৩ মাসের মধ্যে সিনহা হত্যার বিচার ও দোষীদের ফাঁসি চায় রাওয়া
৫ আগস্ট ২০২০ ১৮:০৮ | আপডেট: ৫ আগস্ট ২০২০ ২০:৪০
ঢাকা: দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে আগামী তিন মাসের মধ্যে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার বিচার সম্পন্ন এবং দোষী ব্যক্তিদের ফাঁসি কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া)। দাবি আদায় না হলে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার (৫ আগস্ট) বিকেলে রাওয়া হেলমেট হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান রাওয়া’র প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) খন্দকার নুরুল আফসার।
সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার সব আসামিকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানোর দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার সাহাকে সাসপেন্ড করে অন্তরীণ রাখার দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিফাতসহ মামলার সব সাক্ষী এবং তাদের পরিবারের নিরপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
রাওয়া’র প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) খন্দকার নুরুল আফসার বলেন, ‘আমরা সুশৃঙ্খল বাহিনী। কোনো দিন কোনো বিষয়ে আমরা রাস্তায় নামিনি। কিন্তু আমাদের একজন সাহসী সহকর্মীর নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা ব্যথিত, ক্ষুব্ধ। আমাদের দাবি আদায় না হলে আমরা মাঠে নামতে বাধ্য হব। আমরা হয়তো উশৃঙ্খল কিছু করতে পারব না। কিন্তু জোরে কথা বলতে পারব। প্রয়োজন হলে আমরা জোরে কথা বলব।’
আরও পড়ুন-
পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজরের মৃত্যু: তদন্ত কমিটি
মেজর সিনহার মাকে টেলিফোন, বিচারের আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর
‘সিনহা হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন ঘটনা, সেনা-পুলিশ যৌথ তদন্ত চলছে’
পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহার মৃত্যু: আরও ‘শক্তিশালী’ তদন্ত কমিটি
‘এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার নির্দেশ অনুযায়ী যে কর্মতৎপরতা শুরু হয়েছে, তাতে রাওয়া পরিবার সন্তুষ্ট-খুশি। দাবি অনুযায়ী দ্রুত বিচার কাজ সম্পন্ন হলে এবং দোষীরা যথাযথ শাস্তি পেলে আমাদের আর মাঠে নামতে হবে না। আর যদি দাবি পূরণ না হয়, তাহলে মাঠে নামা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না,’— বলেন খন্দকার নুরুল আফসার।
মামলার তদন্ত ভার র্যাবে ওপর ন্যাস্ত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা পুলিশ এবং সিআইডি থেকে তদন্ত টিম গঠন করা হয়। এ ঘটনার ক্ষেত্রেও হয়তো তাই হবে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা তৃতীয় একটা পক্ষের তদন্ত চাই, যেন সবগুলো তদন্ত রিপোর্ট একখানে করে প্রকৃত সত্যটা বের করে আনা যায়।’
খন্দকার নুরুল আফসার বলেন, ‘তবে এই ঘটনার জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীকে আমরা দায়ী করছি না। কোনো ব্যক্তির অপরাধ নির্দিষ্ট কোনো বাহিনীর ওপর চাপানোর পক্ষপাতী আমরা নই। আমরা কেবল সিনহা হত্যার বিচার চাই। এই বিচার কাজের সঙ্গে যেন কোনো প্রকার রাজনীতি জড়িয়ে না যায়।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন রাওয়া প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) খন্দকার নুরুল আফসার। দাবিগুলো হলো— ১. আগামী তিন মাসের মধ্যে দ্রুত আদালতের মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন এবং দোষী ব্যক্তিদের ফাঁসি কার্যকর করা; ২. অনতিবিলম্বে সব আসামিকে (ভবিষ্যৎ তদন্তের মাধ্যমে যাদের নাম আসবে তারাসহ) গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো; ৩. কক্সবাজারের এসপিকে অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার, এই মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা, তথ্য গোপন করে মিডিয়াতে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া ও একমাত্র চাক্ষুস সাক্ষী সিফাতের বিরুদ্ধে দুইটি কাল্পনিক ও বানোয়াট মামলা রুজু করার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া; ওসি প্রদীপকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো; ৫. সিফাত, ট্রাকচালকসহ সব স্বাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; ৬. বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো একটি ভিন্ন মন্ত্রণালয় (ভ্যাটারান মন্ত্রণালয়) গঠন করে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের নিরাপদ ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জীবনযাপনে সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করা; ৭. সময় নষ্ট না করে দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিল করা; ৮. বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী পুলিশ বাহিনীকে সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জবাবদিহিমূলক আইন প্রণয়ন করে সেই অনুযায়ী বাহিনীকে পুনর্গঠিত করা; ৯. কোনোভাবেই যেন এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বাস্তবায়িত না হয়, সেদিকে সদয় দৃষ্টি কামনা; এবং ১০. রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে রাওয়া’র জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া।
গত শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাত ৯টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে মারা যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান। এ ঘটনা তদন্ত করতে প্রথমে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলিকে আহ্বায়ক করে গত ১ আগস্ট তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে একই দিন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সদস্য রেখে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ ঘটনায় আজ বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) নেতৃত্বে সেনা ও পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কক্সবাজার পরিদর্শন করেছেন। তারা সেখানকার সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে সেনাপ্রধান ও আইজিপি এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নেন।
যৌথ ব্রিফিংয়ে তারা বলেন, পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহার মৃত্যুর ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন বলে মনে করছে দুই বাহিনী। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জয়েন্ট এনকোয়ারি টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির ওপর সেনাবাহিনী ও পুলিশের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
৩ মাসের মধ্যে বিচারের দবি অবসরপাপ্ত সেনাকর্মকর্তা টপ নিউজ পুলিশের গুলিতে মৃত্যু মেজর সিনহা রাওয়া