‘সিনহা নিহতের ঘটনা বিচ্ছিন্ন, যৌথ তদন্ত চলছে’

কক্সবাজার: টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের নিহত হওয়ার ঘটনাটিকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে মনে করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ। ওই হত্যাকাণ্ড তদন্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি যৌথ তদন্ত কমিটি (জয়েন্ট এনকোয়ারি টিম) গঠন করা হয়েছে। তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। এই তদন্ত কমিটির ওপর সেনাবাহিনী ও পুলিশের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।

বুধবার (৫ আগস্ট) কক্সবাজারে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ এ কথা বলেন।

এসময় দুই বাহিনীর প্রধান আরও বলেন, মেজর সিনহার নিহতের ঘটনাকে ব্যবহার করে কেউ কেউ দুই বাহিনীর সম্পর্কে ফাঁটল ধরানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কারও উসকানিতে দুই বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হবে না।

আরও পড়ুন-

পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজরের মৃত্যু: তদন্ত কমিটি

মেজর সিনহার মাকে টেলিফোন, বিচারের আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর

পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহার মৃত্যু: আরও ‘শক্তিশালী’ তদন্ত কমিটি

ব্রিফিংয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ বলেন, আজকে আমি এখানে (কক্সবাজার) সেনা সদর দফতরের সিনিয়র কলিগদের নিয়ে এসেছি। এখানে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকও (আইজিপি) তার সিনিয়র কলিগদের নিয়ে এসেছেন। আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য একটাই— গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারে মেজর সিনহার মৃত্যুর যে ঘটনা নিয়ে আলোচনা। সে কারণেই আমরা এখানে এসেছি। এখানকার সেনাবাহিনী ও পুলিশের সিনিয়র অফিসার যারা আছেন, তাদের সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমি সেনাপ্রধান হিসেবে এবং ড. বেনজীর পুলিশের আইজি হিসেবে সবার সঙ্গে মতিবিনিময় করেছি, আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি, তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।

সেনাপ্রধান বলেন, এই ঘটনায় আমরা মর্মাহত, পুলিশ বাহিনীর সবাইও মর্মাহত। তবে এই ঘটনাটিকে আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে চাই। এই ঘটনার আলোকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি জয়েন্ট এনকোয়ারি টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে এই টিম কাজ শুরু করেছে। এই টিমের প্রতি আমাদের সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা আশা করব, তারা নিরপেক্ষেভাবে তদন্ত করে সত্য তুলে আনবেন।

তিনি বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে, সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত যারা, তারাই দায়ী। সেটার দায়িত্ব কোনো প্রতিষ্ঠানের হতে পারে না। এনকোয়ারি টিম যাদের দোষী সাব্যস্ত করবে, তারা তাদের দোষের প্রায়শ্চিত্ত করবে। এখানে কোনো প্রতিষ্ঠান কাউকে সহযোগিতা করবে না, কারও বিপক্ষেও যাবে না।

জেনারেল আজিজ আরও বলেন, আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমেই আমরা সবাই জানতে পেরেছি, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কথা দিয়েছেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। যারা দোষী, তাদের বিচার হবে। সেই প্রক্রিয়া যেন ব্যাহত না হয়, সেটি আমাদের সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সবার চেষ্টা করা উচিত, তদন্ত যেন নিরপেক্ষে ও সুষ্ঠু হয়, সামগ্রিকভাবে সেই পরিবেশে তৈরিতে সহায়তা করা। আমরা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সেই চেষ্টা করব, পুলিশ বাহিনীও করবে। আমরা আশা করি, আপনারাও (সাংবাদিক) এই কাজে সহায়তা করবেন।

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ সেনাপ্রধানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন, তারা সব ধরনের প্রভাবমুক্ত হয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। দয়া করে আমাদের বাহিনীবিরোধী, দেশের স্বার্থবিরোধী উসকানিমূলক আচরণ কেউ করবেন না। এই সংকটকালে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, যেন এই সংকটে আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি।

গত শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাত ৯টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে মারা যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান। এ ঘটনা তদন্ত করতে প্রথমে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলিকে আহ্বায়ক করে গত ১ আগস্ট তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে একই দিন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সদস্য রেখে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

টপ নিউজ পুলিশের গুলিতে মেজর নিহত বাংলাদেশ পুলিশ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মেজর সিনহা যৌথ ব্রিফিং সিনহা হত্যাকাণ্ড