Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চামড়ার বাজারে ধস: গরু ১০০-২০০, ছাগল ২৫-৩০ টাকা


২ আগস্ট ২০২০ ০৯:৪২ | আপডেট: ২ আগস্ট ২০২০ ১৬:৪২

জয়পুরহাট: জয়পুরহাটে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। জেলার বাজারগুলোতে গতবারের চেয়ে চার ভাগের এক ভাগ দামে চামড়া বেচতে হচ্ছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। বিগত বছরগুলোতে জেলার বিভিন্ন বাজারে প্রতিটি গরু চামড়া বিক্রি হয়েছে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়; এবার তা ১০০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আগে যেখানে প্রতিটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়; এবার তা আকারভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার অনেক জায়গায় এত কম দামেও চামড়া বিক্রি না হওয়ায় অবহেলায় তা মাটিতে লুটাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

চামড়া বাজারে এই ধসের শিকার মধ্যস্বত্বভোগী ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দিশেহারা। আর যেসব হতদরিদ্র মানুষ কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা থেকে একটা অংশ পেয়ে থাকে প্রতিবছর, এবার তাদের ভাগ্যেও জুটবে না কাঙ্ক্ষিত অর্থ। জয়পুরহাট সদর উপজেলার হেলকুন্ডা গ্রামের আনিছুর রহমান, কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের গোলাম রব্বানী, ক্ষেতলাল উপজেলার দাশড়া গ্রামের হানিফ হোসেনসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার কোরবানিদাতারা জানান, বিগত ১০ বছরের চামড়ার এমন মন্দা বাজার দেখেননি তারা।

বিজ্ঞাপন

চামড়ার বাজার ধসের কারণে লোকসানের শিকার জেলার প্রায় সব মৌসুমি ব্যবসায়ী। জয়পুরহাট জেলা শহরের নতুনহাট এলাকার শহিদুল ইসলাম ও জামালগঞ্জ বাজারের মতিউর রহমানসহ মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির চামড়ার এই আকস্মিক দরপতনে দিশেহারা মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা। তারা প্রতি বছর কোরবানির সময় দুয়েক দিনের এ ব্যবসায় টাকা খাটিয়ে ভালো লাভ করেন। তবে এবারের দরপতনে লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রত্যেককে।

তারা বলেন, আগে যেখানে প্রতিটি গরু চামড়া একহাজার থেকে বারোশ’ টাকায় কিনে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, সেখানে এবার তা ১০০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এজন্য ক্রেতার কাছ থেকে আমাদের আরও কমদামে কিনতে হচ্ছে। এছাড়া আগে প্রতিটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হতো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়; এবার তা আকারভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য অনেক চামড়াই বিক্রি হচ্ছে না, মাটিতে পড়ে রয়েছে। আর এভাবে লবণছাড়া পড়ে থাকলে চামড়াগুলো পচে যাবে।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক ফড়িয়া জানান, সীমান্তে কড়াকড়ি না থাকলে তারা ভারতে চামড়া পাঠিয়ে কিছু লাভের মুখ দেখতেন। এবার সেটিও হচ্ছে না। পুঁজি সংকট, ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনা ইত্যাদি কারণে চামড়ার দাম কমে গেছে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিকেও চামড়ার দাম কমার কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।

জয়পুরহাট শহরের চামড়া ব্যবসায়ী সাজু হোসেন বলেন, ‘ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনা রয়েছে লাখ লাখ টাকা। হাতে টাকা না থাকায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে চামড়া কিনতে পারছি না। ফলে বাজারে চাহিদা কম থাকায় চামড়া দাম এমনিতেই কমে গেছে।’

চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। এতে করে দেশের স্থানীয় বাজারে আপাতত চামড়া কেনাবেচা করতে হচ্ছে। ফলে চাহিদা খানিকটা কম হওয়ায় দরপতন ঘটছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস হাসান টিটো জানান জানান, জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্তে এলাকা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকা তারকাঁটা ঘেরা, বাকি ১৮ কিলোমিটার সীমান্তে তারকাঁটা নেই। চোরাকারবারিরা মূলত এই জায়গাটিকেই তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই এই জায়গাগুলো সব সময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। চামড়া পাচার রোধে এবারও সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে রফতানি বাড়ানোর পাশাপাশি চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানরি মালিকদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

গরু চামড়ার বাজার ছাগল জয়পুরহাট ধস মৌসুমি ব্যবসায়ী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর