Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্ধারিত সময়ের আগেই হাটে আসছে কোরবানির পশু


২৪ জুলাই ২০২০ ২০:২৯ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০০:৫৮

ঢাকা: নিয়ম অনুযায়ী ঈদুল আজহার ৪ দিন আগ থেকেই হাটে পশু কেনা-বেচার জন্য আনা হয়। কিন্তু এবার রাজধানী ঢাকার সব অস্থায়ী হাটগুলোতে নির্ধারিত সময়ের আগেই আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। এতে পশুবাহী ট্রাকগুলোর বাড়তি চাপে যানজটসহ নানা ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। সেই সঙ্গে রয়েছে করোনার ঝুঁকি। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে দুই সিটি করপোরেশন নিশ্চুপ থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে ছাড় দেওয়া হবে না।

বিজ্ঞাপন

দুই সিটি করপোরেশনের সূত্রে জানা গেছে, এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১১টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ৫টিসহ মোট ১৬ টি অস্থায়ী পশুর হাটে কোরবানির পশুর বেচা-কেনার জন্য ইজারা দিয়েছেন করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। আর এ সব হাটের প্রস্তুতির জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ জুলাই ২৭ জুলাই পর্যন্ত দুই দিন। আর ২৮ জুলাই থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত মোট পাঁচদিন চলবে পশু কেনা-বেচা। এ সময়ের আগেই কোনোভাবে পশুবাহী ট্রাক রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারবে না বলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু এ সবের তোয়াক্কা না করেই বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করেছে কোরবানি হাটের পশু। এরইমধ্যে সবকটি হাটেই পশু নিয়ে আসতে দেখা গেছে। যদিও অনেক হাটের প্রস্তুতি এখনও শেষই হয়নি।

বিজ্ঞাপন

তবে দুই সিটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই হাটে পশু আনলেও তেমন কিছু করার নেই। তবে যদি নির্ধারিত সময়ের আগে পশু বিক্রি করে আর সে খবর বা কোনো অভিযোগ কেউ করপোরেশনকে দিয়ে থাকে তবে ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়েছে দুই সিটি।

সরেজমিনে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির বেশ কয়েকটি হাটে ঘুরে দেখা যায়, এরইমধ্যে হাটের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। দুয়েকটি এখনও প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোনো কোনো হাটে বাঁশের খুঁটি, ছামিয়ানা টানানো হয়ে গেছে। পশু বিক্রেতারাও পশু নিয়ে নিজেদের পছন্দের জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন। তবে এখনও তেমন মিলছে না ক্রেতা। ব্যাপারীরা গরু-ছাগল নিয়ে অপেক্ষায় সময় কাটাচ্ছেন।

লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, দনিয়া কলেজ মাঠ, ভাটারা সাঈদ নগর হাটসহ বেশ কয়েকটি অস্থায়ী পশুর হাটের ব্যাপারী এবং আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাপারীরা ভালো জায়গা দখল করতে নির্ধারিত সময়ের আগেই হাটে চলে এসেছে পশু নিয়ে। আর আসার আগেই তারা আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলেই এসেছেন। এতে ব্যাপারীরা বলছেন, তাদের আসতে বলার পর তারা হাটে এসেছে। আর আয়োজকরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের নিয়মানুযায়ী সময় থাকে ৫ দিন। এ অল্প সময়ে পশু বেচা কেনা তেমন সুযোগ থাকে না। এতে ব্যাপারী যেমন বিপাকে পড়েন তেমন কাঙ্ক্ষিত হাসিল না পেলে ব্যবসা ভালো হয় না। তাই আসতে বলা।

মুন্সীগঞ্জ থেকে ৯টি খামারি গরু নিয়ে দনিয়া হাটে এসেছেন ব্যাপারী মানিক মিয়া। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকালে আসছি। এখনও কাস্টমারের দেখা নেই। খড়-কুড়া খাওয়াচ্ছি। যত তাড়াতাড়ি বিক্রি হবে ততই খড়-কুড়ার বাড়তি খরচ থেকে বেঁচে যামু।’

নির্ধারিত সময়ের আগে কেনো আসলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো সিটি করপোরেশনের নিয়ম জানি না। এটাতো হাটের আয়োজকরা বলতে পারবে। তবে আমাদেরকে আসার কথা বলছে বিধায় আমরা আসছি। অনুমতি না থাকলে তো আসতে পারতাম না।

অপর এক ব্যাপারী আব্দুল সঈদ বলেন, গতবার পটুয়াখালী থেকে গরু নিয়ে আসার সময় ফেরী ঘাটে সমস্যা ছিল। এতে দুইটা গরু মারাও গেছে। এবার তাই আগেই চলে আসলাম। এখন বিক্রি হইলেই বাঁচি।

নির্ধারিত সময়ের আগে কিভাবে হাটে পশু আসলো এমন প্রশ্নে হাটের আয়োজকদের একজন মুনির উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ব্যাপারীরা বারবার ফোন দিচ্ছে আসার জন্য। তাই বলছি নিজ দায়িত্ব থাকতে পারলে আসুক। তবে নির্ধারিত সময়ের আগে বিক্রি হবে না। যদিও ব্যাপারীরা চায় সব সময় দ্রুত পশুটা বিক্রি হউক। এতে বাড়তি খরচ থেকে বেঁচে যাবে এটা তাদের মত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন সারাবাংলাকে বলেন, `নির্ধারিত সময়ের আগে কেউ যদি পশু আনে তবে এতে আমাদের কিছু করার থাকে না। কিন্তু কেউ যদি নির্ধারিত সময়ের আগে বিক্রি করে থাকে আর সেটি যদি আমরা জানতে পারি তবে অবশ্যই ইজারাদারতের শর্ত ভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’‘

একই কথা বললেন ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে সাধারণ ব্যাপারীরা আসতে শুরু করে। এটা প্রতি বছরই হয়ে থাকে। তবে এতে যেন দুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমরা ইজারাদারদের নির্দেশনা দিয়েছি। মূলত জনদুর্ভোগ হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এসব নিয়ন্ত্রনে নিয়োজিত আছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুশিলের (ডিএমপি) সিনিয়র সহকারি কমিশনার (এসি) মফিজুর রহমান পলাশ সারাবাংলাকে বলেন, পশু হাটে আনা নেয়ায় কারণে কোনো জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে অবশ্যই পুলিশ ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহন করবে। এ জন্য প্রতিটি স্পটে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর রয়েছেন।

এদিকে, করোনার সংক্রামন এড়াতে হাটগুলোতে এখনও স্বাস্থ্যবিধি কোনো ব্যবস্থা নিতে দেয়া যায়নি। তবে হাট ইজারাদাররা বলছেন, বিক্রি শুরুর সময় সে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য তাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

ভাটারার হাট ইজারাদারের তত্ত্বাবধায়ক খুরশিদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধির জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। হ্যান্ডস্যানিটাইজারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে যখন ক্রেতারা হাটে আসবে। এখন তো সবে মাত্র গুরু আসতেছে। বিক্রি শুরু হয়নি।

এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা বাধ্যতামূলক। ডদি কোনো হাটে এটি মানা না হয় তবে ইজারা বাতিলও করা হবে। সে নির্দেশনা ইতোমধ্যে ইজারাদারদের দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, করোনার সংক্রামন এড়াতে আমরা এবার অনলাইনেও পশু বিক্রির ব্যবস্থা করে দিয়েছি ডিজিটাল হাট নামে একটি প্লাটফর্মে। সেখানে দুই থেকে তিন হাজার পশুর তালিকা রয়েছে চাহিদা অনুযায়ী আরও সরবরাহ করা হতে পারে। এর মাধ্যমে আমরা মনে করি একদিকে হাটে না গিয়ে যেমন ঘরে বসেই কোরবানির পশু কেনা যাবে। অন্যদিকে, সংক্রামনের ঝুঁকিও হ্রাস পাবে।

এদিকে, দেশে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু থাকায় অন্যান্যবারের মত এবার দেশের বাহিরে থেকে কোন পশু আসছে না বলে জানিয়েছেন মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী এস এম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, আমাদের এবার চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পশু দেশেই রয়েছে। তাই এবার বাহিরে থেকে কোনো পশু আমদানি করা হচ্ছে না। সেই সঙ্গে প্রতিটি কোরবানির পশু স্বাস্থ্য সম্মত কিনা সেটিও পরীক্ষা করতে মন্ত্রণালয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ঈদুল আজহা করোনা মোকাবিলা টপ নিউজ নভেল করোনাভাইরাস

বিজ্ঞাপন

জীবন থামে সড়কে — এ দায় কার?
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫২

আরো

সম্পর্কিত খবর