Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরকারি প্রণোদনা ও ত্রাণ পায়নি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বড় অংশ: এমজেএফ


৩০ জুলাই ২০২০ ১৯:১০ | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০ ২২:৩৪

ঢাকা: দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ করোনাকালে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা ও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। সংস্থাটি বলছে, তিন পার্বত্য জেলাসহ সমতলের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মাত্র ২৫ শতাংশ পরিবার এই সহায়তা পেয়েছে।

বুধবার (২৯ জুলাই) এমজেএফ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এ তথ্য দেওয়া হয়। এমজেএফের সহযোগী সংগঠনগুলো তাদের প্রকল্প এলাকা থেকে এ তথ্য দিয়েছে বলে জানানো হয়। গণমাধ্যমে পাঠানো এমজেএফের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সহযোগী এনজিওদের তথ্য অনুযায়ী— ২১ হাজার ৮২৬ জন দলিত ও হরিজন, ২৯ হাজার ৬৩১ জন প্রতিবন্ধী ও ৪৯ হাজার ২৩৯ জন জেলে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে সরকারি কোনো সহায়তা পাননি। অন্যদিকে তিন পার্বত্য জেলা ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মাত্র ৪ হাজার একশটি উপকারভোগী পরিবার সরকারি সুবিধা পেয়েছে, যা এসব জনগোষ্ঠীর শতকরা ২৫ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় বেকারত্ব ও অভাব বাড়ছে এবং সমতলের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর একটি বড় অংশ না খেয়ে বা একবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

এমজেএফের ওয়েবিনারে বলা হয়, মাঠ পর্যায় থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আপৎকালীন সমস্যাগুলো তুলে এনে সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরাই ছিল এই আলোচনার লক্ষ্য। এছাড়া করোনাকালে দেওয়া সরকারের প্রণোদনা সহায়তা যেন আরও কার্যকরভাবে বিতরণ করা সম্ভব হয় এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে যেন বিশেষভাবে সহায়তা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়, এই উদ্দেশ্যগুলো সামনে রেখেই এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, সিপিডি’র ডিসটিংগুইসড ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ডিএফআইডি’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুডিথ হারবার্টসন, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভসের নির্বাহী পরিচালক মেঘনাগুহ ঠাকুরতা ও নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন। এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকেও প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বলয়কে আরও ব্যাপক করে ভাবতে হবে। আমরা বেসরকারি সংস্থাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই। সরকারকে কেন আহ্বান জানাতে হবে? সবাই এগিয়ে এলে সরকার সবার সঙ্গে কাজ করবে। আলোচনায় যেসব সমস্যার কথা উঠে এসেছে, সেগুলোর উত্তর দিন।

সঞ্চালক শাহীন আনাম বলেন সরকার অনেক কিছুই করছে। কিন্তু বণ্টনটা সুষ্ঠু করতে হবে। আমাদের এখন এমনভাবে কাজ করতে হবে, যেন কেউ পিছিয়ে না থাকে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রচলিত দরিদ্র যারা আছেন তারা ছাড়াও  মধ্যবিত্তরা অনেকেই নতুন করে বিপদে পড়েছেন। এই ২ থেকে ৩ কোটি মানুষ নতুনভাবে বিপদে পড়েছেন।

ডিএফআইডি’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুডিথ হারবার্টসন বলেছেন, দেশের অনেকেই এখনো সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বাইরে আছেন। করোনার কারণে পুরোবিশ্বেই সমস্যা চলছে। তবে ব্রিটিশ সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি তাদের দায়িত্ব অব্যাহত রাখবে।

এমজেএফ আয়োজিত অনলাইন বৈঠকে বলা হয়, সরকার করোনাকালে ৫০ লাখ দুঃস্থ মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। আর এই বিতরণ কাজ চালানোর জন্য ৮ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দও ধরা হয়েছিল। কিন্তু জুলাইয়ের ৭ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ১৬ লাখ মানুষ এই টাকা পেয়েছেন। বাকি ৩৪ লাখ মানুষ এখনো সেই সহায়তা পাননি।

এমজেএফের প্রকল্প এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারের ত্রাণ তাদের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছেনি। কারণ স্থানীয় সরকারের দ্বারা করা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপকারভোগী তালিকায় অনেক গড়মিল রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, শতকরা ৮২ ভাগ এলাকায় ত্রাণ দেওয়ার জন্য উপকারভোগীদের তালিকা তৈরির সময়ে রাজনৈতিক পরিচয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এমনকি যথাযথ তথ্য-উপাত্তের অভাবে বলাও যাচ্ছে না যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ঠিক কতজন মানুষ চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন অণ্বেষণ জানিয়েছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব বেড়েছে শতকরা ৩ ভাগ।

হিজড়া, জেলে, আদিবাসী, হরিজন ও প্রতিবন্ধীদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা জানান, তাদের কেউ কেউ এককালীন সাহায্য পেলেও অধিকাংশ ব্যক্তিই করোনাকালে কোনো সরকারি সহায়তা পাননি। হরিজনদের পক্ষ থেকে বলা হয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দিনরাত কাজ করেছেন, কিন্তু তারা কোনোরকম পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস বা কোনো সুরক্ষা সরঞ্জামই পাননি। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রণোদনা ভাতার ঘোষণা থাকলেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য কোনো প্রণোদনা নেই।ভাতাও পেয়েছেন তাদের খুব অল্পসংখ্যক ব্যক্তি।

জেলেরা করোনাকালে কোনো সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। এ ক্ষেত্রে কেবল সুষ্ঠু বণ্টনের অভাবে তারা বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তারা আবার জেলে আইডি কার্ড দেওয়ার দাবি জানান।

এমজেএফ ওয়েবিনার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রণোদনা ভাতা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সরকারি সহায়তা

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর