Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিরাপদ, তৈরি হয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা


২০ জুলাই ২০২০ ২১:৪৮ | আপডেট: ২১ জুলাই ২০২০ ০০:৩৩

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিনটি মানব শরীরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ভ্যাকসিনটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগের পর এটি মানব শরীরের জন্য নিরাপদ বলেও প্রমাণিত হয়েছে। এই ফলকে ‘অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক’ বলে অভিহিত করলেও ভ্যাকসিনটি করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট কি না, সেটি নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

তারা জানিয়েছেন, ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের ওপর এই ভাইরাসটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগের ধাপটির পথে এগিয়ে গেছেন তারা। ওই ধাপে সফল হলে ভ্যাকসিনটি বাণিজ্যিক উৎপাদনের পথে চূড়ান্ত পা ফেলবে। তবে মানবশরীরে প্রথম ধাপে ট্রায়ালের পরই ভ্যাকসিনটির ১০ কোটি ডোজের অর্ডার দিয়ে রেখেছে যুক্তরাজ্য সরকার।

আরও পড়ুন- ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও সফল রাশিয়ার করোনা ভ্যাকসিন!

বিবিসির খবরে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে অক্সফের্ডের এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এক হাজার ৭৭ জনের শরীরে এই ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়েছিল। ভ্যাকসিনটি তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি ও টি-সেল তৈরি করেছে, যেগুলো করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।

এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে জেনেটিক প্রকৌশলের মাধ্যমে পরিবর্তিত একটি ভাইরাস থেকে। এই ভাইরাস শিম্পাঞ্জিদের সাধারণ ঠান্ডার (কমন কোল্ড) কারণ হিসেবে কাজ করে থাকে। ‘ChAdOx1 nCoV-19’ শিরোনামের এই ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ওই ভাইরাসটিকে এমনভাবে বদলে দেওয়া হয়েছে যে এটি দেখতে করোনাভাইরাসের মতো হলেও তা মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে না। আর ভাইরাসটিকে করোনাভাইরাসের মতো দেখতে করে তুলতে করোনাভাইরাসের ‘স্পাইক প্রোটিনে’র জেনেটিক ইনস্ট্রাকশন ব্যবহার করা হয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমেই মূলত করোনাভাইরাস মানবশরীরের বিভিন্ন কোষকে আক্রমণ করে থাকে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি করোনাভাইরাসের মতো করে তৈরি করা হয়েছে যেন ‘ইমিউন সিস্টেম’ এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে শেখে।

আরও পড়ুন- দেশে চীনের করোনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদন

বিজ্ঞাপন

গবেষণায় উঠে এসেছে, ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে মানবশরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার উপযোগী অ্যান্টিবডি ও টি-সেল তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ১৪ দিন পর টি-সেল সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায় এবং ২৮ দিন পর সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায় অ্যান্টিবডি। তবে এই অ্যান্টিবডি ও টি-সেল ঠিক কতদিন পর্যন্ত শরীরে কার্যকর থাকে, সেটি নিশ্চিত হওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় ধরে এই গবেষণা পরিচালিত হয়নি।

অক্সফোর্ড রিসার্চ গ্রুপের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেন, আজ যে ফল প্রকাশিত হয়েছে, তাতে আমরা সত্যিই সন্তুষ্ট। আমরা অ্যান্টিবডি ও টি-সেল দু’টির উপস্থিতিই পেয়েছি। এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক এবং আমাদের বিশ্বাস, এ থেকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষাও মিলবে।

তবে ভ্যাকসিনটি কার্যকর কি না— সময়ের সবচেয়ে বড় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় আসেনি বলে মন্তব্য অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ডের। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেই এখন যে প্রশ্নটির উত্তর জানতে চান, সেটি হলো— ভ্যাকসিনটি কাজ করবে কি? এটি সুরক্ষা দেবে কি? আমি বলব, এই উত্তর পেতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।’

আরও পড়ুন- দেশেই করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার— দাবি গ্লোব বায়োটেকের

গবেষণায় উঠে এসেছে, ভ্যাকসিনটির প্রথম ডোজ দেওয়ার পরই ৯০ শতাংশ ব্যক্তির শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। বাকি ১০ ভাগ ব্যক্তির শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয়েছে। অধ্যাপক পোলার্ড বলছেন, আমরা আসলে জানি না যে সুরক্ষার জন্য কী পরিমাণ অ্যান্টিবডির মাত্রা প্রয়োজন। তবে দ্বিতীয় ডোজের জন্য আমরা এর সাড়ার হারকে বাড়িয়ে দিতে পারি।

রয়েছে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

গবেষকরা বলছেন, অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনটি মানবশরীরের জন্য নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে। তবে সামান্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ভ্যাকসিন দেওয়া ৭০ শতাংশ ব্যক্তির শরীরে সামান্য জ্বর বা মাথা ব্যথা ছিল। প্যারাসিটামল ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমেই সে সমস্যা চলে গেছে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আরেক শিক্ষক অধ্যাপক সারাহ গিলবার্টও বলছেন, কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষার জন্য এই ভ্যাকসিন যথেষ্ট কি না, তা নিশ্চিত করতে আরও কাজ বাকি। তবে এখন পর্যন্ত যে ফল পেয়েছি, তা আশাব্যঞ্জক।

পরের ধাপে কী?

অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনটি এবার আরও বড় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাবে। এই ধাপে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে। পাশাপাশি ভ্যাকসিনটি যুক্তরাজ্যের বাইরেও প্রয়োগ করার পরিকল্পনা চলছে। কারণ যুক্তরাজ্যে করোনা সংক্রমণ কম হওয়ায় সেখানে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা সঠিকভাবে জানা কঠিন হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার, দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই হাজার ও ব্রাজিলে পাঁচ হাজার ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটি প্রয়োগ করা হবে।

এর পরের ধাপে ‘চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল’ পরিচালনা করা হবে, যেখানে ভ্যাকসিন দেওয়া ব্যক্তিদের করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সঙ্গে মিশতে দেওয়া হবে। অবশ্য করোনাভাইরাসের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায় এই ধাপটি নিয়ে নৈতিক আপত্তিও রয়েছে। তবে এইসব ধাপে উত্তীর্ণ হলে তবেই মিলবে কার্যকর ভ্যাকসিন।

ভ্যাকসিন বাজারে আসবে কবে?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর শেষ হওয়ার আগেই করোনার এই ভ্যাকসিন বাজারে আসতে পারে, যদিও সেটি সবার জন্য সহজলভ্য নাও হতে পারে। জানা গেছে, বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যকর্মীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এছাড়া বয়স বা অন্যান্য শারীরিক জটিলতার কারণে তারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন, তারাও পাবেন অগ্রাধিকার। আর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের আগে সবার জন্য ভ্যাকসিন উৎপাদন করা সম্ভব হবে না।

ভ্যাকসিনের দৌড়ে আরও আছে যারা

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাকসিন নিয়ে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দুইটি ভ্যাকসিনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের একটি ধাপ পার করেছে এবং তাতে ইতিবাচক ফল মিলেছে। এর মধ্যে মার্কিন কোম্পানি মডার্না প্রথম জানিয়েছিল, তাদের তৈরি আরএনএ ভ্যাকসিনটি অ্যান্টিবডি তৈরিতে সক্ষম।

এর বাইরে বায়োএনটেক ও ফাইজারও আরএনএ ভ্যাকসিন তৈরি করছে। অন্যদিকে অক্সফোর্ড তাদের ভ্যাকসিন তৈরিতে ভাইরাসের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। একই পদ্ধতিতে চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেকের তৈরি ভ্যাকসিনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ইতিবাচক ফল দেখিয়েছে। এছাড়া ভালনেভার মতো কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরির সবচেয়ে প্রথাগত পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এই পদ্ধতিতে করোনাভাইরাসকেই নিষ্ক্রিয় করে শরীরে প্রয়োগ করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের ২৩টি ভ্যাকসিন রয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে। আরও ১৪০টি ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষণা চলছে।

আরও পড়ুন-

‘৪ হাজার ডলারের কম মাথাপিছু আয়ের দেশ বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবে’

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন করোনার ভ্যাকসিন টপ নিউজ ভ্যাকসিন

বিজ্ঞাপন

শেষ কবে এতটা নিচে ছিলেন কোহলি?
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৪৪

মুম্বাই যাচ্ছেন শাকিব খান
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৩৫

আরো

সম্পর্কিত খবর