তাড়াহুড়োর করোনা টিকা নিয়ে উন্নত বিশ্বে ‘অনাস্থা’
৭ আগস্ট ২০২০ ১২:৩৬ | আপডেট: ৭ আগস্ট ২০২০ ১২:৪৫
কোভিড-১৯ মহামারি ঠেকাতে টিকা তৈরির দৌড়ে মরিয়া বিভিন্ন দেশ। এই তাড়াহুড়োর করোনা প্রতিষেধক নিয়ে এরই মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে উন্নত বিশ্বের মানুষের মধ্যে। এই টিকা আসলেও স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ হবে কি না – তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খবর রয়টার্স।
চলতি বছরের আগস্ট মাস অবধি, বিশ্বজুড়ে অন্তত ২০০ করোনা টিকা উদ্ভাবনের কাজ চলছে। ২০টির বেশি টিকা মানব দেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগও শুরু হয়েছে।
যেখানে অন্য সব রোগের ক্ষেত্রে টিকা তৈরিতে দশকের বেশি সময় লেগেছিল। সেখানে, আট মাসের মধ্যেই করোনা টিকা বাজারে আনার ব্যাপারে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। দৌড়ে এগিয়ে আছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া।
এদিকে, ভ্যাকসিন কনফিডেন্স প্রজেক্টের শীর্ষ কর্মকর্তা হাইডি লারসন বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, করোনা টিকার জন্য এমন তড়িঘড়ি করা রাজনীতিবিদদের জন্য ভালো কিন্তু সাধারণ মানুষ মনে করেন, এত তাড়াহুড়ো ভালো না।
তিনি আরও বলেন, এ বছরের মধ্যেই কোভিড-১৯ এর টিকা চলে আসবে – এমন ঘোষণা দ্বিধান্বিত মানুষের দ্বিধা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। কারণ তারা মনে করতে পারে যে, তাহলে এই রোগ তেমন জটিল না।
টিকা অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষগুলো বারবার তাড়াহুড়োর কারণে জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের আপস না করার কথা বললেও তাতে ভরসা রাখতে পারছেন না অনেকে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে, যেখানে টিকার উপর আস্থাহীনতা আগে থেকেই রয়েছে।
গত মে মাসে ১৯ দেশের মানুষের ওপর চালানো এক জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ শতাংশ মানুষ কেবল বলছেন, কোভিড-১৯ এর টিকা এলে তারা তা গ্রহণ করবেন।
জরিপে দেখা যাচ্ছে, করোনা টিকার ওপর সবচেয়ে বেশি আস্থা রয়েছে চীনাদের। আর সবচেয়ে বেশি অনাস্থা রাশিয়ানদের।
এছাড়াও, ইউরোপের দেশগুলোতে টিকার প্রতি সন্দেহ তুলনামূলকভাবে বেশি। ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রতি আস্থাহীনতার সঙ্গে নানা ভুয়া শঙ্কাও এর কারণ।
অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তথ্য নিয়ে ভ্যাকসিন কনফিডেন্স প্রজেক্ট দেখেছে, জুন নাগাদ ৪০ শতাংশ ব্রিটিশ কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়ী ছিল। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়েও তাদের ছিল নেতিবাচক মনোভাব।
পাশাপাশি, চিকিৎসা সাময়িকী ল্যান্সেটে গত মে মাসে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে ফরাসি বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন টিকা নিয়ে দ্বিধান্বিত মানুষের হার গত মার্চের শুরুতে ১৮ শতাংশ থেকে মাসের শেষে ২৬ শতাংশে বেড়ে গিয়েছিল। যখন টিকাটি আসবে তখন এই আস্থাহীনতা একটা বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বলছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা।
এ ব্যাপারে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারের (ডিডব্লিউবি) নেতা কেইট এল্ডার বলেছেন, টিকার বিষয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের সতর্ক হওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞদের সবাই বলছেন, মানুষের মধ্যে টিকার উপর এই আস্থাহীনতা কাটাতে না পারলে, তা বড় ঝুঁকির কারণ হবে।