই তার বিষয়ে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। এ ব্যাপারে আমাদের প্রত্যেককে সবসময় সেই শিক্ষাই দিয়েছেন। কারণ শিক্ষা পেয়েছি বাবা-মায়ের কাছে মাটির দিকে তাকিয়ে চলার অর্থাৎ তোমার থেকে খারাপ অবস্থায় কে আছে তাকে দেখো; উপর দিকে তাকিয়ে না, ভাল কে আছে সেটা না। তোমার থেকে কে খারাপ আছে তার থেকে তুমি কত ভালো আছো সেটাই উপলব্ধি করো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মা কখনো নিজের দৈন্যতার কথা বলতেন না। কখনো কোন চাহিদা ছিল না। নিজে কোনদিন কিছু চাননি। সবসময় তিনি দিয়ে গেছেন। যেহেতু আমার মায়ের বাবা-মা মৃত্যুবরণ করেন অনেক ছোট বয়সে, তাই তার দাদা অল্প বয়সেই বিয়ে দেন এবং সমস্ত সম্পত্তি কিন্তু আমার মা এবং খালার নামে লিখে দেন। সেই সম্পত্তি থেকে তিনি যে অর্থ উপাজর্ন করতেন। সেটা তিনি জমিয়ে রাখতেন এবং আমার বাবা যেহেতু ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করত, সেটি তার হাতেই তুলে দিতেন। এভাবেই সময় মানুষকে দেওয়ার একটা মানসিকতা তার মাঝে ছিল।’

‘সবচেয়ে বড় কথা, রাজনৈতিক অঙ্গণে বিভিন্ন সময় যখন একটা কঠিন সিদ্ধান্তের বিষয়। সেখানে আমি দেখেছি, আমাকে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের অনেক বড় বড় অভিজ্ঞ নেতারাও যেখানে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারেননি হয়ত বা একটা ভুল সিদ্ধান্ত দিতে গেছেন। সেখানে আমার মা ঠিক সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছেন’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন আমার বাবাকে গ্রেফতার করতে এসেছিল তখনও কিন্তু তাদের গ্রেফতার করার একটা উদ্দেশ্য ছিল, তাকে হত্যা করা। কিন্তু তার (মা) সামনে দাঁড়িয়ে হত্যা করতে পারেনি। আর আমাদের দুভার্গ্য যে, বাংলাদেশ আমার বাবা নিজে সৃষ্টি করলেন। যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী তার নিজের হাতে সৃষ্টি। পাকিস্তান আমলের সেনাবাহিনীর সদস্যরা মেজরের উপরে কোনো প্রমোশন পেত না। আর স্বাধীন দেশে মেজরদের নিজের হাতে প্রমোশন দিয়ে তিনি মেজর জেনারেল করেছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেজর জেনারেল জিয়া থেকে শুরু করে মেজর হুদা, নূর, হারুন, কর্নেল ফারুক, কর্নেল রশিদ, কর্নেল ফারুক তো আমাদের বাড়িতে ডিউটিতেই ছিল সিকিউরিটির জন্য। তারাই খুন করল, তারাই হত্যা করল। আর মেজর ডালিম, ডালিমের শ্বাশুড়ি-বউ তো সর্বক্ষণ আমাদের বাসায়। এমনকি ৩০ জুলাই বাংলাদেশ ছেড়ে জার্মানিতে যাই আমি আর রেহানা। ২৭ তারিখে জয়ের জন্মদিন। জন্মদিনে খুব ফূর্তি করতাম না। খুব ঘরোয়াভাবে করতাম। সেদিন কিন্তু ডালিমের শাশুড়ি এসে হাজির। তাদের দাওয়াত-টাওয়াত লাগত না। যখন তখনেই আসত। সেদিনও এসেছে। সেটা তো আমরা নিজেরাই দেখে গেলাম। তারপরও কত বেঈমানি মুনাফেকি তারা করেছে ? আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন?’

১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহতদের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই রকম একটা জঘন্য ঘটনা। কিন্তু আমার মা, তিনি তো জীবন ভিক্ষা চাননি। তিনি তো নিজে বাঁচতে চাননি। তিনি সাহসের সঙ্গেই সেখানে একথাই বলেছেন, আমার স্বামীকে হত্যা করেছো, আমি তার কাছেই যাব। সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। কাজেই জীবন মরণে তিনি আমার বাবার একজন উপযুক্ত সাথী হিসাবেই তিনি চলে গেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে তার জন্মদিন। যিনি তার জন্মেও তিন বছর পর থেকেই পিতামাতা সব হারিয়ে সারাটা জীবন শুধু সংগ্রামই করে গেছেন। কষ্টই করে গেছেন। কিন্তু এই দেশের স্বাধীনতা; এই স্বাধীনতার জন্য তিনি যে কত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন, সেটা আমরা নিজেরাই জানি। এই দেশ স্বাধীন হবে। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আসবে। বাংলাদেশের মানুষ ভাল থাকবে। আব্বার যে আদর্শটা সেই আদর্শটা তিনি খুব সঠিকভাবে নিজে ধারণ করেছিলেন।’ আর সেটাকে ধারণ করেই তিনি নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করে দিয়ে গেছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘কোনদিন সংসারের কোন ব্যাপারে তিনি আমার আব্বাকে কখনো কিছু বলেননি। কোন কিছু চাননি। শুধু বলেছেন, তোমাকে এগুলো দেখার লাগবে, বাকি আমি সব দেখবো, করবো। ঠিক সেইভাবেই করে গেছেন তিনি। যার ফলে আমার বাবা নিজে সম্পূর্ণভাবে একটা দেশের জন্য কাজ করার একটা সুযোগ পেয়েছেন। আমি মনে করি যে, আমাদের দেশের মেয়েদেরও এই আদর্শ নিয়েই চলা উচিত। তিনি যে একটা ত্যাগের মধ্য দিয়ে একটা সংসারকে সুন্দর করা যায়, একটা প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর করা যায়, একটা দেশকে সুন্দর করা যায়, চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া এর থেকে বড় আর কিছু হয় না। আমার মা সেই দৃষ্টান্তই রেখে গেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এ দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। মুজিববর্ষ আমরা উদযাপন করছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। কিন্তু এই করোনাভাইরাস আমাদের সমস্ত কাজগুলোকে বাধাগ্রস্ত করল। এখানে কিছু করার নেই। কারণ সারা বিশ্বব্যাপী সমস্যা। তারপরও আমি মনে করি যে, আমরা এই অবস্থা থেকে অবশ্যই উত্তরণ ঘটাবো এবং বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।’ যেখানে আমি মনে করি, আমার মায়ের আত্মত্যাগটাও বৃথা যাবে না। লাখো লাখো শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না বলে যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর