বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনে ধর্মান্তরিত ভারতীয় তরুণী!
১৯ জুলাই ২০২০ ১৮:৩৯
ঢাকা: আয়েশা জান্নাত মোহনা ওরফে জান্নাতুত তাসনিম (২৫)। ধর্মান্তরিত ভারতীয় মুসলিম। আগে নাম ছিল প্রজ্ঞা দেবনাথ। বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলায়। ওমান প্রবাসী বাংলাদেশি আমির হেসেন সাদ্দামকে বিয়ের পর তাসনিম এ দেশে এসে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। সম্প্রতি এই তরুণীকে রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৯ সালে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাসনিম অনলাইনের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এরপর ধর্মান্তরিত হয়ে অনলাইনে ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে। সেখান থেকে নব্য জেএমবির সদস্যরা তাকে দলে ভেড়ান।
সিটিটিসির উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম রোববার (১৯ জুলাই) সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারতীয় ওই তরুণীর অনলাইনে ওমান প্রবাসী বাংলাদেশি আমির হোসেন সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পরে টেলিফোনে দুজনের মধ্যে বিয়ে হয়। এক পর্যায়ে নব্য জেএমবির নারী শাখার প্রধান আসমানী (২৮) খাতুনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি উত্তর কমলাপুর এলাকা থেকে আসমানী খাতুন ওরফে আসমা ওরফে আমাতুল্লাহ সিটিটিসির হাতে গ্রেফতার হন। এই নারীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় রিমান্ড শেষে তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন। সেই মামলাতেই ভারতীয় এই তরুণীকেও গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এই নারীকেও এরই মধ্যে রিমান্ডে আনা হয়েছে।’
সাইফুল বলেন, ‘জান্নাতুত তাসনিম একাধিকবার বৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছেন। তার এই আসা-যাওয়ার কারণ কী ছিল তা জানার চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ গত অক্টোবরে স্বামী সাদ্দামের পরামর্শে তাসনিম বাংলাদেশে এসে আসমানীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন। বাংলাদেশে আসার পর সে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে তা দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে। পরে সেই জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে নব্য জেএমবির সদস্যদের সহায়তায় ঢাকার কেরাণীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিভিন্ন মাদরাসায় চাকরি নেয়। ফেব্রুয়ারিতে আসমানী গ্রেফতার হওয়ার পর সে চাকরি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায় এবং গোপনে নব্য জেএমবির নারী সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে।’
গ্রেফতারের সময় ভারতীয় ওই নারীর কাছ থেকে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট, বাংলাদেশের জাতীয় পরিচপত্র ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান সিটিটিসির উপ-কমিশনার সাইফুল।
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আসমানীর পরামর্শে তাসনিম সংগঠনের জন্য অর্থ ও সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তার আরও বেশকিছু সহযোগী রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
এদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা জানিয়েছে, তিনি ২০১৬ সাল থেকে ভারত থেকে নিয়মিত বিরতিতে বাংলাদেশে আসা যাওয়া করেন। বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের দায়িত্বও পালন করেছেন।
সিটিটিসি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, আয়েশার কাছ থেকে তারা বেশকিছু কাগজপত্র পেয়েছেন। ওই কাগজপত্রগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।