Thursday 23 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘প্রশ্ন এড়াতে’ পরিকল্পনা কমিশনে সাংবাদিক প্রবেশে ‘বাধা’ সচিবের


১৬ জুলাই ২০২০ ২২:১০ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২০ ০২:৫৭

ঢাকা: প্রতিদিনের মতোই গণমাধ্যমকর্মীরা গিয়েছিলেন পরিকল্পনা কমিশনে। কিন্তু বাধা পেলেন গেটে। দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী জানান, সচিবের (পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম) নির্দেশেই গণমাধ্যমকর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। মাত্র কিছুদিন আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব পদ থেকে বদলি হয়ে পরিকল্পনা বিভাগে এসেছেন তিনি। সম্প্রতি প্রতারণার অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে চুক্তি করতে তিনি ‘মৌখিক নির্দেশ’ দিয়েছিলেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে গতকালই (বুধবার, ১৫ জুলাই) জানিয়েছেন খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি হেলথ) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাদ আজাদ।

বিজ্ঞাপন

গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের তার বিরুদ্ধে আঙুল তোলার বিষয়ে প্রশ্ন এড়াতেই তিনি কমিশনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশে ‘নিষেধাজ্ঞা’ দিয়েছিলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলার পর গণমাধ্যমকর্মীরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর কমিশনে ঢুকতে পারেন। পরিকল্পনা সচিব আসাদুল ইসলাম নিজেও পরে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে কোনো প্রশ্নের আগেই বলেন, রিজেন্ট ইস্যুতে কোনো বক্তব্য তিনি দেবেন না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাইলে লিখিত জবাব দেবেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- সাবেক স্বাস্থ্য সচিবের নির্দেশে রিজেন্টের সাথে চুক্তি: ডিজি হেলথ

বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) পরিকল্পনা কমিশনে এ ঘটনা ঘটে। সরকারি একটি দফতরে এমন ‘অপ্রীতিকর’ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি)। বৃহস্পতিবার বিকেলে পাঠানো এক প্রতিবাদ লিপিতে সংগঠনের সভাপতি এ এফ এম হুমায়ুন কবীর ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান প্রতিবাদ বলেন, এমন ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে প্রতিবন্ধকতা। এ ঘটনার তদন্ত দাবি করেন তারা।

ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, প্রতিদিনের মতেই বৃহস্পতিবার সকালে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে প্রবেশ করতে গেলে প্রধান ফটকে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা গোলজার হোসেনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গণমাধ্যমকর্মীদের বাধা দেন। তারা বলেন, সচিব স্যারের নির্দেশ ছাড়া কোনো সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবেন না। তার (সচিবের) ব্যক্তিগত সহকারী ফোনে এই নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন- রিজেন্টের প্রতারণা: ডিজি হেলথকে ‘শোকজ’ মন্ত্রণালয়ের

গণমাধ্যমকর্মীরা নজিরবিহীন এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে প্রধান ফটকে দায়িত্বরত পুলিশের ইনচার্জ গোলজার বলেন, ‘আমি সচিবের দফতর থেকে আসছি। আপনারা অপেক্ষা করুন। অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না।’ প্রায় ২৫ মিনিট পর পুলিশ কর্মকর্তা গোলজার এসে বলেন, ‘সচিব স্যারের পিএস তার ভিজিটিং কার্ড দিয়েছেন। তাকে কল করে কথা বলুন।’

এসময় বারবার পরিকল্পনা সচিব ও তার ব্যক্তিগত সহকারীর মোবাইল নম্বরে কল করলেও তারা রিসিভ করেননি। শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যমকর্মীরা বাধ্য হয়েই মোবাইলে পরিকল্পনামন্ত্রীকে ঘটনাটি জানান। এসময় পরিকল্পামন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে আমি বাসায় থেকে অফিসের কাজ করছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ কেন করবেন? এ ব্যাপারে তিনি আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আমি সচিবের সঙ্গে কথা বলে দেখছি, কেন তিনি এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিলেন।’

এরপরই মূলত গণমাধ্যমকর্মীরা প্রবেশ করার সুযোগ পান পরিকল্পনা কমিশনে। এসময় পরিকল্পনা সচিবের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর হোসেন গণামধ্যমকর্মীদের বলেন, সচিবের নির্দেশেই তিনি পুলিশকে গণমধ্যমকর্মীদের কমিশনে প্রবেশ না করতে দিতে বলেন।

আরও পড়ুন-  ‘রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে’

পরিকল্পনা সচিব আসাদুল ইসলামের সঙ্গেও এসময় কথা গণমাধ্যমকর্মীদের। এসময় কোনো প্রশ্ন করার আগেই সচিব বলেন, ‘যে বিষয়টি আপনারা জানতে চান, সেটি অফিশিয়াল একটি বিষয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখছে। ফলে তারা সেখানে কী লিখেছে, তারা যদি আমার কাছে ব্যাখ্যা চায়, আমি অবশ্যই ব্যাখ্যা দেবো। সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে এর বাইরে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া ঠিক হবে না।’

এসময় সাংবাদিকদের পরিকল্পনা কমিশনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের আদেশ আমি দেইনি।’ তার নির্দেশ পেয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারী নিজেই পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সচিব বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আমাকে ফোন করে বলেছেন, এই চত্বরে যেসব সাংবাদিক নিয়মিত কাজ করছেন, তাদের প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা নেই। তারা আসতে পারবেন। কেন এমনটা হলো আমি বিষয়টি দেখছি।

আপনি আদেশ না দিলে পুলিশ কেন আপনার নাম ব্যবহার করছে— এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ওদের সাথে কথা বলব। এখন আমাকে একনেকের বিষয়ে একটি মিটিংয়ে যেতে হবে।’ বলেই গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে থেকে চলে যান তিনি।

এর আগে, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামকে পরিকল্পনা কমিশনের পরিকল্পনা বিভাগের সচিব হিসেবে বদলি করে গত ৪ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এদিকে, সারাবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, করোনা চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রিজেন্ট হাসপাতাল নানাভাবে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসায় অনিয়ম-প্রতারণা করছে। অধিদফতরেও এমন অভিযোগ যাওয়ার পর ৬ জুলাই হাসপাতালটিতে অভিযান চালায় র‌্যাব। তাতে অনুমতি না থাকলেও বাসায় থেকে নমুনা সংগ্রহ, করোনা পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দেওয়া, সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা হলেও রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার মতো অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

৭ জুলাই রিজেন্টের সব কার্যক্রম বন্ধের আদেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। সারাবাংলার অনুসন্ধানে এর জানা যায়, হাসপাতালটি অধিদফতরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। প্রশ্ন ওঠে, এমন একটি প্রতারণাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অধিদফতরের চুক্তির পেছনে কার হাত রয়েছে। এর মধ্যে অধিদফতর এক বিবৃতিতে জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে’ তারা রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করেছিল।

এ বিষয়ে পরে অধিদফতরের মহাপরিচালককে শোকজ করে ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ’ বিষয়টির ব্যাখা তলব করে। বুধবার সেই শোকজের জবাব দিয়েছেন ডিজি হেলথ। তাতে লিখেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই সময়ের সচিব আসাদুল ইসলামের মৌখিক নির্দেশে রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল।

এরপর স্বাভাবিকভাবেই এ বিষয়ে আসাদুল ইসলামের মন্তব্য জানতে কৌতূহল কাজ করে থাকতে পারে গণমাধ্যমর্কীদের মধ্যে। তবে তাদের প্রশ্ন এড়াতেই সম্ভবত সচিব আসাদুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের পরিকল্পনা কমিশনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন।

টপ নিউজ পরিকল্পনা কমিশন পরিকল্পনা সচিব আসাদুল ইসলাম সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর