প্রধানমন্ত্রীকে জাফরুল্লাহর চিঠি, খালেদাকে দেখতে যাওয়ার অনুরোধ
২৭ জুলাই ২০২০ ২২:৫০ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ০২:৪৯
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে ঈদের দিন খালেদা জিয়ার বাসভবনে তাকে দেখতে যাওয়া অনুরোধ করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ। লিখেছেন, ‘ঈদের দিন সময় করে খালেদা জিয়ার বাসস্থানে যান। এতে দেশবাসী খুশি হবে এবং বঙ্গবন্ধু হেসে বলবেন— ভালো করেছিস, মা।’
আট পৃষ্ঠার এই চিঠি সোমবার (২৭ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চিঠির শুরুতে ড. জাফরুল্লাহ লিখেছেন, অতীতে আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এই চিঠি লিখছি। আশা করি, কেউ না কেউ আমার এই চিঠিটি আপনার নজরে আনবেন এবং আমি একটি প্রাপ্তিস্বীকারপত্র পাব। প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটাই একজন নাগরিকের আকাঙ্ক্ষা।
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, হাসপাতালে ভর্তির জন্য কোনো দেশের নাগরিকদের তাদের প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন লাগে না। কোভিড-১৯ আক্রান্তই হোক অথবা কোভিডমুক্ত অন্য কোনো রোগাক্রান্ত ব্যক্তি হোক, হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত দেন ওই হাসপাতালের পরিচালক। কার্যত ডিউটিরত চিকিৎসক, নার্স বা ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার। কিন্তু বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবে কি না, তার সিদ্ধান্ত দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। কেন্দ্রিকতার এরকম নিদর্শন পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই।
ডা. জাফরুল্লাহ লিখেছেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন নেই, এমনকি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল, গণডায়ালাইসিস সেন্টারেরও। আলাদা আলাদা অনুমোদন মানে আলাদা তদবির, আলাদা ব্যয়, আলাদা দরাদরি। অবশ্য মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দক্ষতা প্রদর্শন মিডিয়ায় আলোড়ন তৈরি করে বটে।
চিঠিতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি, রোগ নির্ণয় কেন্দ্র অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এমন নিয়মাবলী করেছে, যা পূরণ প্রায় অসম্ভব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্থির করে দেন কয়টি পায়খানা, প্রস্রাব খানা থাকবে, কয়জন ডিপ্লোমা পাস নার্স থাকতে হবে। ভবিষ্যতে হয়তো বা হাসপাতালের বিভাগের সংখ্যা আরও বাড়বে। যেমন— বায়োকেমিস্ট্রি, সেরোলোজি, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ইমিউনোলজি, হিস্টোপ্যাথলজি এবং আরও কত কী! হাসপাতালের অনুমোদন থাকলে কেন আলাদা আলাদ বিভাগ চলবে না? হাসপাতালের প্রত্যেক বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা অনুমোদন থাকতে হবে কেন? অনুগ্রহ করে সরকারি চাঁদা কত বেড়েছে, তার খোঁজ নিন। হয়রানি ও দুর্নীতি একত্রে চলাফেরা করে।
সাধারণ বিষয়কে কঠিন অঙ্কে পরিণত করা কি যুক্তিসঙ্গত— চিঠিতে সে প্রশ্নও রেখেছেন ডা. জাফরুল্লাহ। লিখেছেন, সুলভে যৌক্তিক চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার সবার। কিন্তু নিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনার সরকারের। অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার লোকের ইউনিয়নে দু’জন চিকিৎসকের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত না করতে পারলে সার্বজনীন চিকিৎসা সেবার কথা চিন্তা করা আকাশ-কুসুম ভাবনা।
মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক বৈষম্যকে দুর্নীতির আরেক সোপান বলে উল্লেখ করেন ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চৈনিক ভ্যাকসিন ট্রায়ালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ অনভিপ্রেত। সুলভে সার্বজনীন চিকিৎসা সেবা প্রাপ্যতার জন্য যা করণীয়, তা আপনি করেছেন কি? ভারতীয় সেবা কোম্পানির প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছেন, কিন্তু কেন?
নিজেকে বোকা মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, দেশের উন্নয়নের জন্য আপনি কঠিন পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু লক্ষ্য অর্জন থেকে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছেন। সঙ্গে বাড়ছে আপনার একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা। দেশের এই কঠিন সময়ে আপনার নিজ দলের পুরোনো সহকর্মী এবং অন্য সব রাজনীতিবিদকে সঙ্গে নিয়ে আপনাকে অগ্রসর হতে হবে। তাদের নিশ্চিত করতে হবে, সুশাসনের লক্ষ্যে আগামী নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন নির্বাচন। কোনো চালাকির নির্বাচন নয়, দিনের নির্বাচন রাতে নয়। হয়তো বা সফলতা আপনার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
চিঠিতে তিনি লেখেন, আগামী মাসে অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধা সম্বলিত আইসিইউ ইউনিট চালু করবে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এখানে চিকিৎসা নিতে একজন রোগীর প্রতিদিন সর্বসাকুল্যে খরচ পড়বে তিন হাজার টাকার মতো। আপনি কি অনুগ্রহ করে এই আইসিইউ ইউনিট উদ্বোধন করবেন? সুস্থ থাকুন, আমলা ও গোয়েন্দাদের থেকে সাবধানে থাকুন। রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে ডেকে নিন। খোদা হাফেজ।
খালেদা জিয়া খালেদাকে দেখতে যাওয়ার অনুরোধ টপ নিউজ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি